ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মাঠে মাঠে ধানের সোনালি শীষে ভরে উঠেছে কৃষকের খেত। বাতাসে ঢেউ তুলছে সোনালি ধানের শীষ। ধান পরিপক্ব হওয়ায় চলতি মৌসুমে আগাম জাতের আমন ধান কাটতে শুরু করেছেন কৃষকরা। আগাম আমন ধান কাটা শুরু হলেও আগামী ৮-১০ দিন পর পুরো দমে শুরু হবে ধান কাটা।
কৃষকরা জানান, এ মৌসুমের শুরুতে টানা বৃষ্টি ও আকস্মিক বন্যায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হলেও তারা হাল ছড়েনি। পুনরায় জমি আবাদ করে ধানের আশানুরূপ ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষাণির চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে আনন্দের ঝিলিক। বর্তমানে বাজারে ধানের দাম নিয়েও সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ৪ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১০০ হেক্টর বেশি। ধান রোপণের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রায় ৯০০ কৃষককে ৫ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি এমওপি এবং ১০ কেজি ডিওপি সার প্রণোদনা দেওয়া হয়।
কৃষি বিভাগ জানায়, আগাম জাতের আমন ধান কেটে ওই জমিতে বাড়তি ফসল হিসাবে আলু, বেগুনসহ শীতকালীন সবজি ও সরিষা চাষ করতে পারবে কৃষকরা। বাড়তি ফসল করলে এতে লাভবান হবে কৃষকরা।
পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আমনখেতে সবুজে সমারোহ। ইতিমধ্যে জমিতে ধানের শীষ পাকতে শুরু করেছে। আবার কোনো কোনো জমিতে আগাম ধান কাটা শুরু হয়েছে। ধানকে ঘিরে স্থানীয় কৃষকরা নানা রকমের স্বপ্ন বুনছেন।
কৃষক মো. সাচ্চু মিয়া বলেন, নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে আমন ধান আবাদ করি। কৃষি অফিস থেকে সার-বীজ সহায়তা পেয়েছি। সোয়া এক বিঘা জমির ধান পেকে যাওয়ায় গতকাল সোমবার কাটা হয়েছে। এতে ১৬ মণ ধান ফলন পেয়েছি। আগামী ১০-১২ দিনের মধ্যে বাকি জমির ধান কাটা হবে। ফলন ভালো হওয়ায় আমি খুবই খুশি।
কৃষক মো. নাজির মিয়া বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় এ মৌসূমে ৫ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। জমির সব খেতেই শীষ এসে পাকতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির ধান পেকে যাওয়ায় ধান কাটা হয়েছে। বিঘায় ফলন পেয়েছি ১৮ মণ। জমিতে ধানের যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। তবে বিক্রিতে দর ভালো পেলে লাভবান হব।
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, মৌসুমের শুরুতে সরকারিভাবে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের ৫ কেজি করে ধানের বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার দেওয়া হয়। ফলন বৃদ্ধিতে মাঠ পর্যায়ে থেকে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করা হয়। ইতিমধ্যে আগাম জাতের ধান কাটা শুরু হয়েছে। আগামী ৮-১০ দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলার সর্বত্রই আমনের ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আগাম জাতের ধান কেটে একই জমিতে যদি সরিষা, আলু ও শাক-সবজি চাষ করা যায় এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। আবার সরিষা ও শাক-সবজির আবাদ ঘরে উঠিয়ে একই জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা যাবে। এতে কোনো ক্ষতি হবে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন