আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ^কাপের আগে আর কোনো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের খেলা নেই বাংলাদেশের সামনে। তাই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বিশ^কাপের মঞ্চে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। গতকাল চট্টগ্রামের মাঠে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে তাদের। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডকে ¯্রফে উড়িয়ে দিয়েছে টাইগাররা। ম্যাচটিতে ৮ উইকেটের বড় জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতল লিটন কুমার দাসরা। এর আগে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আইরিশদের বিপক্ষে ৪ উইকেটে জিতেছিল স্বাগতিকরা। তবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ড ৩৯ রানে জয় পায়। এ নিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীবারের মতো তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে এখনো বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের রেকর্ড নেই আইরিশদের। টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও ২-০ ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ দল।
চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ১১৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল আয়ারল্যান্ড। জবাবে ৩৮ বল হাতে রেখে ২ উইকেট হারিয়ে সহজ জয় তুলে নেয় লিটনরা। তবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতে কিছুটা এলোমেলো ছিল বাংলাদেশ। তবে সেই সময়টা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৪৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমনের ব্যাটিং-নৈপুণ্যে বড় জয় তুলে নেয় স্বাগতিকরা।
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দিন-রাতের লড়াইয়ে রান উঠেছিল বেশ। তবে তৃতীয় ম্যাচ মঙ্গলবার শুরু হয় বেলা ২টায়। শুরুর ঝড়ের পর আইরিশ ব্যাটসম্যানরা ধুঁকতে থাকেন। ইনিংস শেষ হয় তাদের স্রেফ ১১৭ রানেই। আগের দুই ম্যাচে উইকেট না পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান শেষ ম্যাচে শিকার করেন তিন উইকেট। একাদশে ফেরার ম্যাচে তিন উইকেট নেন রিশাদ হোসেনও। ফিল্ডিংয়ে ৫টি ক্যাচ নিয়ে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়ার বিশ^রেকর্ড গড়েন তানজিদ হাসান। তানজিদ পরে ব্যাট হাতেও ছিলেন দলের সেরা। অপরাজিত ফিফটি (৫৫*) উপহার দেন বাঁহাতি ওপেনার। আগের ম্যাচের মতোই শেখ মেহেদি হাসানের প্রথম ওভারে তিন বাউন্ডারিতে শুরু করে আয়ারল্যান্ড। সেদিন ব্যাটসম্যান ছিলেন টিম টেক্টর, এদিন পল স্টার্লিং। তৃতীয় ওভারে নিজের বলে ক্যাচ ছেড়ে দেন এই স্টার্লিংয়েরই। প্রথম দুই ওভারে স্টার্লিংয়ের চারটি বাউন্ডারির পর তৃতীয় ওভারে জেগে ওঠেন টিম টেক্টর। শরিফুল ইসলামকে দুটি চার ও একটি ছক্কা মারেন তিনি আলগা বল পেয়ে। বাঁহাতি পেসার অবশ্য ফিরে আসেন প্রবলভাবে। দারুণ ডেলিভারিতে ওভারের শেষ বলে বোল্ড করে দেন টেক্টরকে (১০ বলে ১৭)। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের বলে স্টার্লিংয়ের ছক্কা ও চারে আইরিশদের পঞ্চাশ চলে আসে পাঁচ ওভারেই। এরপরই বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু। মোস্তাফিজ রহমান আক্রমণে এসেই তৃতীয় বলেই দেখা পান উইকেটের। হ্যারি টেক্টর ডিফেন্স করলেও বল গড়িয়ে যায় পেছনে। তিনি চেষ্টা করেছিলেন পা দিয়ে ঠেকাতে, কিন্তু পেরে ওঠেননি। বল আলতো করে স্টাম্প ছুঁয়ে ফেলে দেয় বেলস।
আগের ম্যাচের মতোই প্রথম ওভারে খরুচে শেখ মেহেদি পরে পুষিয়ে দেন। পাওয়ার প্লে শেষে বোলিংয়ে এসেই প্রথম বলে ফেরান তিনি লর্কান টাকারকে। এরপর দুই প্রান্তে রিশাদ ও শেখ মেহেদীর আঁটসাঁট বোলিংয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি আইরিশ ব্যাটসম্যানরা। শেষ পাঁচ উইকেটের প্রতিটিতে ক্যাচ নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান তানজিদ। রান তাড়ায় বাংলাদেশ তানজিদের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠায় সাইফ হাসানকে। সিরিজের আগের দুই ম্যাচ রান না পাওয়া ব্যাটসম্যান এবারও আউট হয়ে যান ১৪ বলে ১৯ রান করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের টানা ছয় ইনিংসে ২৫ রানও ছুঁতে পারলেন না তিনি। তিনে নেমে বাজে এক ডেলিভারিতে উইকেট বিলিয়ে ফেরেন অধিনায়ক লিটনও।
তবে দলকে কোনো চাপে পড়তে হয়নি। আইরিশদের আলগা বোলিং কাজে লাগিয়ে অনায়াসেই দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দেন তানজিদ ও পারভেজ হোসেন ইমন। জন্মদিনের পরদিন ফিফটি করে কেক কাটার মতো করে উদযাপন করেন তানজিদ। ৪টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৬ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৩ ছক্কায় ২৬ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন পারভেজ। এই সিরিজ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সফলতম বছর শেষ হলো বাংলাদেশের। ৩০ ম্যাচ খেলে এ বছর ১৫টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন