সিলেটে ইসলামি ঘরানার ভোটাররা পড়েছেন দোটানায়। তারা কোন জোটে ভোট দেবেন, সে নিয়ে রয়েছে মহাভাবনা। জামায়াতসহ কওমি ঘরানার প্রায় দলই এখন এক জোটে। কওমি ঘরানার অন্য দুটি দল আছে বিএনপির সঙ্গে। তবে আলিয়াপন্থি সুন্নি মতাদর্শে বিশ্বাসী ভোটাররা রয়েছেন স্পষ্ট দ্বিধায়। এমনকি দুই জোটে থাকা কওমি অনুসারী ভোটাররা পড়েছেন বেকায়দায়। কওমি অঙ্গনের পুরোনো সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি বলয়ে থাকায় সারা দেশের মতো সিলেটেও কওমি ঘরানার ভোট ভাগ হবে দুই দিকে।
এর আগে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপি। তাদের কাছে টানার চেষ্টার অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক বৈঠকও করে বিভিন্ন সময়। কিন্তু তারা সফল হয়নি বরং জামায়াতে ইসলামী তাদের কাছে টেনে নিতে সক্ষম হয়। ‘সকল ইসলামি ভোট এক বাক্সে’Ñ এমন স্লোগান নিয়ে তারা কওমি ঘরানার চারটি এবং স্বতন্ত্র আরও একটি ইসলামি দল নিয়ে নির্বাচনি আসন সমঝোতার সিদ্ধান্তে আসে। গঠন করা হয়েছে আটদলীয় জোট, যেখানে আছে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ইসলামি দল। তবে এর পরও বসে নেই বিএনপি। তাদের পুরোনো মিত্রদের কয়েকটিকে এখনো ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তারা সামগ্রিক ভোটের আশায় ডান-বাম মিলে জোট করছে। সেখানে আছে বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও ইসলামী ঐক্যজোট। ইসলামি রাজনীতির এ দুটি দলই কওমি ঘরানার। উভয় জোটে এখনো আলিয়াপন্থি সুন্নি ঘরানার কোনো রাজনৈতিক দলের উপস্থিতির দেখা মেলেনি। বাংলাদেশে ইসলামি রাজনীতির মাঠে সুন্নি ভোটাররা একটি বড় ফ্যাক্টর এবং তারা জয়-পরাজয়ে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেন। তারা বিভিন্ন পির-আউলিয়ার অনুসারী। সিলেট, চট্টগ্রাম ছাড়াও সারা দেশে বিভিন্ন ছোট-বড় দলের ব্যানারে তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছেন রাজনীতির মাঠে।
এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামপন্থি ভোট নিজেদের ঝুঁলিতে নেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী, তাতে এখনো তারা সফল। জামায়াতের ঘোর বিরোধী বলয় হিসেবে পরিচিত চরমোনাই পিরের সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এখন তাদের জোটে আসন সমঝোতায়। সেই সঙ্গে ইসলামি দলগুলোর মধ্যে আছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম পার্টি।
তবে এই জোটে জামায়াত ও খেলাফত মজলিস ছাড়া আর কারও ভোটব্যাংক তেমন নেই বললেই চলে। তাদের আটদলীয় জোটে নামসর্বস্ব দল হিসেবে রয়েছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মতো দলও! ফলে এই জোট ভোটযুদ্ধে প্রভাব ফেললেও তা ভোটের হিসাবে খুব একটা পার্থক্য গড়ে দেবে না বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে থাকা বাংলাদেশ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভোটব্যাংকও ভাগ হয়ে গেছে। কওমি ঘরানার এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা একই মতাদর্শের অন্য দলগুলোতে ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে গেছেন। তাদের শক্তি এখন আগের মতো নেই। ফলে সিলেট অঞ্চলে তারাও বিএনপিকে খুব একটা সুবিধা করে দিতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভোট টানার প্রতিযোগিতায় জামায়াত জোট অনেকটা এগিয়ে থাকবে।
নির্বাচনের ঠিক এই মুহূর্তে এসে সিলেটে ধর্মীয় ভোট কোন দিকে যাবে, সেই হিসাব-নিকাশ শুরু করেছে দলগুলো। কওমি ঘরানার ভোট ভাগবাঁটোয়ারায় বসলেও আলিয়াপন্থি সুন্নি ভোটব্যাংক কোনদিকে যাবে, সেটি এখনো দোদুল্যমান। তবে এখানকার প্রতিটি আসনে এই ভোটব্যাংক জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। সিলেটের কোনো কোনো আসনে তারাই মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বিএনপি সেই ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে এরই মধ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে। অবশ্য জামায়াত জোট চেষ্টা করলেও সেই ভোটব্যাংকে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবে, তা নিয়ে বড় রকমের ভাবনায় রয়েছে। সিলেট অঞ্চলে সুান্ন ভোটব্যাংক বলতেই পিরে কামেল মরহুম আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর অনুসারী এবং অন্যান্য পির-আউলিয়া ও দরবারের অনুসারীদের বোঝানো হয়। আদর্শিক কারণে বরাবরই তারা জামায়াতবিরোধী। বিএনপির চারদলীয় জোটের সরকারের সময়ে বা পরবর্তীকালে শুধু জোটে জামায়াত ছিল বলেই বিএনপির ওপর থেকে তাদের ছায়া সরিয়ে নিয়েছিল। এবার বিএনপি জোটে জামায়াত না থাকায় তাদের ভোট বিএনপির বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আল্লামা ফুলতলী (রহ.)-এর অনুসারীদের সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ বাংলাদেশ তাদের সমর্থিত অন্তত এই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে সিলেটে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে দলটি।
অবশ্য আসন সমঝোতা বা ভোট ভাগাভাগিতে গেলে তারা ভিন্নভাবে ভোটের লড়াইয়ে নামার কথাও মাথায় রেখেছে বলে জানিয়েছেন দলের এক শীর্ষ নেতা।
বিএনপি এই ভোটব্যাংকের অংশীদার হতে পারে। তবে জামায়াত নেতৃত্বের জোট বাংলাদেশে ইসলামি বৃহত্তর স্বার্থের কথা বলে তাদের ভোটও নিজেদের বাক্সে টানার পথে হাঁটছে। ‘সকল ইসলামি ভোট এক বাক্সে’Ñ এই মিশনে সুন্নি ঘরানার ভোটব্যাংক কাছে টানতে পারলে দেশে ইসলামি ভোটারদের সিংহভাগই চলে যাবে জামায়াত জোটে। এটি বিএনপির জন্য দুশ্চিন্তার কারণ।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন