শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


জনাব আলী, রাজশাহী 

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:১১ এএম

বিচারকের ছেলে হত্যাকাণ্ড 

স্ত্রীর পরকীয়া ও অর্থনৈতিক বিরোধে হত্যা

জনাব আলী, রাজশাহী 

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:১১ এএম

স্ত্রীর পরকীয়া ও অর্থনৈতিক বিরোধে হত্যা

রাজশাহী নগরীর ডাবতলা এলাকায় বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলে হত্যার কারণ জানিয়েছেন ঘাতক লিমন মিয়া (৩৫)। তার ভাষ্যমতে, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে ‘পরকীয়া’ সম্পর্কের জেরেই ঘটেছে হত্যাকাণ্ড। 

ঘাতক লিমন মিয়া দাবি করেন, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে তার পাঁচ বছর ধরে পরকীয়া ছিল। আর সেই সম্পর্ক ঘিরে তৈরি হওয়া বিরোধ থেকেই হত্যাকা- ঘটে। তবে হত্যার কয়েক দিন আগেই ঘাতক লিমনের হুমকিতে সপরিবারে নিরাপত্তার শঙ্কায় সিলেটের সুরমা থানায় জিডি করেছিলেন রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবদুর রহমানের স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি।

গত ৬ নভেম্বর দাখিল করা জিডিতে বিচারকের স্ত্রী উল্লেখ করেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনে লিমন মিয়ার সঙ্গে তার পরিচয়। লিমন দরিদ্র হওয়ায় তাকে আর্থিক সহায়তা করতেন। এখন টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই লিমন তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। গত ৩ নভেম্বর তাকে সপরিবারে হত্যার হুমকি দেন লিমন।

জিডির ঠিক ছয় দিন পর গত বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহীতে ভাড়া ফ্ল্যাটে লিমনের হাতে খুন হয় বিচারকের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমন (১৫)। সুমন সরকারি ল্যাবরেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। ঘটনার সময় আহত হয়েছেন তার স্ত্রী তাসমিন নাহার লুসি ও ঘাতক লিমন মিয়া। লুসিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমনকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হওয়ার সময় হত্যাকা- সম্পর্কে জানতে চাইলে লিমন পুলিশের সামনে সাংবাদিকদের অকপটে ঘটনার বর্ণনা দেন।

লিমন দাবি করে বলেন, ‘বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে আমার পাঁচ বছরের পরকীয়ার সম্পর্ক। শুরুতে পরকীয়া করতে আমি রাজি ছিলাম না। আমি বলেছিলাম, পরকীয়া করব না। আমাকে পছন্দ করলে সরাসরি বিয়ে করেন। উনি জোর করে আমার সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক করেছেন। আমার মূল এনআইডি কার্ডও নিয়ে রেখেছেন। সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কার্ডও তার কাছে আছে। ওনার বাসায় আগে থেকেই যাওয়া-আসা আমার। কিন্তু সম্প্রতি লুসি প্রেমের সম্পর্ক অস্বীকার করছেন। লুসি তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দিয়েছেন।’

হাসপাতালে স্ট্রেচারে শুয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তার (তাসমিন নাহার লুসি) সঙ্গে কথা না বললে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই আমি এ বাসায় দেখা করতে এসেছিলাম। আমি বলেছিলাম, যেন আমার সঙ্গে এক মিনিট করে হলেও কথা বলেন। এরপর আমাকে আস্তে আস্তে ভুলে যাইয়েন। আমি থাকতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি দেখা করতে গিয়ে ওনাকে গোলাপ ফুল দিই। ওনার জন্য পপকর্ন নিয়ে আসি। বাদাম নিয়ে আসি। খেয়ে ওনাকে আমি বলি, চলো যাই। যখন সে যাচ্ছে না, তখন আমি ফল কাটার চাকু দিয়ে তার হাতে মারি। তখন আটক করে আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে চাইছিল। এ সময় ওনার ছেলে আমাকে বাধা দেয়। তখন ছেলের পায়ে কামড় দিয়েছি। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। আমি এটার সঠিক বিচার চাই।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর ডাবতলা এলাকায় পার্ক ভিউ নামে একটি ভবনের ভাড়া ফ্ল্যাটে ঢুকে সুমনকে হত্যা করেন লিমন মিয়া। তবে এ ঘটনার পর অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকা ওই লিমন মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ। আটক লিমন মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি এলাকায়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান জানান, হামলাকারী যুবক বিচারক পরিবারের পূর্বপরিচিত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে লিমন বিচারকের বাসায় প্রবেশ করে অতর্কিতভাবে হামলা চালান। ধারালো অস্ত্রের কোপে তাওসিফ রহমান সুমন গুরুতর আহত হয়। আহত অবস্থায় বিচারকের ছেলে ও স্ত্রী তাসমিন নাহারকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঘটনার সময় বিচারক আবদুর রহমান বাসায় ছিলেন না। খবর পেয়ে তিনি হাসপাতালে ছুটে যান।

ছেলেকে হারিয়ে পরিবার তছনছ :

রাজশাহী  মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ১৬ বছরের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনের স্বাভাবিক এক বিকেল মুহূর্তেই পরিণত হয় নির্মম দুঃস্বপ্নে। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওসিফ স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ আর হাসিখুশিতে ভরা এক কিশোর। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলের সেই ভয়াবহ হামলায় সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে এই খুনের ঘটনায় সুখের পরিবার এখন তছনছ হয়ে গেল। 

গতকাল শুক্রবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে শুরু হয় তাওসিফের ময়নাতদন্ত। বাইরে উদ্বেগে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা বিচারক আব্দুর রহমান। সন্তানের মৃত্যুর কারণ কী, কীভাবে ঘটল এই নিষ্ঠুর হত্যাকা-Ñ সব প্রশ্ন নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন মর্গের দরজার সামনে। এমন মুহূর্তে কোনো বাবার মানসিক অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।

ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন জানান, তাওসিফের মৃত্যুর মূল কারণ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। তার ডান ঊরু, ডান পা এবং বাঁ বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাতে গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালি কেটে যায়। শুধু বাহ্যিকই নয়, শরীরের ভেতরেও হয়েছিল রক্তক্ষরণ। 

তাওসিফ হত্যায় শুধু অস্ত্রই নয়, শ্বাসরোধের পদ্ধতিও ব্যবহার হয়: 

তাওসিফ হত্যায় শুধু অস্ত্রই নয়, শ্বাসরোধের পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে তাওসিফের গলায় কালশিরা দাগ ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. কফিল জানান, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাগটি হতে পারে। অর্থাৎ, তাওসিফকে হত্যা করতে হামলাকারী শুধু ধারালো অস্ত্রই নয়, শ্বাসরোধের পদ্ধতিও ব্যবহার করেছিল। যদিও শ্বাসরোধ মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়, তবু দুটো কাজ একই সময়ে হয়েছে বলেই তার ধারণা।

অর্থনৈতিক বিরোধে ছেলেকে হত্যা দাবি পুলিশের: 

এই হত্যাকা- প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে আরএমপি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, এই হত্যাকা-ে আটক গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার লিমন মিয়ার সঙ্গে বিচারকের স্ত্রীর পূর্বপরিচয় ছিল। এর সূত্র ধরে বিভিন্ন সময়ে লিমন আর্থিক সহায়তা নিতেন। একপর্যায়ে টাকা দেওয়া বন্ধ করলে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেন। এ ঘটনায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে লিমন ভাড়া বাসায় জজের স্ত্রীর ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে বাসায় ঢুকে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে চাকু বের করলে স্ত্রী প্রাণভয়ে দৌড়ে রুমের ভেতরে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা আটকে দেন। ঘাতক লিমন দরজায় লাথি দিয়ে ভেঙে ভেতরে ঢুকলে জজের ছেলে তাওসিফ তার মাকে রক্ষা করার জন্য ঘরে ঢোকে। একপর্যায়ে ঘাতক জজের স্ত্রী ও ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেন। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ঘাতকও আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়া হলে ডাক্তার তাওসিফকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিচারকের স্ত্রীর সঙ্গে হামলাকারীর অর্থনৈতিক বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে। 

ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া লিমন মিয়াকে একমাত্র আসামি করে শুক্রবার নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলাটি করেন নিহতের বাবা, রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আবদুর রহমান। শুক্রবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গাজীউর রহমান।

এদিকে, নিহত তাওসিফের মরদেহ গ্রামের বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার চকপাড়া গ্রামে নেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রামেক হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে রওনা হন স্বজনেরা।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!