রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মুমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

বিশ্বাসই অন্ধ দোকানি আইয়ুব হোসেনের একমাত্র ভরসা

মুমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০২:৩৮ এএম

বিশ্বাসই অন্ধ দোকানি আইয়ুব হোসেনের একমাত্র ভরসা

বর্তমান সময়ে বিশ্বাস যেখানে দুর্লব বস্তুতে পরিণত হয়েছে যেখানে বিশ্বাস একমাত্র ভরসা অন্ধ দোকানি আইয়ুব হোসেনের কাছে। নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার জোত মাহমুদপুর গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে আইয়ুব হোসেন একই উপজেলায় অবস্থিত আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে একটি ছোট্ট টং দোকানে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করেন তিনি।
প্রায় দুই দশক আগে অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে ধীরে ধীরে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারাতে থাকেন তিনি। স্ত্রীসহ দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে নি¤œবিত্ত আইয়ুব হোসেন দিশাহারা হয়ে পড়েন। জীবনের তাগিদে অন্ধ আইয়ুব হোসেনের স্ত্রী এলাকায় কখনো ঝি-এর কাজ, কখনো দিনমজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তৎকালীন সময়ে সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম আইয়ুব হোসেন দৃষ্টিশক্তি হারালে অর্থ সংকটে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ বহন না করতে পারায় তারাও জড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কাজের সাথে। সংসারের যারা উপার্জনক্ষম ছিল তাদের উপার্জনে সংসার চালাতেও হিমশিম খেতে হয় আয়ুব হোসেনকে। 
দুশ্চিন্তায় ডুবে যাওয়া আইয়ুব হোসেন দিনের পর দিন অভাবের সাথে লড়াই করতে করতে একটা সময় তিনি সিদ্ধান্ত নেন, তিনিও কাজে যোগদান করবেন। তারপরই শুরু হয় আইয়ুব হোসেনের নতুন জীবনযুদ্ধ। একদিকে দু’চোখের আলো হারা অন্যদিকে কি কাজ করবেন সেই চিন্তাÑ কারণ অন্ধকে কেউ কাজে নিতে চাইবে না। তা ছাড়া কাজে নিলেও তিনি সব কাজ করতে পারবেন না দৃষ্টিশক্তি না থাকার কারণে।
এ অবস্থায় আইয়ুব হোসেনের মাথায় এলো এক সুবুদ্ধি। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন নিকটস্থ আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানে তিনি একটি দোকান করবেন। যে ব্যবসার মূল পুঁজি হবে বিশ্বাস। খুব কষ্টে সামান্য কিছু অর্থ ব্যবস্থা করে আলতাদিঘী জাতীয় উদ্যানের দিঘী পাড়ে অস্থায়ীভাবে বাদাম, চানাচুরের দোকান শুরু করেন তিনি। অন্ধ হওয়ার কারণে প্রথম প্রথম টাকার নোট চিনতে বেশ বিপাকে পড়তে হয় আইয়ুব হোসেনকে। উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা আইয়ুব হোসেনের কাছ থেকে কিছু ক্রয় করলে নিজ দায়িত্বে পণ্যের মূল্য অনুযায়ী টাকা দিতেন এবং অন্ধ আইয়ুব হোসেন সেই ক্রেতার ওপর বিশ্বাস করে সেই টাকা রেখে দিতেন। এভাবে আস্তে আস্তে অন্ধ আইয়ুব হোসেনের দোকান পরিচালনা সহজ করে নেয়, যেখানে একমাত্র ভরসা বিশ্বাস।
একটা সময় আইয়ুব হোসেন সেই বিশ্বাসের ওপর ভরসা করে ব্যবসার পরিধি বাড়ায়। মাঝে মাঝে স্ত্রী-সন্তান তার টং দোকানে সহযোগিতা করতেন। এমনি করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে অন্ধ আইয়ুব হোসেন। কয়েক বছরের মধ্যে ছেলেরা নিজের মতো করে তাদের সংসার পরিচালনায় ব্যস্ত হয় এবং মেয়েদের বিবাহের কারণে আবারও একা হয়ে পড়েন অন্ধ আইয়ুব হোসেন। স্ত্রী দোকানে সময় দিলে দুজনের পরিশ্রম অনুযায়ী আয় না হওয়ায় স্ত্রী দিনমজুরের কাজে চলে যায় মাঝে মাঝে। এতসব সংকটের মাঝেও বিচলিত না হওয়া আইয়ুব হোসেন বিশ্বাসের ওপর ভরসা করে তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে।
স্থানীয় এক সংবাদিকের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব পেলে তিনি প্রতিবেদন করার সুবাদে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ এবং কিছু সামাজিক সংগঠন পাশে দাঁড়ায় অন্ধ আইয়ুব হোসেনের। সম্মিলিতভাবে তাকে একটি টিন শেডের (গুমটি) দোকান বানিয়ে দেওয়া হয় এবং কিছু নগদ অর্থ প্রদান করা হয়, যা দিয়ে দোকানের মালামাল কিনেন তিনি।
সেই থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত অন্ধ আইয়ুব হোসেন বিশ্বাসের ওপর ভর করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার ব্যবসা। যেখানে বিশ্বাস নামক জিনিস দুর্লভ হয়ে পড়ছে সেখানে বিশ্বাসকেই একমাত্র পুঁজি করে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন অন্ধ আইয়ুব হোসেন।
আইয়ুব হোসেন বলেন, ইসলামের সর্বনি¤œ হালাল উপায় হলো ভিক্ষাবৃত্তি। আমার জীবনে এমন কিছু সময় এসেছিল যে, আমি ধরেই নিয়েছিলাম ভিক্ষাবৃত্তি করে হয়তো বাকি জীবন খেয়ে পড়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু বিবেক আর ব্যক্তিত্ব আমাকে সেটাতে সাড়া দেয়নি বলে বিশ্বাসকে পুঁজি করে সিদ্ধান্ত নেই ছোট্ট করে হলেও একটা ব্যবসা করব।  আর সেই বিশ্বাসের কারণেই অন্যের করুনা আশা না করে আজ আমি এখনো এভাবেই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি এতে আমার কোনো আফসোস হয় না।
পরিশেষে তিনি সমাজের বিত্তশালীদের কাছে একটি অনুরোধ জানান, যদি কেউ তার চোখের দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেন তাহলে তিনি হয়তো শেষ বয়সে এসে এই মায়ার ভুবন দুচোখ ভরে দেখে দুনিয়া ত্যাগ করতে পারবেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!