বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পারভেজ খান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

বাড়ছে সহিংসতা আর অগ্নিসন্ত্রাস

পারভেজ খান

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৩, ২০২৫, ১২:১৪ এএম

বাড়ছে সহিংসতা  আর অগ্নিসন্ত্রাস

ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণাসহ জুলাই আন্দোলনের সহিংসতা মামলার রায় ঘোষণাকে ঘিরে দেশে ফের বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত। রক্তাক্ত জনপদ হয়ে উঠছে সারা দেশ। জ্বলতে শুরু করছে চারপাশে সহিংসতার আগুন। দেখা দিতে শুরু করেছে আবার সেই পুড়িয়ে মারার পুরোনো ইতিহাস। বেড়ে চলেছে হত্যাকা-। সাম্প্রতিক চলমান এসব সহিংসতার মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক দখল, সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া-না পাওয়ার বিরোধ, দলীয় আধিপত্য নিয়ে প্রতিশোধপরায়ণতা, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অবাধে জামিনে মুক্তি পাওয়া, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার না হওয়া, সীমান্ত দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের অনুপ্রবেশসহ পুলিশের কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা বা দোদুল্যমান অবস্থানকে দায়ী করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে টানা তিন দিনে খুন ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হন, মারা যান এক ব্যক্তি। পুরান ঢাকায় দিবালোকে গুলি করে হত্যা করা হয় সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে। এর আগে মুন্সীগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক সপ্তাহে দুজন নিহত হন।

এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ১৩ নভেম্বর ঢাকায় লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করায় সারা দেশসহ রাজধানীতেও উত্তেজনা দেখা দেয়। গত চার দিনে দুর্বৃত্তরা বেশ কয়েকটি বাসে আগুন দেয় ও বিভিন্ন স্থানে ককটেল নিক্ষেপ করে। গত মঙ্গলবার ভোরে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ভালুকজান বাজারের পেট্রোল পাম্পের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগে দগ্ধ হয়ে চালক জুলহাস মিয়া মারা যান। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি নিয়ন্ত্রণে না আনলে নির্বাচনের আগে সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা আসন্ন নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।

গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রবাজি, গুলি ও দখলসংক্রান্ত সহিংসতা, পরিবহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা বাড়ছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। অশান্ত হয়ে উঠেছে রাজধানীও। 

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘চলমান এই অস্থিরতার মূল কারণ রাজনৈতিক। নির্বাচনের আগে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। এ কারণেই গোলাগুলি বা হত্যাকা-ের মতো ঘটনা ঘটছে। সরকার বা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যকর উদ্যোগের অভাবেই এ সহিংসতা বাড়ছে। অন্যদিকে, পেশাদারিত্বের জায়গায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এখনো ঘাটতি রয়েছে।’

অধ্যাপক ওমর ফারুকের মতে, ‘সহিংসতা রোধে শুধু পুলিশি অভিযান নয়, রাজনৈতিক সমঝোতাও জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও আস্থার পরিবেশ না ফিরলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতই সক্রিয় হোক, সহিংসতা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়।’

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) জানিয়েছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৭০ জন নিহত ও ৮ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। সংগঠনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আধিপত্য বিস্তার, প্রতিশোধপরায়ণতা, দলীয় কমিটি গঠন, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখলÑ এসবই সহিংসতার প্রধান কারণ। একইসঙ্গে চুরি, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাও বেড়েছেÑ যা জনমনে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নথিবদ্ধ হয়েছে এক হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা। এর মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়। এসব ঘটনায় ৮৮ জন নিহত ও পাঁচ হাজার ৩৩৭ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত ও এক হাজার ১৪১ জন আহত হয়, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত ১২ জন ও আহত ২৫০ জন; এনসিপির দ্বন্দ্বে আহত হয় ৬২ জন। রাজনৈতিক পরিচয় অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে বিএনপির ১০৪ জন, আওয়ামী লীগের ৩৮ জন, জামায়াতের ৩ জন, এনসিপির ১ জন ও পার্বত্য সংগঠন ইউপিডিএফের ১০ জন রয়েছেন। চারজনের পরিচয় অজ্ঞাত।

এইচআরএসএস বলছে, ধানমন্ডি ৩২-এ ৫-৭ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ, গোপালগঞ্জে ১৬ জুলাই এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে সহিংসতা এবং আগস্টে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের সংঘর্ষ রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সহিংসতায় প্রাণহানি ক্রমেই বেড়েছে। ২০২১ সালে ৮২ জন, ২০২২ সালে ৯২ জন, ২০২৩ সালে ৯৬ জন নিহত হলেও চলতি বছরে তা ১৭০ জনে দাঁড়িয়েছে।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আইনের শাসন ও রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জবাবদিহিতা না থাকলে সহিংসতা আরও ছড়াবে। এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে হলে সরকার, রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজকে মানবাধিকার রক্ষায় একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রমতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন সহিংসতায় লুণ্ঠিত বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, এক হাজার ৩৪২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুই লাখ ৫৭ হাজারের বেশি গুলি এখনো বেহাত রয়েছে। এর মধ্যে উদ্ধার হয়েছে চার হাজার ৪২১টি অস্ত্র। এ ছাড়া পেশাদার অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসী এখন জামিনে মুক্ত। এদের কেউ কেউ দেশের বাইরে চলে গেলেও অনেকে দেশেই অবস্থান করছেন। এদের বিরুদ্ধেও নানা সহিংস কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

সরকার সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেÑ লুট হওয়া এলএমজি উদ্ধারকারীদের দেওয়া হবে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার; এসএমজির জন্য দেড় লাখ, চায়না রাইফেলের জন্য এক লাখ এবং পিস্তল-শটগানের জন্য ৫০ হাজার টাকা। প্রতি রাউন্ড গুলির জন্য ঘোষণা করা হয়েছে ৫০০ টাকা পুরস্কার। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ঘোষণায় কোনো সাড়া মেলেনি।

এসব বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘লুট হওয়া অস্ত্র নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো এরই মধ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে গেছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের প্রথম শর্ত হওয়া দরকার।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের মতে, ‘নির্বাচনের সময় জামিনে থাকা সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। তাই সরকারের নজরদারি জোরদার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর কঠোর নজরদারি করছে সরকার, ব্যাপারটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বাইরে থাকায় সবসময়ই দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তা ছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের দোসরদের অর্থ এবং এজেন্টের অভাব নেই। তারা সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সর্বদাই সচেষ্ট থাকবে। আর জাতীয় নির্বাচনের সময় সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আরও বেশি নাজুক। তাই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ওপর শুধু কড়া নজর রাখলেই চলবে না, তাদের জরুরি ভিত্তিতে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিশেষ অপারেশন পরিচালনা করতে হবে। এ জন্য সব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে কাজ করতে হবে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সরকার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের মতে, ‘নির্বাচনের সময় জামিনে থাকা সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার ও তাদের দোসরদের অর্থ এবং এজেন্টের অভাব নেই। তারা সন্ত্রাসীদের কাজে লাগিয়ে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি ও ধ্বংসাত্মক কাজ করে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সর্বদাই সচেষ্ট থাকবে। আর জাতীয় নির্বাচনের সময় সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষার এ  প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আরও বেশি নাজুক।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!