মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুস সবুর বিন নূর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৫৭ এএম

প্রচেষ্টাই সফলতার মানদণ্ড 

আব্দুস সবুর বিন নূর

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৫৭ এএম

প্রচেষ্টাই সফলতার মানদণ্ড 

স্কুল ছুটি হতেই হইচই শুরু হলো প্রতিটি ক্লাসে। ‘ছুটি!ছুটি!’ বলতে বলতে সবাই দ্রুত বেরুতে লাগল রুম থেকে। সারারাত আবদ্ধ খুপরি থেকে ক্ষুধার্ত হাঁস-মুরগি ভোরবেলা যেমন দৌড়ে বেরোয়, তাদের বেরোনোর ধরন ঠিক তেমনই যেন। চার দেয়ালে আবদ্ধ গ-ি থেকে মুক্তি পেয়ে সবাই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। সবার মুখে সুখের হাসি। হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে দলে দলে ছাত্র-ছাত্রীরা হাঁটছে তাদের বাড়ির পথে। কিন্তু ফাহিমের অবস্থা আজ ব্যতিক্রম। সে নিঃশব্দে সবার আগে আগে একাকী হাঁটছে। অথচ অন্যান্য দিন সবার সাথে সে কত যে গল্প-গুজব করত! তার কোন সীমা ছিল না। হাসাহাসি করত, দুষ্টমিও করত। আর আনন্দে ফিরত বাড়িতে।

তাহলে আজ ফাহিমের একান্ত মনে হেঁটে চলার কারণ কী? তবে কি ওর মন খারাপ? হ্যাঁ, ঠিক ধরতে পেরেছো। সত্যিই ফাহিমের আজ খুব মন খারাপ। মন খারাপই বা হবে না কেন? অঙ্ক স্যার যে আজ ওকে খুব বকেছেন। শুধু কি তাই? কান ধরে পুরো ক্লাস দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। অঙ্কে সামান্য একটু ভুল হয়েছিল, তাতেই এত শাস্তি? দশবার বেত্রাঘাত করলেও ফাহিম ওতটা মন খারাপ করত না, যতটা মন খারাপ হয়েছে ওর কান ধরানোতে। ‘কান ধরলে মান চলে যায়’-এ কথা সেই শৈশবেই ফাহিম মায়ের মুখে শুনেছিল।

তখন থেকেই ফাহিমের সংকল্প ছিল সে কখনো কান ধরে নিজের মান হারাবে না। কিন্তু আজ অঙ্ক স্যার ফাহিমের সে সংকল্প ভেঙে দিলেন। এটা মনে হতেই ফাহিমের গাল বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। চোখ মুছতে মুছতে সে দ্রুত বাড়িতে পৌঁছল। ব্যাগটা কাঁধ থেকে নামিয়েই চিৎপটাং হয়ে শুয়ে পড়ল সে। দুনিয়ার সব মায়েরা সন্তানের মনবেদনাটা যেন ঠিক বুঝতে পারে। ফাহিমের মাও তাদের থেকে আলাদা নন। ছেলের যে আজ মন খারাপ সেটা তার মুখ দেখেই তিনি বুঝে নিলেন।

তাই দ্রুত ছুটে এলেন ফাহিমের কাছে। মমতামাখা হাত রাখলেন ছেলের মাথায়। আর বললেন, ‘ফাহিম, তোর কী হয়েছে বাবা?’

ফাহিম নিশ্চুপ রইল। কোনো কথা বলল না। মা আবার বললেন, ‘কি হয়েছে তোর বাজান? মন খারাপ করে আছিস কেন? স্যার কি মেরেছে?’

ফাহিম না-সূচক মাথা নাড়াল। ‘তবে কি স্যার বকেছে?’

ফাহিম বলল, ‘হুম।’

মা বললেন, ‘কেন বকা দিয়েছে স্যার?’

ফাহিম এবার বিছানা থেকে উঠে বসল। মা তার দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিলেন। ফাহিম তিন শ্বাসে পুরো পানি পান করল। অতঃপর মায়ের কাছে পুরো কাহিনি বর্ণনা করল সে।

সব ঘটনা শোনার পর মা বললেন, ‘এতে তো স্যারের কোনো দোষ নেই বাবা। আর তোমারও মন খারাপ করার কিছু নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি স্যার-ম্যাডামদের এতটুকু অধিকার তো অবশ্যই আছে। তোমাদের ভালোর জন্যই তারা একটু-আধটু শাসন করেন। মনে রেখ, স্যার-ম্যাডামরা পিতা-মাতার মতো। তারা সবসময় ছাত্র-ছাত্রীদের মঙ্গল কামনা করেন। তোমাদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তারা  আপ্রাণ চেষ্টা করে। কারণ তোমরাই  আগামীর ভবিষ্যৎ। তোমরা যাতে ভালোভাবে পড়াশোনা কর, এজন্যই তারা একটু কড়াকড়ি শাসন করেন।

তাই বলে তোমার মন খারাপ করে থাকলে হবে না বাবা। এর থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ভালোভাবে পড়ালেখার উদ্যোগ নিতে হবে। খুব চেষ্টা করতে হবে পড়ালেখার পেছনে। তবেই তুমি সফল হবে। তখন তোমার এই কষ্ট আর কষ্টই মনে হবে না। তুমি যদি ভালোভাবে পড়া শিখে স্কুলে যেতে, তাহলে আজ তোমাকে কান ধরতে হতো না। মনে রেখ, চেষ্টাই মানুষের জীবনে সফলতা বয়ে আনে। আর একজন ছাত্রকে গড়ে তোলে যোগ্য ছাত্র হিসেবে।

কিন্তু তুমি তো পড়ালেখায় সামান্য চেষ্টাও কর না। পড়ালেখার প্রতি তোমার একটুও মনোযোগ নেই। সারাদিন শুধু খেলাধুলা আর ফোনের পেছনে তোমার সময় কাটে। মনে রেখ, পৃথিবীতে যারা বিখ্যাত এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন, তারা ভালোভাবে পড়ালেখা করেই বিখ্যাত হয়েছেন। তারা সবাই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিলেন। তোমার বাবার দিকেই লক্ষ্য করে দেখ, যিনি সেই ২০০৩ সাল থেকে তোমাদের হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। উনি একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে বেঁচে আছেন। অত্র এলাকার ছোট-বড় সবাই তাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। কেন বল তো?’ 

ফাহিম বলল, ‘কারণ তিনি ভালোভাবে পড়ালেখা করেছেন। তার মাঝে রয়েছে নৈতিক শিক্ষা’

‘হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। ছোটবেলা থেকেই নাকি তোমার বাবা পড়ালেখার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন। এ কথা তোমার দাদির মুখে বহুবার শুনেছি আমি। ছাত্রজীবনে তাকে কারো শাসন করারই প্রয়োজন পড়েনি। নিজ আগ্রহেই তিনি সময়মতো পড়তে বসতেন। প্রতিদিনের পড়া পরিপূর্ণ শিখতেন তারপর স্কুলে যেতেন।’

মায়ের কথাগুলো শুনে ফাহিম অবাক হতে লাগল। মা আরও বললেন, ‘আমরা তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি, যে আমাদের ফাহিম আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে। সে কখনো বিপথে চলে বাবার সম্মান ক্ষুণœ করবে না। ফাহিম, তুমি কি চাও না সমাজে তোমার বাবার সম্মান উঁচু থাকুক?’

ফাহিম এবার মুখ খুলল, ‘কেন চাইব না মা? আমি এতদিন বুঝিনি। অন্ধ ছিলাম। আজ তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো মা। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। স্যারের শাসনের মনখারাপিও এখন দূর হয়ে গেছে। আমি আজ থেকে আর সময় নষ্ট করব না। মনোযোগ দিয়ে পড়ব। ভালোভাবে পড়ালেখা করে আমিও হব বাবার মতো। এই যে, এখনি বসলাম পড়তে।’

ছেলের অমন কথা শুনে মা মুচকি হাসলেন। আর বললেন, ‘কিন্তু তার আগে যে তোমার খাবার খেতে হবে সোনা। খাবার খেয়ে শক্তি জোগাড় করে তারপর পড়তে হবে, বুঝেছো?’

ফাহিম বলল, ‘হ্যাঁ আম্মু, খাবার খেয়েই তাহলে পড়তে বসব।’

সেদিনের পর থেকে ফাহিম মনোযোগের সঙ্গে পড়তে লাগল। প্রতিদিনের পড়া এখন সে নিয়মিত শিখে তারপর স্কুলে যায়। যে ফাহিম আগে পড়ায় পারত না, সে এখন তার ক্লাসের ফার্স্ট বয়। পড়ালেখার পেছনে অনেক চেষ্টার ফলে ফাহিম দিন দিন সফলতার মুখ দেখছে। আর দেখছে বাবা-মায়ের সুখেভরা হাসিমুখ। সত্যিই ফাহিম প্রমাণ করেছে প্রচেষ্টায় বয়ে আনে সফলতা। আর একজন দুর্বল ছাত্রকেও মেধাবীদের অন্তর্ভুক্ত করে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!