মৃত্যু হলো প্রতিটি মানুষের অনিবার্য বাস্তবতা। জীবনযাপনের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের সামনে যে দোয়াগুলো সবচেয়ে বেশি দরকারÑ তার মধ্যে অন্যতম হলো ক্ষমা ও সুরক্ষার দোয়া। আমাদের প্রিয় নবীজি মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে যে দোয়াটি পড়েছিলেন, তা আমাদের জন্যও দিকনির্দেশনা। নবীজির (সা.) মৃত্যুর আগে যে ঘটনাটি ঘটেছিল এবং যে দোয়াটি পড়েছিলেন তা তুলে ধরা হলো-
মৃত্যু সংঘটিত হওয়ার সময়ের ঘটনা ও দোয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) স্ত্রী হজরত আয়েশার (রা.) কাঁধে ঠেস দিয়ে বসা অবস্থায় ছিলেন। এমন সময় আয়েশা (রা.)-এর ভাই আব্দুর রহমান (রা.) সেখানে উপস্থিত হন। তার হাতে কাঁচা মিসওয়াক দেখে সেদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৃষ্টি গেল। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তার আগ্রহ বুঝতে পেরে তার অনুমতি নিয়ে মিসওয়াকটি চিবিয়ে নরম করে তাকে দিলাম। তখন তিনি সুন্দরভাবে মিসওয়াক করলেন ও পাশে রাখা পাত্রে হাত ডুবিয়ে (কুলিসহ) মুখ ধৌত করলেন। এ সময় তিনি বলতে থাকেনÑ ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। নিশ্চয়ই মৃত্যুর রয়েছে কঠিন যন্ত্রণাসমূহ।’ (বুখারি ৪৪৪৯; মিশকাত ৫৯৫৯)।
এমন সময় তিনি ঘরের ছাদের দিকে তাকিয়ে হাত কিংবা আঙ্গুল উঁচিয়ে বলতে থাকলেন, ‘(হে আল্লাহ!) নবীগণ, ছিদ্দীকগণ, শহিদগণ এবং নেককার ব্যক্তিগণ যাদের তুমি পুরস্কৃত করেছ, আমাকে তাদের সাথী করে নাও। (এরপর তিনি বলেন)
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগ ফিরলি ওয়ারহামনি ওয়ালহিক্বনি বিররাফিক্বিল আ’লা; আল্লাহুম্মার রাফিক্বিল আ’লা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা কর ও দয়া কর এবং আমাকে আমার সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গে মিলিত কর। হে আল্লাহ! আমার সর্বোচ্চ বন্ধু!’
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, শেষের কথাটি তিনি তিনবার বলেন। এরপর তার হাত এলিয়ে পড়ল, দৃষ্টি নিথর হয়ে গেল’। তিনি সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গে মিলিত হলেন। (বুখারি ৪৫৮৬, ৫৬৭৪; মিশকাত ৫৯৫৯)।
এই দোয়াটি আমাদের শেখায়Ñজীবনের শেষ মুহূর্তেও একমাত্র আল্লাহর ক্ষমা, রহমত ও নেক মানুষের সঙ্গই সবচেয়ে বড় কামনা। তাই আমাদের উচিত প্রতিদিনের জীবনে এ দোয়াটি হৃদয়ে ধরে রাখা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমতের আবেদন জানাতে ভুল না করা।
বিশ্বের সব সৌন্দর্য, সব ভালোবাসা, সব আলো যদি এক স্রোতে মিলিত হতোÑ তাহলে সেই স্রোতের নাম হতো মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি প্রেম। এই প্রেম কোনো সাধারণ প্রেম বা ভালোবাসা নয়; এটি আত্মাকে পবিত্র করে, হৃদয়কে আলোকিত করে, জীবনের উদ্দেশ্যকে শুদ্ধ করে। আর এই ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে পবিত্র, সবচেয়ে মহিমান্বিত উপায় হলোÑ দরুদ শরিফ পাঠ করা।
নবীজির (সা.) প্রতি দরুদ পাঠ কোনো রুটিন নয় বরং এটি মুমিনের হৃদয়ের স্পন্দন। এটি সেই কণ্ঠ ধ্বনি, যা নবীজিকে (সা.) জানায় ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ, আপনি আমাদের হৃদয়ে আছেন, আপনি আমাদের ভালোবাসার কেন্দ্র, আপনি আমাদের ইমানের আলো।’ যে হৃদয় দরুদে ভিজে থাকে, সেখানে অহংকার প্রবেশ করতে পারে না। যে জিহ্বা দরুদে ভরে থাকে, তা গিবত-শেকায়েত থেকে দূরে থাকে। যে আত্মা দরুদ পাঠ করে, তার জীবনে আশ্চর্য শান্তি নেমে আসে, এটি আল্লাহর প্রতিশ্রুত রহমত।
অতএব, আমাদের জীবনের প্রতিটি সকাল, প্রতিটি সন্ধ্যা, প্রতিটি দুঃখের মুহূর্ত, প্রতিটি আনন্দের সময়ে দরুদ হোক নিশ্বাসের মতো স্বাভাবিক। নবীজির (সা.) ভালোবাসা হোক আমাদের জীবনের অলংকার, আর দরুদ হোক সেই ভালোবাসার চিরন্তন সেতুবন্ধন।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন