- চার বছরেও সেতুর মাঝখানের স্প্যানটি বসানো হয়নি
- চমর ভোগান্তিতে পড়েছেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা
- সেতু না হওয়ায় পর্যটকের অভাবে মৃতপ্রায় টেংরাগিরি ইকোপার্ক
কাজ শুরুর চার বছরেও শেষ হয়নি বরগুনার তালতলী উপজেলার দক্ষিণা খালের ওপর নির্মাণাধীন সেতু। প্রায় ৭ কোটি টাকার সেতুটির কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে আছেন খালের দুই পাড়ের বাসিন্দারা। এ ছাড়া সেতুর অভাবে একসময় প্রাণচঞ্চল পর্যটনকেন্দ্র টেংরাগিরি ইকোপার্ককেও মৃতপ্রায় করে তুলেছে। এ অবস্থায় সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার দক্ষিণা খালের ওপর (স্থানীয় নাম সোনাকাটা খাল) সেতু নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়। ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৭ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণব্যয় ধরা হয় ৬ কোটে ৯৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭১৫ টাকা। সেতুটির উচ্চতা ধরা হয় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ থেকে ১০ ফুট। প্রক্রিয়া শেষে বরিশালের ‘আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির দুই পাড়ের অর্ধেক কাজ শেষ হওয়ার পরেও মাঝখানে ২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটি এখনো বসানো হয়নি।
সেতুর নির্মাণকাজ চলাকালে যোগাযোগের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এতে পর্যটক শূন্য হয়ে পড়েছে টেংরাগিরি ইকোপার্কটি। কিছু পর্যটক এলেও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। এতে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়তে ইকোপার্কটি।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল টেংরাগিরি ইকোপার্ককে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফাতরার বনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং পর্যটকদের জন্য সহজ যাতায়াত নিশ্চিত করা। কিন্তু পরিকল্পনার ত্রুটি ও বাস্তবায়নে অদক্ষতা শুরু থেকেই প্রকল্পটিকে বিতর্কের কেন্দ্রে ঠেলে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরযান চলাচলের প্রয়োজন না থাকায় এত ব্যয়বহুল সেতুর বদলে ঝুলন্ত সেতু নির্মাণ করলে পর্যটন আকর্ষণ বাড়ত এবং ব্যয়ও কম হতো।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুই পাশে অর্ধেক কাজ করলেও মাঝের ২৪ মিটার স্প্যান এখনো স্থাপন হয়নি। স্থানীয় জেলেদের দাবি, সেতুর উচ্চতা অন্তত ১০ ফুট বাড়ানো দরকার ছিল, না হলে ভরা জোয়ারে নৌযান চলাচল ব্যাহত হবে। এ দাবি ঘিরে ২০২১ সালের শেষের দিকে কাজ সম্পূর্ণভাবে স্থবির হয়ে পড়ে। এর ফলে পর্যটন কার্যত থমকে গেছে। শীত মৌসুমে যেখানে হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকত টেংরাগিরি ইকোপার্ক, সেখানে এখন নীরবতা। বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় পর্যটকরা এই এলাকা এড়িয়ে চলছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সিদ্দিক বলেন, সেতু হবে ভেবে আমরা নতুন বিনিয়োগ করেছি। এখন পর্যটকই আসে না। পুরো মৌসুমের আয় কমে গেছে। পর্যটন কমে যাওয়ায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, নৌকা ভাড়া ও গাইড সেবা সবই মারাত্মক ক্ষতির মুখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি, ঠিকাদার ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্ব এড়িয়ে চলছে। কোটি কোটি টাকার কাজ অচল হয়ে পড়ে আছে, কিন্তু সমাধানে কেউ উদ্যোগী নয়।
বন বিভাগের সখিনা বিট কর্মকর্তা মোশারেফ হোসেন বলেন, সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বন রক্ষায় নজরদারি সহজ হবে, পর্যটকও বাড়বে। কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় পরিবেশ সুরক্ষায় সমস্যা হচ্ছে। সোনাকাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরাজী মো. ইউনুচ জানান, উচ্চতা ঠিক না করে অর্ধেক কাজ রেখে দেওয়ায় মানুষ ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়েছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে পর্যটন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, উচ্চতা সংক্রান্ত আপত্তি তদন্তের পর ১৬ অক্টোবর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উচ্চতা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। ঠিকাদারকে কাজ দ্রুত পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, কাজ বন্ধ থাকার কারণে সেতুর জন্য রাখা নির্মাণ সামগ্রী চুরি গেছে। তারপরও শীতের মধ্যেই সেতুটির কাজ সম্পন্ন করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন