মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৫:৫০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল

রাশিয়ার স্বস্তিতে নাখোশ ইউরোপ

ভিনদেশ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৫:৫০ এএম

রাশিয়ার স্বস্তিতে নাখোশ ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে রাশিয়া ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখেছে। মস্কোর ভাষ্য, ৩৩ পৃষ্ঠার এই নথির বহু অংশ রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কৌশলটিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে নারাজ। তাদের অভিযোগÑ এটি ক্রেমলিনের বক্তব্যের সঙ্গে আশঙ্কাজনকভাবে মিলে যায় এবং ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে পশ্চিমা ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে।

রুশ রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘আমরা নতুন কৌশলকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখি।’ তবে ইউরোপে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা সামাজিক কাঠামো নিরাপত্তা কৌশলের বিষয় নয়। পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এক্সে লিখেছেন, ‘ইউরোপ আপনার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্রÑ সমস্যা নয়।’

ইউরোপ নিয়ে হুঁশিয়ারি, রাশিয়াকে বড় হুমকি নয়

নতুন কৌশলে বলা হয়েছে, আগামী দুই দশকের মধ্যে ইউরোপ ‘চেনা যাবে না’ এবং কয়েকটি দেশের সামরিক-অর্থনৈতিক সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বৈদেশিক প্রভাব মোকাবিলা, অভিবাসন কমানো এবং ইইউর নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপ-বিরোধী অবস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এতে রাশিয়াকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। বরং বলা হয়েছেÑ ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা ইইউ-ই বাধাগ্রস্ত করছে এবং রাশিয়ার সঙ্গে নতুন কৌশলগত স্থিতিশীলতা ইউরোপের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে পারে।

এমন বক্তব্য ইইউর নানা কর্মকর্তাকে উদ্বিগ্ন করেছে। তাদের দাবি, এই ভাষা রাশিয়ার প্রচারের সঙ্গে মিল রাখে এবং ইউক্রেনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

‘আমেরিকা ফার্স্ট’-কেন্দ্রিক কঠোর ব্যবস্থা

কৌশলে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’নীতিকে ভিত্তি করে ক্যারিবিয়ান ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান এবং প্রয়োজন হলে ভেনিজুয়েলায় সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর আহ্বানও জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে, মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যরা সতর্ক করে বলেছেনÑ এ কৌশল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। প্রতিনিধি জেসন ক্রো একে ‘যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানের জন্য বিপর্যয়কর’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ইউক্রেনে সামরিক উত্তেজনা অব্যাহত

এমন কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই ইউক্রেনের আরও দুটি এলাকা দখলের দাবি করেছে রাশিয়া। খারকিভ ও দোনেৎস্কের গুরুত্বপূর্ণ দুই বসতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে রোববার জানিয়েছে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের দাবিÑ গাইডেড বোমা, ড্রোন ও ‘কিঞ্জাল’ মিসাইল হামলায় তারা ইউক্রেনের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক, সামরিক অবকাঠামো ও জ্বালানি ডিপো ধ্বংস করেছে। ইউক্রেন যদিও নতুন করে ভূখ- হারানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি। তাদের দাবিÑ ফ্রন্টলাইনে লড়াই অব্যাহত আছে এবং পোক্রোভোস্কে তারা রুশ বাহিনীর ওপর বড় আকারের পাল্টা হামলা চালিয়েছে।

শান্তি আলোচনায় জটিল সমীকরণ

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফ্লোরিডায় তিন দিনের আলোচনার পরও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রস্তাবটি পুরোপুরি পড়েননি বলে অভিযোগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ট্রাম্প বলেন, ‘তার দলের সদস্যরা প্রস্তাবটি পছন্দ করেছে, কিন্তু তিনি এখনো প্রস্তুত নন।’

এ অভিযোগের পরই জেলেনস্কি ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনার জন্য লন্ডনে যান। জেলেনস্কির দলের প্রধান আলোচক যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা থেকে রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়া হতে পারেÑ এমন আশঙ্কায় নথিতে পরিবর্তনের দাবি তোলেন।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ মন্তব্য করেন, ‘ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে না পারলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।’ তিনি রাশিয়ার ওপর চাপ বজায় রাখার আহ্বান জানান।

মার্কিন শান্তি আলোচক দল দাবি করছেÑ চূড়ান্ত চুক্তি খুব কাছেই। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনÑ কোনো পক্ষই এখনো ট্রাম্পের কাঠামোতে সায় দেয়নি। পুতিনও প্রকাশ্যে সমর্থন জানাননি; বরং বলেছেনÑ কিছু অংশ ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।

দুটি বড় অমীমাংসিত ইস্যু

মার্কিন দূত কিথ কেলগ জানিয়েছেন, দুই প্রধান সমস্যা সমাধান বাকিÑ

১. দনবাস অঞ্চলের ভবিষ্যৎ

২. জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ

রাশিয়া দনবাসের পুরো অংশ নিজেদের দাবি করছে, অন্যদিকে ইউক্রেন বলছেÑ গণভোট ছাড়া অঞ্চল হস্তান্তর বেআইনি হবে এবং তা ভবিষ্যৎ আগ্রাসনের দরজা খুলে দেবে।

কেলগের দাবিÑ ‘আমরা সত্যিই খুব কাছাকাছি’, তবে রুশ সহকারী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে নথিতে ‘মৌল পরিবর্তন’ আনতে হবে।

বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের মোট ১৯.২ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে, যার মধ্যে ক্রিমিয়া, সমগ্র লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশ এবং খেরসন-জাপোরিঝিয়ার ৭৫ শতাংশের বেশি। যুদ্ধ শুরুর পর দুই পক্ষ মিলিয়ে ২০ লাখেরও বেশি হতাহত হয়েছে বলে মার্কিন দূত দাবি করেনÑ যদিও দুই দেশই আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করেনি।

ড্রোন যুদ্ধে নারীদের উত্থান

যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালে রুশ আগ্রাসনের পর থেকে নারী সেনার সংখ্যা ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি নারী সরাসরি ফ্রন্টলাইনে। এই পরিবর্তনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে ড্রোন প্রযুক্তি। নারী সেনারা এফপিভি আক্রমণ ড্রোন, নজরদারি ড্রোন ও কামিকাজে ড্রোন পরিচালনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত কাজে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছেন।

ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো নারীদের নিয়োগ বাড়াতে বিশেষ প্রচারণা চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের পর থেকে এসব ইউনিটে নারী সদস্যের সংখ্যা ২০ শতাংশ বেড়েছে।

এক নারী ড্রোন পাইলট মনকা বলেন, ‘হাতে গোলাবারুদ নিয়ে ছুটতে হয় না, প্রযুক্তি দিয়ে তা পৌঁছে দেওয়া যায়Ñ এটা অবিশ্বাস্য।’ আরেক সেনা ইয়াহা বলেন, দূর থেকে শত্রুকে আঘাত করার সক্ষমতা তাকে এই পেশায় আকৃষ্ট করেছে। প্যারামেডিক থেকে ড্রোন পাইলটে রূপান্তরিত ইমলা বলেন, প্রথম মিশনে তিনি ভীষণ নার্ভাস ছিলেন, ‘কিন্তু সময়ের সঙ্গে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে।’ ইউক্রেনীয় বাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা দেহতিয়ারোভ বলেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে ‘ঐতিহাসিকভাবে পুরুষনির্ভর পেশাগুলো নারী সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে।’

উপসংহার

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে ঘিরে রাশিয়া-ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপক্ষীয় উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। একদিকে ইউক্রেনের ময়দানে যুদ্ধ তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে শান্তি আলোচনায় কূটনৈতিক টানাপোড়েন গভীর হচ্ছে। ভূখ- ও জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অচলাবস্থা না কাটলে যুদ্ধবিরতি কতটা বাস্তবে রূপ নেবেÑ সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!