এডিপির ১৩২ প্রকল্পে কোটি টাকা আত্মসাৎ

• ভুয়া প্রকল্পে অর্থ উত্তোলন, জনপ্রতিনিধি ও প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ
• কাজ না করেই বিল উত্তোলন, প্রকল্প নিয়ে তোলপাড়
• শিল্পকলা থেকে হাসপাতাল, এডিপির অর্থ ভাগবাটোয়ারা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের আওতায় ১৩২টি প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রকৌশলীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের কাজ না করেই ভুয়া ভাউচার ও কাগজপত্র তৈরি করে অর্থ উত্তোলন করে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে গত ১৬ বছরে কোনো শিল্পী তৈরি না হলেও তবলা, ডুগি ও হারমনিয়াম কেনার নামে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেখিয়ে অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দরিদ্র কৃষকদের জন্য স্প্রে মেশিন, দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ সরবরাহ, কবরস্থান, মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের নামে একাধিক প্রকল্প দেখানো হলেও বাস্তবে এসব প্রকল্পের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ পার্কে আগে থেকেই থাকা গাইড ওয়াল পুনরায় নির্মাণ দেখিয়ে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। উপজেলা হাসপাতালে রোগীদের জন্য ওষুধ ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের নামে ৭ লাখ এবং পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ওষুধ ও সেবা কার্যক্রমের জন্য ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। শিল্পকলা একাডেমির ভবন নির্মাণের জন্য ৩ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে। এসব অর্থ ভুয়া ভাউচার দাখিল করে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

এ ছাড়া সোনারায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বদিউল আহসান সেলিম, তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম, দহবন্দ ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম রেজা, রামজীবন ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হুদা, ধোপাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছ ম-ল, ছাপরহাটি ইউপি চেয়ারম্যান কনক রায়, শান্তিরাম ও চ-িপুর ইউপি চেয়ারম্যান এবং কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মজনু মিয়াকে প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান দেখিয়ে ভুয়া প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াই আগেই অর্থ ভাগ করে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের লেনদেন হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এডিপি প্রকল্পের অর্থ ভাগবাটোয়ারায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম লেবুর সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ উঠলেও তিনি বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার বলেন, এডিপির অর্থে কী কাজ হয়েছে, সে বিষয়ে তার জানা নেই। তিনি যোগদানের আগেই বিলপত্র উত্তোলন করা হয়েছে। এসব কর্মকা-ের সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলেও দাবি করেন।