ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

যত বেশি হাসি তত বেশি আয়ু, দীর্ঘ ও সুখী জীবনের রহস্য!

ভিনদেশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০১:৩৩ এএম

জাপানিদের দীর্ঘ ও সুখী জীবনের কথা প্রায় সবারই জানা। এর পেছনের অন্যতম রহস্যের নাম ইকিগাই, যা থেকেই শতবর্ষ আয়ু পেয়ে থাকেন দেশটির বহু বাসিন্দা। জাপানের মানুষ বিশ্বাস করে যে আপনি এমন একটি কাজ করুন, যে কাজটা করতে আপনি ভালোবাসেন এবং যে কাজটা আপনি ভালোভাবে করতেও পারেন। তাদের দাবি, এমন কাজ করলে আপনি ভালো থাকবেন, সুখী থাকবেন, দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন। তাদের কাছে ভালো থাকার ধারণাটাই (কনসেপ্ট) হচ্ছে- ব্যস্ত থাকা। জাপানিরা এটিকে ‘ইকিগাই’ বলে থাকেন। ইকিগাই মানে হচ্ছেÑ আপনার বেঁচে থাকার অর্থ। অর্থাৎ যে জিনিসগুলো আপনাকে আরও বেশি বছর বাঁচার জন্য অনুপ্রেরণা দেয়, এটাই হচ্ছে ইকিগাই।

সুতরাং ইকিগাই অর্থ হচ্ছেÑ ভালো থাকা, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা। জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ ওকিনাওয়ার মানুষজন পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের মানুষের চেয়ে এমনকি জাপানেরও অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশি বছর বাঁচে। তাদের গড় আয়ু বেশি। একবার দুজন লোক ওই দ্বীপে শতবর্ষী মানুষদের সাক্ষাৎকার নিতে গিয়েছিলেন। ইকিগাই নিয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য জানতে গিয়েছিলেন। তদের ভালো থাকার রহস্য নিয়ে সেই সাক্ষাৎকারে মোটামুটি যেসব বিষয় ফুটে উঠেছিল সেগুলো হলোÑ কখনো অবসর নেবেন না। জাপানিদের ভাষায় অবসর বলে কোনো শব্দ নেই।  তাদের মতে, আপনি হয়তো অফিস থেকে অবসর নিতে পারেন।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি বাসায় এসে শুয়ে থাকবেন। আপনাকে সব সময় এমন কিছু একটা করতে হবে, যেটা আপনি ভালোবাসেন। যেটা আপনার জীবন, আপনার পরিবার কিংবা আপনার সমাজে যেটার মূল্য রয়েছে এবং কোনো না কোনোভাবে তা আপনার জীবন, পরিবার বা সমাজের তা উপকারে আসে।

এ রকম কিছু করলে আপনি আরও বেশি বছর বাঁচার আগ্রহ পাবেন। আর তা না করে বরং বিছানায় শুয়ে থাকলে আপনি বাঁচার আগ্রহটাই হারিয়ে ফেলবেন। ব্যস্ততা আমাদের জীবনের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। এই ব্যস্ততার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত অস্থিরতা। বর্তমানে ব্যস্ত জীবনে বেশির ভাগ মানুষ অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়। কিন্তু জাপানিদের মতে, অস্থিরতা থেকে বেরিয়ে এসে ধীরে চলুন নীতিতে চললে আপনি আরও বেশি বছর বাঁচবেন বা বাঁচার জন্য ইচ্ছা হবে। খাওয়ার সময় কখনো পুরোপুরি পেট ভরে খাবেন না। সেটা যে খাবারই হোক না কেন। চেষ্টা করবেন পেটের মোটামুটি ২০ ভাগ খালি রাখতে। আপনার জীবনকে ভালো বন্ধু-বান্ধব দিয়ে বেষ্টন করে ফেলুন।

তাদের সঙ্গে ওঠাবসা করুন।  যাদের বিপদে-আপদে সব সময় কাছে পাওয়া যায় এবং প্রয়োজনের সময় সুপরামর্শ পাওয়া যায়। এতে দীর্ঘায়ু পাওয়া যায় বলে তাদের বিশ্বাস। এর অর্থ হচ্ছেÑ নিজের শরীরের যতœ নেওয়া। পরবর্তী জন্মদিনেও যেন আপনার শরীর সঠিক আকারে থাকে, সে জন্য নিয়মিত শরীর চর্চা করা। শরীর যেন কোনোভাবেই আকারে বুড়িয়ে না যায়। এ জন্য ভারী শরীর চর্চার দরকার নেই। বরং হালকা শরীর চর্চার মাধ্যমেই শরীর নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাললে আপনি ভালো থাকবেন। সব সময় হাসিখুশিতে থাকুন। নিজে হাসুন, অন্যদের হাসাতে চেষ্টা করুন। হাসিখুশির মাঝে থাকলে মন থাকলে, সেই সঙ্গে শরীর-স্বাস্থ্যও। ভালো থাকতে এবং শরীর মন সুস্থ রাখতে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখুন। সব সময় চার দেয়ালের মধ্যে না থেকে মাঝে মাঝে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলুন। সুযোগ পেলেই গাছপালা, গ্রামের পরিবেশ ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করুন।

তাহলে শরীর ও মন ভালো থাকবে। মানুষকে ধন্যবাদ দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যেকোনো ছোট-বড় কাজের জন্য মানুষকে ধন্যবাদ দিলে এটা আপনাকে ভালো রাখতে ও আপনাকে মানসিকভাবে প্রফুল্ল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাপানিদের মতে, বর্তমান সময় নিয়ে চিন্তা করুন। অতীত নিয়ে আক্ষেপ করবেন না। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ নিয়েও খুব বেশি চিন্তিত হবে না। মনে করবেন, আজকের পুরো দিনটাই আপনার। তাই দিনটির সঠিক ব্যবহার করুন এবং যথাযথভাবে উপভোগ করুন। কাজের মাধ্যমে প্রতিটি দিনকে স্মরণীয় করে রাখুন। জাপানিদের মতে, ইকিগাইয়ের মূল রহস্য হচ্ছে ইকিগাইয়ের নিয়ম-কানুন মেনে চলা। অর্থাৎ জীবনকে সুন্দর করা ও দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য আপনার জীবনের ইকিগাই খুঁজে বের করা এবং তা থেকে দূরে সরে না যাওয়া। এ জন্য আপনি যে কাজটিকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, সেই কাজটি করা। সূত্র: জাপান সরকারের ওয়েবসাইট, বিবিসি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সিএনবিসি