বাংলাদেশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে একটি সম্প্রদায় হচ্ছে গারো। শেরপুর জেলা ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গারো সম্প্রদায়ের বসবাস বেশি। তবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো মৌলভীবাজার জেলায়ও গারো সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। তাদের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক আচার অনুষ্ঠানও রয়েছে। এমনি ঐতিহ্য নতুন ফসল ঘরে তুলতে নিজস্ব পোশাক পরে নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নাচ গান করা।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গারো জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব ওয়ানগালা উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার ফুলছড়া গারো লাইন মাঠে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিভিন্ন এলাকার গারো সম্প্রদায়ের মানুষ। সকাল থেকেই ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তারা অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। মাঠে তৈরি প্যান্ডেলের ভিতর শিল্পীরা হারমোনিয়াম, গিটারসহ বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে ওয়ানগালার গান পরিবেশন করেন। সেই সুরের তালে নতুন ফসল সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করেন গ্রামের মানুষ।
শ্রীচুক গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে গারো খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনায় অংশ নেন। এরপর নতুন ফসল উৎসর্গ ও গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নাচ-গানের পরিবেশনা হয়।
সংগঠনের সভাপতি অনুপ চিসিমের সভাপতিত্বে ও গারো নকমা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সামুয়েল যোসেফ হাজং এর সঞ্চালনা ওয়ানগালা উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসলাম উদ্দিন। এ সময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রীমঙ্গল ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ।
‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে। সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার পর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য খাওয়া নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন।
ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি ছাড়াও আয়োজন করা হয় তাদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারো কিশোরীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী গান ‘ওয়ানগালা ওয়ানগালা’ গানের সঙ্গে নৃত্য করেন। ফুলছড়া চা বাগান মাঠে ওয়ানগালাটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন