ঢাকা-সিলেট রোডে অনুমোদিত টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস ট্রেন চালুসহ ৮ দফা দাবিতে রাজধানীর মগবাজার ও সিলেটের প্রতিটি রেলস্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটে স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে সিলেট রোডে চলাচলকারী প্রতিটি ট্রেনে দেখা দেয় শিডিউল বিপর্যয়। দাবি আদায়ের আশ্বাসে বিকেলে অবরোধ তুলে নিলে ট্রেন চলাচলা স্বাভাবিক হয়। এতে আন্দোলনকারীরা বলছেন, শিগগির সব দাবি মেনে না নিলে আগামী ১৮ নভেম্বর রেল ভবন ঘেরাও করা হবে।
গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মগবাজার রেলগেটে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন ঢাকাস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসী। দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেয় তারা। প্রায় ১৫ মিনিট আটকে রাখার পর রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এ সময় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘সিলেটে রেল সংস্কার’ আন্দোলনের মুখপাত্র সাংবাদিক সেলিম আহমেদ বলেন, ‘সিলেট বিভাগজুড়ে রেলপথ অবরোধের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা ঢাকায় প্রতীকীভাবে ট্রেন আটকে রেখেছিলাম। দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন না হলে, আগামী ১৮ নভেম্বর রেল মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।’
অবরোধ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেনÑ জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আকবর হোসেন মঞ্জু, হবিগঞ্জ সমিতি ঢাকার সভাপতি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান তরফদার, পল্টন থানা জামায়াতের শাহিন আহমেদ খান, সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জগন্নাথপুর সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সায়েদুজ্জামান কামালী, সংগঠক আবু বকর সিদ্দিক, সুজন মিয়া, সাংবাদিক এমদাদুল হক, জামিল আহমদ প্রমুখ।
এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সিলেটের প্রতিটি রেলওয়ে স্টেশনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ট্রেন অবরোধ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে। এতে সিলেটের প্রবেশমুখ শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন থেকে শুরু করে সিলেট পর্যন্ত প্রতিটি স্টেশনেই আটকা পড়ে কোনো কোনো ট্রেন। সিলেট রোডে দেখা দেয় ট্রেনের তীব্র শিডিউল বিপর্যয়। আন্দোলনকারীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সিলেট অঞ্চলে রেলসেবা অবহেলিত। রেললাইন জরাজীর্ণ, ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় নিত্যদিনের ঘটনা। একাধিকবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সিলেটের সব রেলওয়ে স্টেশনে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হলেও সবচেয়ে বড় আন্দোলন হয়েছে কুলাউড়া রেলওয়ে স্টেশনে। এই স্টেশনে ৫ সহস্রাধিক রেলযাত্রী সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ট্রেন আটকে রাখেন। অবরোধ চলাকালীন কুলাউড়ায় রেলসচিবের প্রেরিত ৩ সদস্যের সাথে অবরোধকারীদের দীর্ঘ সময় আলোচনার পর এবং প্রতিনিধিদলের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বেলা আড়াইটায় অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।
৮ দফা দাবি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রেসক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মুখ্য সমন্বয়ক ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখইর সঞ্চালনায় অবরোধ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন কুলাউড়ার ৩ বারের সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট নওয়াব আলী আব্বাছ খান, জামায়াতে ইসলামী মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার সায়েদ আলী, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান সাহেদ, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, জামায়াতে ইসলামীর কুলাউড়ার নায়েবে আমির মো. জাকির হোসেন, ঢাকাস্থ জালালাবাদ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন প্রমুখ।
এ সময় মুখ্য সমন্বয়ক আতিকুর রহমান আখই জানান, রেলওয়ে সচিবের প্রতিনিধিদলের সাথে ৮ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনাকালে প্রতিনিধিদল ৮ দফা দাবির মধ্যে বেশির ভাগ দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দাবিগুলোর দৃশ্যমান বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকবেন আন্দোলনকারীরা। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১৮ নভেম্বর রেল ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হবে।
রেলওয়ের ৩ সদস্যের প্রতিনিধিদলের প্রধান বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মহব্বতজান চৌধুরী জানান, যাত্রীদের চাহিদার অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে দুটি করে এক্সট্রা বগি সংযোজন করা হয়েছে। ট্রেনের ইঞ্জিনপ্রাপ্তি সাপেক্ষে লোকাল ট্রেন চলাচল এবং বন্ধ স্টেশন চালু করা হবে। সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে একনেকের বৈঠকে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। চলতি মাসে দরপত্র আহ্বান করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে রেলপথের সংস্কার কাজ শুরু হবে। কুলাউড়া জংশন স্টেশনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পারাবত ট্রেনের টিকিট-সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য একটি বগি সংযোজন করা হবে। এই বগির ৪০টি টিকিট কুলাউড়ায় এবং ২০টি টিকিট শ্রীমঙ্গল স্টেশনে বরাদ্দ দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে উপবন ও কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনে বগি সংযোজন করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন