কল্পনা কর তুমি একটি চলন্ত ট্রেনের ভেতরে বসে আছ। ট্রেনটি যখন সোজা চলে, তখন কি তুমি ছিটকে পড়? না। কারণ, তুমি, তোমার সিট, ট্রেনের মেঝে, বাতাস সবকিছুই একইসঙ্গে চলছে। পৃথিবীর ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়। আমরা, গাছপালা, বাড়িঘর, এমনকি আমাদের চারপাশের বাতাস সবকিছুই পৃথিবীর সঙ্গে একই গতিতে ঘুরছি ফলে আমরা এ গতি অনুভব করি না বা ছিটকে পড়ি না। আামাদের পৃথিবীতে এক অদৃশ্য শক্তিশালী চুম্বকবল আছে, যাকে আমরা বলি অভিকর্ষ বল। এই বল সবকিছুকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে ধরে রাখে। ঠিক যেমন একটি শক্তিশালী চুম্বক লোহার জিনিসকে আটকে রাখে। এই টানের জন্যই আমরা মাটিতে পা দিয়ে সোজা হয়ে হাঁটতে পারি, লাফ দিলেও আবার মাটিতে ফিরে আসি, মহাকাশে ভেসে যাই না বা ছিটকে পড়ি না। এই বল আমাদের আবর্তন গতির চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
আমরা অনেক ছোট
পৃথিবীটা আসলে এত বিশাল যে, তার আয়তনের তুলনায় আমরা মানুষেরা বা জীব, জন্তু, পশু, পাখিরা খুবই ছোট। বিশাল একটি চাকার ওপর যদি একটি ছোট পিঁপড়া থাকে, চাকাটি ঘুরলেও পিঁপড়াটি সহজে ছিটকে পড়ে না। ঠিক তেমনি পৃথিবীর বিশালতার কারণে এর ঘূর্ণন গতি আমাদের ওপর ততটা তীব্র প্রভাব ফেলে না তাই আমরা ছিটকে পড়ি না।
আদিকাল থেকে একই নিয়মে ঘুরছে
পৃথিবী হঠাৎ কোনো ঝাঁকুনি দিয়ে ঘোরে না। এই নিয়ম কোটি কোটি বছর ধরে একই রকমভাবে ঘুরছে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তুমি যদি একটি গাড়িতে খুব ধীরে ধীরে গতি বাড়াও, তাহলে হয়তো গতিটা বুঝতে পারবে না। ঠিক পৃথিবীর গতিটাও অনেকটা তেমনই এটা সব সময় একই রকম মসৃণ গতিতে ঘুরছে বুঝার কোনো উপায় নেই।
তুলনা করার মতো কিছু নেই
আমরা গতি তখনই বুঝতে পারি যখন আমাদের সামনে অন্যকিছু স্থির থাকে। যেমন, চলন্ত বাসে জানালার বাইরে গাছপালা বা বাড়িঘর স্থির থাকে বলে আমরা বুঝতে পারি বাস চলছে। কিন্তু পৃথিবীর চারপাশে তুলনা করার মতো স্থির কোনো বড় বস্তু নেই (চাঁদ ও সূর্য ঘুরছে) বা আমরা স্বচক্ষে পৃথিবীর বাইরের কোনো কিছু দেখি না, তাই আমরা পৃথিবীর গতি অনুভব করতে পারি না।
সহজ কথায়, অভিকর্ষ বলের শক্তিশালী টান এবং সবার একসঙ্গে একই গতিতে চলার কারণেই আমরা পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ি না। আমরা এই বিশাল ম্যাজিক বলের ওপর নিরাপদে বসবাস করছি!

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন