মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শিব্বির আহমেদ রানা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রজন্ম ভাবনা

শিব্বির আহমেদ রানা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রজন্ম ভাবনা

বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এমন এক বাঁকে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে পুরোনো কৌশল, পুরোনো ভাষা কিংবা পুরোনো আক্রমণাত্মক মনোভাব দিয়ে আর নেতৃত্ব ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিশ্ব প্রযুক্তির দোলাচলে এগিয়ে গেছে বহুদূর; মানুষ এখন ডিজিটাল যুগও পেরিয়ে এক ধরনের মাল্টি-ডিজিটাল বাস্তবতায় জীবনযাপন করছে। এ যুগে দাঁড়িয়ে রাজনীতির ভাষা যদি হয় গালি-গালাজ, অপবাদ-অভিযোগ কিংবা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের পুনরাবৃত্তিÑ তাহলে সেই রাজনীতি জনগণের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে ধরা দেবে শুধু গতানুগতিক, অনাকর্ষণীয় নয়; বরং বর্জনীয় হিসেবে। এ প্রজন্ম বিগত সতেরো বছরের রাজনৈতিক স্বৈরাচারী আচরণ দেখে গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে বাস করছে। এদের কাছে রাজনৈতিক শিষ্টাচার নিয়েও রুচিবোধের সঞ্চার ঘটেছে। এখন তারা আর আগের ধারায় যেতে চায় না।

আজকের তরুণরা তথ্যসমৃদ্ধ, আত্মবিশ্বাসী এবং মত গঠনে ও প্রকাশে স্বাধীন। তাদের কাছে রাজনৈতিক নেতার প্রথম পরিচয়Ñ তার ভাষা, তার আচরণ এবং তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও রুচিবোধ। অতীতের মতো ভিড় টেনে শুধু স্লোগান আর দোষারোপে রাজনীতি চালানো এখন আর সম্ভব নয়। বর্তমান প্রজন্ম কাউকে ছোট করে কাউকে বড় হতে দেখে না; তারা দেখে কে কী করতে পারে, কী পরিবর্তন আনে, এবং কে একটি দেশের ভবিষ্যৎকে কেমনভাবে কল্পনা করে। তারা বুঝে নিতে চায় একজন নেতা দেশের জন্য কী ভাবছেনÑ আর কতটা বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিশ্রুতির স্রোতে গা ভাসাতে চায় না, প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা নিয়েও তারা প্রচ- জ্ঞান রাখেন। খোলা মাঠে ক্যানভাস আর বাস্তবতার শ্রুতি তারা বুঝতে সক্ষম।

গালি ছাড়া, উসকানি ছাড়া, পরস্পরকে সম্মান দিয়ে, নিজেরা কী করতে পারি- এই সৃজনশীলতা দেখিয়েই যে রাজনীতি করা সম্ভব, সেটিই আজ নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে বড় দাবি। রাজনৈতিক শিষ্টাচার বলতে আমরা প্রায়ই কেবল ভদ্রতার কথা বুঝি, কিন্তু এটি আসলে তার চেয়েও গভীর। এটি এক ধরনের নৈতিকতা, চরিত্র, দৃষ্টিভঙ্গিÑ যা মানুষকে বিভক্ত না করে; একত্রিত করে। যা সমাজে উত্তেজনা নয়, প্রশান্তি আনে। দেশ-সংস্কৃতি-চিন্তার পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও মতের সম্মান রেখে আমরা একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে পারিÑ এই বিশ্বাসই রাজনৈতিক শিষ্টাচারের হৃদয়। যে বা যারা যতবেশি রাজনৈতিক শিষ্টাচার প্রদর্শন করতে পারবে তারাই আগামীর পথে রাজনৈতিক সম্ভাবনার এক নতুন ভোর হয়ে উদিত হবে।

বিশ্বে সম্প্রীতির রাজনীতির যে উদাহরণগুলো আমরা দেখি- ম্যান্ডেলার ক্ষমার নীতি, দেশগুলোর সহযোগিতামূলক শাসন, এমনকি দ্রুত উন্নয়নশীল কিছু রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ আলোচনা- সবই দেখায় রাজনীতি মানে শত্রুতার দেয়াল নয়; বরং সহযোগিতার সেতু। মতের ভিন্নতা থাকতেই পারে, পথ আলাদা হলেও লক্ষ্য থাকে একটাই- জাতির কল্যাণ। যে রাজনীতি জাতিকে বিভক্ত না করে, একত্র করে, সেখানেই জন্ম নেয় টেকসই উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতা। রাজনীতির মাঠে প্রতিযোগিতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক, প্রতিহিংসার দ্বন্দ্ব ভেস্তে যাক। এখানে হারা বা জেতার প্রশ্নের চেয়ে দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতিই হোক মুখ্য। সবার মিশনই কিন্তু দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেজন জনতার রায়ে হেরেছে তাকে জনতার রায়ে বিজয়ীর পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করা উচিত। উন্নয়নের অংশীজন হিসেবে পাশে রাখা উচিত। কোয়ালিটি আর কোয়ান্টিটিই হোক রাজনীতির মানদ-।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তাই এখন প্রয়োজন আমূল পরিবর্তন। দীর্ঘদিন ধরে বিরোধকে শত্রু ভাবার যে মানসিকতা প্রোথিত হয়েছে, সেটি বদলানো ছাড়া সামনে এগোনোর কোনো পথ নেই। আজকের তরুণরা রাজনৈতিক তর্জন-গর্জন দেখে বিমুখ হয়; কিন্তু সৃজনশীল ভাবনা, আধুনিক পরিকল্পনা, নীতির পরিশীলন এবং উন্নয়নের স্বপ্ন দেখে অনুপ্রাণিত হয়। তারা চায় সমস্যার সমাধান, চায় দেশকে নতুন অর্থনীতির যুগে দাঁড় করানোর ভিশন, চায় রাজনৈতিক নেতাদের কাছে প্রযুক্তি, জ্ঞান ও মানবিকতার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি এবং রক্ষণশীল চিন্তা-ভাবনা।

তরুণ প্রজন্ম স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেÑ রাজনীতির ভাষা বদলাতে হবে। বদলাতে হবে নেতৃত্বের চরিত্র, বচন, শব্দচয়ন, সুন্দর আচরণ। রাজনীতি আর না হোক কাউকে ছোট করার প্রতিযোগিতা; রাজনীতি হোক বড় হওয়ার দায়িত্ব। অপমান নয়; যুক্তি। ভয় দেখানো নয়; আস্থা তৈরি করা। অরাজক ভাষা নয়; সভ্য আলোচনার পরিবেশ। রাজনীতি যদি সত্যিই জাতিকে এগিয়ে নিতে চায়- তবে তাকে অবশ্যই প্রশান্তির, যুক্তির এবং উন্নয়নের রাজনীতি হতে হবে। এমন রাজনীতি, যার কেন্দ্রে থাকবে দেশ, দল নয়; জনগণ, কর্মী নয়; এবং সত্য, অলীক প্রচার নয়।

এ কথা বুঝতে না পারলে সময়ের স্রোতে ছিটকে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। রাজনীতির মাঠে এখন আর উত্তেজনাই শক্তি নয়Ñ সৃজনশীলতাই শক্তি। গালিই অস্ত্র নয়, আচরণই পরিচয়। আজকের প্রজন্ম যে সম্প্রীতি, সৌজন্য ও মানবিকতার রাজনীতি চায়, সেটিই হবে আগামী বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি। একটা সময় আসবে মিছিলে দৌড়ানোর রাজনীতিও বন্ধ হয়ে যাবে। ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ বুথে ভোট প্রদান করবে। এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী, অনিবার্যও। কারণ এটি শুধু রাজনীতির পরিবর্তন নয়; দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার পরিবর্তন।

শিব্বির আহমেদ রানা (গণমাধ্যমকর্মী ও কলাম লেখক)

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!