*** পাহাড়ি নদী ও ঝড়া থেকে উত্তোলন করে পাচার করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট
*** বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের অভিযানেও থামছে না বালু উত্তোলন
*** প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় চলছে এই অবৈধ কার্যক্রম
*** প্রতি মাহিন্দ্রা বালু বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা
*** কোটি কোটি টাকা রাজস্বসহ মূল্যবান খনিজসম্পদ হারাচ্ছে সরকার
শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি নদী ও ঝড়া থেকে মূল্যবান লাল বালু উত্তোলন করে পাচার করছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। কথিত রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং প্রশাসনের শিথিলতার সুযোগে প্রতিদিন রাতের আঁধারে এসব বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্বসহ মূল্যবান খনিজসম্পদ। যদিও উপজেলা প্রশাসন সময় সময়ে অভিযান পরিচালনা করে বালু উত্তোলনকারীদের জেল-জরিমানা করেছে, তবুও থামছে না এই অবৈধ কার্যক্রম। স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রশাসনের কিছু অংশের নীরবতা ও প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে এই বালু বাণিজ্য আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঝিনাইগাতীর গজনী বিট এলাকার বাকাকুড়া, গজনী, গান্ধীগাঁও, জিয়া খাল, সন্ধ্যাকুড়া, বালিঝুড়ী সংলগ্ন তাওয়াকুচার সোমেশ্বরী ও মহারশি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টসহ ছোট-বড় বহু ঝোড়া থেকে প্রতিদিনই বিভিন্ন কৌশলে লাল বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মাহিন্দ্রা ট্রাক, ট্রলি, ভ্যান ও অটোরিকশায় এসব বালু গ্রামীণ সড়ক হয়ে শেরপুর শহর ও আশপাশের বাজিতখিলা, তাতালপুর, কালিগঞ্জ এলাকায় স্থাপিত সেলস পয়েন্টে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর আগে জেলা প্রশাসন শেরপুরের সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা—ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীতে বালু উত্তোলন ও পরিবহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তবে এখন শহরের পাশেই প্রকাশ্যে লাল বালু বিক্রি হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন নাগরিকরা।
বাজিতখিলা বাজারে বালু পরিবহনকারী এক মাহিন্দ্রা চালক বলেন, প্রতি মাহিন্দ্রা বালু ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, ট্রলি সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং অটোভ্যান ২৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। বালু বহনকারী ড্রাইভার সজীবের কাছে প্রতিবেদক বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি শেরপুর শহরের জনৈক বালু ব্যবসায়ীকে ফোন ধরিয়ে দেন। তিনি নিজ পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, পুলিশ প্রশাসন ও ফরেস্ট অফিসকে ম্যানেজ করেই চলছে এ অবৈধ বালু ব্যবসা। এছাড়া ঝিনাইগাতীর বাকাকুড়া এলাকার সাইফুলসহ প্রভাব শালীরাও এতে জড়িত বলে তিনি জানান।
বালু পাচার কালে আরেক অটোরিকশা চালক বাকাকুড়া এলাকার হাসমত আলী বলেন, আমরা প্রতিদিন ই-ভ্যান যোগে বালু এনে শেরপুর শহরে ২৫০০ টাকায় বিক্রি করি। কাউকে কোন টাকা দেওয়া লাগে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন কথা বলেন নি।
ঝিনাইগাতী থানার ওসি মো. আল আমিন বলেন, আমাদের টহল টিম সব সময় রাস্তায় টহল দেয়। আবার অনেক সময় আসামী ধরার কাজে ফোর্স চলে গেলে এ সুযোগে হয়তো কেউ বালু পাচার করতে পারে। তবে পুলিশ বালু পাচারে জড়িত নন বলে জানান তিনি।
রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আ. করিম বলেন, সাইফুলের একটি বালু বহনকারী মাহিন্দ্রা ট্রাক বালুসহ আমার কাছে আটক আছে। আমার এরিয়া থেকে কোন বালু উত্তোলন হয় না। এখন পাহাড় থেকে নয় বরং পাহাড়ি ঝোড়া থেকে এই বালু গুলো উত্তোলন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, আমার বালু পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছি। তাদের অনেককে আটক করে সাজা শাস্তির আওতায় এনেছি। গত শনিবার আমরা এসিল্যান্ডের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে দুটি গাড়ি আটক করিয়েছি। এধরণের কাজে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন