মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪১ এএম

সম্পত্তি লিজ নীতিমালা

ক্ষমতা খর্বে বেবিচকে অসন্তোষ

মাইনুল হক ভূঁইয়া ও দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪১ এএম

ক্ষমতা খর্বে বেবিচকে অসন্তোষ

  • মন্ত্রণালয়ে বেবিচক চেয়ারম্যানের চিঠি
  • নতুন নীতিমালা আইকাওয়ের বিধিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক
  • বেবিচক মনে করছে, নতুন এ নীতিমালা সংস্কার নয়, মূলত প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের দোকানপাট, লাউঞ্জ, বিলবোর্ড, হোটেল-রে¯েঁÍারা, কফিশপসহ সম্পত্তি লিজ নীতিমালা নিজেরাই অনুমোদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এত দিন এই প্রক্রিয়া সম্পাদনের দায়িত্ব ছিল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃক্ষের (বেবিচক) হাতে। ক্ষমতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কায় সংস্থাটি বেজায় নাখোশ। তারা বলছে, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় বড় ধরনের ঝুঁঁকিতে পড়ার পাশাপাশি এনেক্স-১৭ নীতিমালা লঙ্ঘিত হবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (আইকাও) ৯, ১৪, ১৭ ও ১৯ নম্বর বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে এবং ঝুঁকিতে পড়বে বিমানবন্দরের প্রবেশাধিকার।

বিষয়টি নিয়ে বেবিচক গত ২৯ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠায়। মন্ত্রণালয় এখনো চিঠির জবাব দেয়নি। এদিকে আদালতে মামলা চলমান থাকা সত্ত্বেও হাসিনা নামের এক নারী উদ্যোক্তার সিলেট ও যশোর বিমানবন্দরের ৩টি দোকান সন্ত্রাসী কায়দায় সিলগালা করার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু বেবিচক বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনেই প্রতিষ্ঠান তিনটি সিলগালা করা হয়েছে।

বেবিচকের কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন এ নীতিমালা সংস্কার নয়, মূলত প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা।

এদিকে বিমানবন্দর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের লিজের মেয়াদ শেষ হলেও তাতে বেবিচক হস্তক্ষেপ করছে না। মার্কেটকে ঘিরে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠছে। পাশাপাশি আরেকটি জায়গা লিজ নিয়ে আবাসিক হোটেল তৈরির পাঁয়তারা চলছে। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা মাকের্টের পেছনে আরেকটি বহুতল মার্কেট গড়ার নামে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল।

রূপালী বাংলাদেশের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বেবিচকের সম্পত্তি লিজের ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ে চলে যাওয়ায় তারা তা ফের নিজেদের হাতে আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে বেবিচক বিধিমালার দোহাই দিচ্ছে। তাদের অভিযোগ, মাত্র দুই দিনের মধ্যে অংশীজনদের মতামত ছাড়াই খসড়া তৈরি করার প্রচেষ্টায় স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকতে পারে এবং সম্ভাব্য গোপন বাণিজ্যিক স্বার্থের বিষয়টিও সামনে চলে আসতে পারে। এভাবে নীতি তৈরির উদ্যোগ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আইনগত এখতিয়ারকে দুর্বল করে দেশের বিমান নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

বেবিচকের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৭ অনুযায়ী বিমানবন্দরের সম্পত্তি অধিগ্রহণ, ব্যবস্থাপনা ও লিজ দেওয়ার ক্ষমতা স্পষ্টভাবে বেবিচকের ওপর ন্যস্ত। ১৯৯৬ সালের রুলস অব বিজনেস অনুযায়ীও মন্ত্রণালয় শুধু নীতিগত দিকনির্দেশনার ক্ষমতা রাখেÑ সরাসরি বিমানবন্দর পরিচালনা বা সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় নয়। ফলে নতুন লিজ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ আইনগত কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেই সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য। এ ছাড়া সূত্রটি মনে করে, এটি কোনো নীতি সংস্কারের উদ্যোগ নয়Ñ বরং প্রতিষ্ঠানের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা। বেবিচকের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া সরাসরি আইনের লঙ্ঘন। এতে বিমানবন্দর পরিচালনায় বাণিজ্যিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়তে পারে এবং সামগ্রিক নিরাপত্তায় বড় দুর্বলতা দেখা দিতে পারেÑ যার দায়ভার কে নেবে, তা স্পষ্ট নয়।

বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এ নীতি তৈরির পুরো প্রক্রিয়াই হচ্ছে দ্রুততার সঙ্গে এবং অংশীজনদের মতামত নেওয়ার কোনো সুযোগ ছাড়াই। নাম না প্রকাশের শর্তে সংস্থাটির এক কর্মকর্তার মতে, এর ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জানা যায়, প্রস্তাবিত নীতিতে যদি সর্বোচ্চ দরদাতার ভিত্তিতে লিজ দেওয়া হয়, তাহলে বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকা নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তাবিধি এবং আইকাওয়ের অ্যানেক্স-৯, ১৪, ১৭ ও ১৯-তে থাকা আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি হবে।

এ বিষয়ে একজন সাবেক বিমান নিরাপত্তা পরিচালক বলেন, ‘বাণিজ্যিক লিজিং যদি নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তবে সংরক্ষিত এলাকায় অননুমোদিত প্রবেশ, চোরাচালান ও নিরাপত্তা ভঙ্গের ঘটনা বাড়তে পারে। বেবিচক যদি অপারেশনাল ক্ষমতা হারায়Ñ তাহলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতেও পড়তে পারে, কারণ বিমানবন্দর নিজেই আন্তর্জাতিক অডিটের অংশ।’

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দোকান, লাউঞ্জ, ডিউটি-ফ্রি শপ ও অন্য সেবায় যুক্ত কয়েকজন উদ্যোক্তা জানান, বছরের পর বছর তারা ব্যক্তিগত অর্থ ও ব্যাংকঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন। বড় দরদাতার সঙ্গে প্রতিযোগিতা ছোট উদ্যোক্তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে পুরো লিজ সংক্রান্ত বিষয়টিই একটি নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উদ্যোক্তা বলেন, ‘একটি সিদ্ধান্তেই দীর্ঘ সময় ধরে গড়ে ওঠা পুরো ব্যাবসায়িক কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। এতে যাত্রীসেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত বলে মনে করি।’

সব মিলিয়ে, বিমান বিশেষজ্ঞ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও বেবিচকের কর্মকর্তাদের অভিমত হলো, স্টেকহোল্ডারদের মতামত ছাড়া লিজ নীতি অনুমোদন করা হলে দেশের বিমান নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং ব্যাবসায়িক স্থিতিশীলতাÑ সবই বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। তারা এ নীতি চূড়ান্ত করার আগে স্বচ্ছতা, আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং অংশীজনদের মতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৯ অক্টোবর বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ দেন। সুপারিশে বলা হয়েছেÑ বর্তমান আইন অনুযায়ী বিমান চলাচলের নিরাপত্তা, যাত্রীসেবা ও প্রযুক্তিগত নিয়ম আন্তর্জাতিক মানে রক্ষা করা সম্ভব। সুতরাং নতুন অধ্যাদেশ প্রণয়নের আগে বিষয়টির বিস্তারিত পর্যালোচনার প্রয়োজন। বর্তমানে দেশের ৮টি বিমানবন্দরে প্রায় ২৫০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যেখানে শতকোটি টাকা বিনিয়োগ এবং কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সুপারিশে আরও বলা হয়Ñ জনগণের স্বার্থে বর্তমান বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭-এর ১৪ ধারাটি অপরিবর্তিত রাখা উচিত। কারণ, এ ধারায় চেয়ারম্যান দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম, যা আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রস্তাবিত সংস্কার হলে বেবিচকের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যাবে, যা বিমান নিরাপত্তা-সংক্রান্ত নিয়মাবলী প্রণয়নে বিলম্ব সৃষ্টি করবে এবং আইকাওয়ের নিরীক্ষায় দেশের কার্যকারিতা দুর্বল হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য রূপালী বাংলাদেশের তরফ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও বেসামরিক বিমান পরিবহন) হুমাইরা সুলতানাকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি রিসিভ করেননি। দ্বিতীয় দফা ফোন দেওয়া হলে তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বিষয় উল্লেখ করে হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সবশেষে যুগ্ম সচিব (বেসামরিক বিমান পরিবহন) অনুপ কুমার ম-লকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু বলব না, আপনি সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলুন।’ এরপর একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ‘স্যরি’ ‘স্যরি’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!