বাগেরহাটের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের কোড়ামারা গ্রামের এক কোণে ভাঙা ঝুপড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন গোকুল সরদার (৭৮) ও তার স্ত্রী লক্ষ্মী রানী সরদার (৬০)। ছেঁড়া পলিথিনে মোড়ানো ছাউনি, হোগলা ও নারিকেল পাতার প্রায় বিধ্বস্ত বেড়া, তার ওপর ঘরের অর্ধেক অংশ হেলে পড়া, যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কায় দিন কাটছে এই দম্পতির। সামান্য বাতাসেই দুলে ওঠে তাদের একমাত্র আশ্রয়। বৃষ্টি, শীত, শিশির, সবই ঢুকে পড়ে ভেতরে, কিন্তু ঢোকে না স্বস্তির আলো।
দীর্ঘ জীবনে সংগ্রামই তাদের নিত্যসঙ্গী। বয়সের ভারে হাঁটাচলা কষ্টকর হলেও খিদের তাড়নায় কখনো দিনমজুরি, কখনো প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে দু’মুঠো ভাত জোটানোর চেষ্টা করতেন তারা। কিন্তু এখন সেই শক্তিও আর নেই। কাজের সামর্থ্য হারিয়ে চরম অসহায় অবস্থায় পড়েছেন এই দম্পতি। অনেক রাতই কাটে না খেয়ে। বৃষ্টি ও শীতের রাতে ভিজে যায় বিছানা, কাপড়চোপড়, শরীর। সকালের রোদে কাপড় শুকালেও তাদের জীবনের কষ্ট কখনো শুকায় না।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লক্ষ্মী রানী সরদার বলেন, বর্ষাকালে সারারাত ঘুমাতে পারিনি। সবকিছু ভিজে গেছে। পলিথিন মুড়িয়ে কোনো রকমে রাত কাটিয়েছি। চেয়ারম্যান-মেম্বারের কাছে বহুবার গিয়েছি, শুধু আশ্বাসই পেয়েছি। এই শীতে ভাঙা বেড়া দিয়ে ঠান্ডা বাতাস ঢোকে, ওপর থেকে শিশির পড়ে বিছানা ভিজে যায়। নিজেরা ঠিকমতো খেতে পারি না, ঘর মেরামত করব কীভাবে? জীবনের শেষ বয়সে শুধু একটু মাথা গোজার ঠাঁই চাই।
গোকুল সরদার বলেন, তারা কখনো কারো কাছে হাত পাতেননি। দিনমজুরি করে যা পেতেন তাই দিয়েই দুবেলা খাওয়ার চেষ্টা করতেন। বিগত সরকারের সময় একটি ঘর পাওয়ার আশায় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও টিএনও অফিসে বহুবার ঘুরেছেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো সহায়তা পাননি।
এই দম্পতির এমন করুণ অবস্থার পরও সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাগর দাস, জালাল শেখ, সেকেন্দারসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, অনেকের অনেক কিছু থাকার পরও তারা সরকারি ঘর পেয়েছে, অথচ প্রকৃতভাবে যোগ্য এই অসহায় দম্পতি বঞ্চিত হয়েছেন। যেকোনো সময় ঝুপড়িটি ভেঙে পড়ে তাদের বড় দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকার ও বিত্তশালীদের কাছে একটি নিরাপদ ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আকুতি জানিয়েছেন এই দম্পতি। এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রতি বুধবার গণশুনানির আয়োজন করা হয়। তারা সেখানে বিষয়টি উপস্থাপন করলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন