বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে অগ্রহায়ণ মাস শেষ হতে আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি। চলতি মাসের শুরু থেকেই দেশজুড়ে হালকা ঠান্ডা বাতাসে শীতের পদধ্বনি অনুভূত হচ্ছিল। প্রায় দুই দিন আগে থেকেই হালকা ঠান্ডা বাতাসে বেড়েছে আরও শীতের অনুভূতি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় দেশের ২০ জেলায় বিরাজ করছে ও ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে শীত সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে। এ সময় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতের অনুভূতি এ সময় রাজধানীতে সহনীয় থাকলেও গাজীপুর, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জে রাতের দিকে তাপমাত্রা কমে যায় বলে জানা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস থেকে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এ সময় তাপমাত্রা আরও কমেছে। তাপমাত্রার এমন নি¤œগতির মধ্যেই চলতি শীত মৌসুমে প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ‘পরশ’ আসছে বলে গতকাল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
আবহাওয়াবিদ মো. তরিফুল নেওয়াজ কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামতে পারে, তবে তা স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হতে পারে।’
ফেসবুক পোস্টে বিডব্লিউওটি জানায়, ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ পরশ। এটি এই মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সংস্থাটি আরও জানায়, আগামী ১৪ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে সক্রিয় থাকতে পারে শৈত্যপ্রবাহ পরশ। এটি সক্রিয় থাকার সময় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা এবং সিলেট বিভাগের কিছু কিছু স্থানে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নামতে পারে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১১ ডিগ্রি, কুমিল্লা, নওগাঁর বদলগাছী, গোপালগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২ দশমিক ৫, যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ১২ দশমিক ৪ এবং রাজশাহী, কুষ্টিয়ার কুমারখালী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের বেশির ভাগ স্থানে রাতের তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকায় শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নিচে নামলেই শৈত্যপ্রবাহ শুরু হিসেবে গণ্য হয়। তাপমাত্রা ৮-১০ ডিগ্রি হলে মৃদু, ৬-৮ ডিগ্রি হলে মাঝারি, ৪-৬ ডিগ্রি হলে তীব্র এবং ৪ ডিগ্রির নিচে নামলে অতিতীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।
পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি মাসেই এক থেকে দুটি শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে, যার প্রকৃতি হবে মৃদু থেকে মাঝারি। অর্থাৎ তাপমাত্রা কমে ১০ থেকে প্রায় ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আগামী পাঁচ দিন আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা ও আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাত-দিনের তাপমাত্রায় তেমন পরিবর্তন হবে না। ভোরে দেশের কিছু এলাকায় হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে দেশের কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে জানিয়ে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়ে, বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শীতের প্রভাব তীব্র হতে পারে। তীব্র শীতের কারণে এসব এলাকার জনসাধারণকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আবাহাওয়ার সিনপটিক অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।
আজ ও আগামীকালের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আজ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। ভোরের দিকে সারা দেশের কোথাও কোথাও হালকা কুয়াশা পড়তে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
একই আবহাওয়া বজায় থাকবে আগামীকাল বুধবারও।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন