শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

এই শীতে নিঝুম দ্বীপে

ছুটি প্রতিবেদক

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ০১:৩০ এএম

এই শীতে  নিঝুম দ্বীপে

বাংলার দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এক নীরব স্বপ্নপুরীর নাম নিঝুম দ্বীপ। নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এর চরিত্র, নীরবতা ও প্রশান্তির প্রতিশ্রুতি। শীত এলেই এই নির্জন দ্বীপ জেগে ওঠে অন্য রূপে। তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক অপার্থিব চিত্রপট। পাখিদের কলতানে মুখর, কুয়াশার চাদরে মোড়া সকাল, আর বাতাসে লবণাক্ত নোনাজলের গন্ধ। মনে হয়, পৃথিবীর কোলাহল থেকে দূরে কোথাও প্রকৃতি নিজ হাতে বানিয়েছে এক আশ্রয়, যেখানে মানুষ ভুলে যায় সময়ের হিসাব। ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপের পথ দীর্ঘ ও রোমাঞ্চকর। সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছেড়ে নদীর বুকচিরে যখন জাহাজ এগিয়ে চলে, তখনই শুরু হয় যাত্রার রোমান্স। ধীরে ধীরে শহরের ব্যস্ততা পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় নদী পথ, চারদিকে শুধু নীল পানি আর দূরের সবুজ রেখা। নোয়াখালীর হাতিয়ায় পৌঁছে সেখান থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে পাড়ি দিতে হয় দ্বীপে। পথিমধ্যে নদীর ঢেউ, জেলের জাল ফেলা আর পাখির উড়াউড়ি যেন যাত্রাটিকে করে তোলে এক অপূর্ব দৃশ্যপটের অংশ। দূর থেকে দেখা যায় নিঝুম দ্বীপের সবুজ বন, বিস্তীর্ণ বালুচর আর আকাশজুড়ে উড়ে বেড়ানো পাখির দল। মনে হয়, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে এই নীরব রাজ্যটি। নিঝুম দ্বীপ আসলে মেঘনার মোহনায় জেগে ওঠা এক চরভূমি। পঞ্চাশের দশকে প্রথম এর জন্ম, ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে মানুষের বসতি। এখন এটি হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন, প্রায় ৯১ বর্গ কিমি আয়তনের নিঝুম দ্বীপে রয়েছে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম।

এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে অবস্থিত। দ্বীপটির সবচেয়ে বড় আকর্ষণের বন ও বন্যপ্রাণী। এখানে রয়েছে গেওয়া, গরান, কেওড়াসহ নানা গাছের ঘন বন, আর সেই বনে বিচরণ করে শত শত চিতল হরিণ। শীতকাল নিঝুম দ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ সময়। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এখানে নেমে আসে পাখিদের উৎসব। দূর সাইবেরিয়া, হিমালয়ের পাদদেশ, এমনকি ইউরোপের উত্তর প্রান্ত থেকে হাজার হাজার অভিবাসী পাখি এসে জড়ো হয় এই দ্বীপে। তখন সকালবেলা সূর্যের আলো যখন কুয়াশা ভেদ করে নদীর জলে পড়ে, দেখা যায় অসংখ্য পাখি জলের ওপর নাচছে, কেউ পাখা ঝাপটাচ্ছে, কেউ নিঃশব্দে ভাসছে জোয়ারের স্রোতে।

গাঙচিল, বক, বালিহাঁস, বেগুনি কালেম, হংস-সহ অজস্র পাখির মেলা যেন এক অপার আনন্দের উৎসব। এই দ্বীপের মানুষও প্রকৃতির মতোই সহজ সরল। অধিকাংশই জেলে বা কৃষিজীবী। সকালবেলায় তারা জাল নিয়ে নামে সমুদ্রে, ফিরে আসে বিকেলের আগেই, নোনা জলে ভেজা শরীরে এক ধরনের সান্ত¡না আর পরিশ্রমের তৃপ্তি নিয়ে। দ্বীপে বিদ্যুৎ সীমিত, অনেকেই ব্যবহার করেন সৌর প্যানেল। তবুও তাদের মুখে হাসি থামে না। পর্যটক এলে তারা আন্তরিকভাবে আপ্যায়ন করে, কেউ তাজা মাছ ভেজে খাওয়ায়, কেউ নারিকেলের পানি হাতে দেয়, কেউ গল্প শোনায় দ্বীপের জন্ম ও ঝড়ের স্মৃতি নিয়ে। এখানে কয়েকটি ছোট গেস্টহাউস ও ইকো কটেজ আছে, যেখানে পর্যটকরা থাকতে পারেন। তবে এই দ্বীপের আসল সৌন্দর্য অনুভব করতে হলে রাত জেগে থাকতে হয় সমুদ্রের ধারে।

রাতের নিঝুম দ্বীপ সত্যিই নিঝুম, শুধু বাতাসে সমুদ্রের ঢেউয়ের আওয়াজ, মাথার ওপর অসংখ্য তারা। দূরে কোনো গাড়ির হর্ন নেই, নেই শহরের কোলাহল। এই নীরবতায় বসে থাকলে মনে হয়, প্রকৃতি যেন কোনো চিরন্তন রহস্য ফিসফিস করে বলছে কানে। তাই শীতের এই সময়ে যদি একটু নিস্তব্ধতা, কিছু নির্জন সকাল আর প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো নিখাদ সময়ের খোঁজে থাকেন, তবে যেতে পারেন নিঝুম দ্বীপে। সাগরের ধারে বসে হয়তো আপনি খুঁজে পাবেন নিজের ভেতরের সেই শান্ত মানুষটিকে, যাকে শহর হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই।

যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায় বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে। বাসে গেলে সায়দাবাদ থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত ভাড়া পড়বে ৪০০Ñ৫০০ টাকা। সোনাপুর থেকে চেয়ারম্যান ঘাট যেতে সিএনজি রিজার্ভ নিতে হয়, ভাড়া ৪৫০Ñ৫০০ টাকা। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে পৌঁছানো যায় ট্রলার, সি-ট্রাক বা স্পিডবোটে; ভাড়া যথাক্রমে ১২০-১৫০, ৯০ ও ৪০০ টাকা। নলচিরা থেকে মোক্তারিয়া ঘাট পর্যন্ত মোটরসাইকেলে যেতে হয় ৪০০Ñ৪৫০ টাকায় (দুইজন পর্যন্ত), তারপর মোক্তারিয়া থেকে ট্রলারে করে জনপ্রতি ২০ টাকায় পৌঁছানো যায় নিঝুম দ্বীপে। ট্রেনে গেলে কমলাপুর থেকে নোয়াখালীর মাইজদি পর্যন্ত সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা, ভাড়া ২৩০-৫০৩ টাকা। মাইজদি থেকে চেয়ারম্যান ঘাটে সিএনজি রিজার্ভে যেতে লাগে ৫০০-৬০০ টাকা, অথবা শেয়ার করলে জনপ্রতি ১২০১৩০ টাকা।

এরপরের পথ বাসযাত্রার মতোই। লঞ্চে যেতে চাইলে সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল সাড়ে ৫টায় লঞ্চ ছাড়ে হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটের উদ্দেশ্যে এবং সকাল ৯টার দিকে পৌঁছায়। ডেকে ভাড়া ৩৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১,২০০ টাকা ও ডাবল কেবিন ২,২০০ টাকা। তমুরদ্দী ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে মোক্তারিয়া ঘাট হয়ে ট্রলারে করে পৌঁছাতে হয় নিঝুম দ্বীপে। সাধারণভাবে পুরো যাত্রায় সময় লাগে প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা এবং জনপ্রতি মোট খরচ পড়ে আনুমানিক ১,২০০-১,৮০০ টাকার মধ্যে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!