ভারতের বিহারে দুই দফার ভোটগ্রহণ শেষে প্রকাশিত বিভিন্ন বুথ-ফেরত সমীক্ষা বা এক্সিট পোলে যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, গতকাল শুক্রবার ভোট গণনার শুরু থেকেই সেই ধারা বজায় ছিল। বিপুল ভোটে জয়ের পথে এগিয়ে চলেছে বিজেপিসহ এনডিএ জোট।
গতকাল সন্ধ্যায় ভোটের ফল প্রকাশিত না হলেও গণনার হার অনুযায়ী কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট বিপুলসংখ্যক আসন পেতে চলেছে।
এই জোটে রয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল ইউনাইটেড-জেডিইউ এবং বিজেপিসহ আরও কিছু দল।
অন্যদিকে রাজ্য রাজনীতিতে প্রধান বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল¬ (আরজেডি), কংগ্রেস ও বামপন্থি দলগুলোর ‘মহাজোট’-এর একরকম ভরাডুবি হয়েছে।
বিবিসি হিন্দির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে এনডিএ জোট এগিয়ে আছে ২০১টি আসনে আর ‘মহাজোট’ এগিয়ে আছে ৩৬টি আসনে। অন্যরা এগিয়ে ছয়টি আসনে। বিহার বিধানসভায় মোট আসন ২৪৩টি।
বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এই নির্বাচনে অবশ্য প্রার্থী ছিলেন না। তিনি ২০০৬ সাল থেকে বিহার বিধান পরিষদের সদস্য, যেখানে সরাসরি নাগরিকদের ভোটে নির্বাচন হয় না। এ ছাড়া ‘স্টার’ প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা সম্রাট চৌধুরী এবারই প্রথম ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রথম থেকেই তিনি এগিয়ে আছেন।
বিরোধী মহাজোট যাকে সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরেছিল, সেই তেজস্বী যাদব ভোট গণনায় কখনো এগিয়ে যাচ্ছেন আবার কখনো সামান্য পিছিয়ে পড়ছেন। আরেক উপমুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা বিজয় কুমার সিনহা লক্ষ্মীসরাই আসনে প্রথম থেকেই এগিয়ে আছেন।
বিহারের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন চলে আসা দ্বিপক্ষীয় রাজনীতির বাইরে গিয়ে এবার বড় আকারে ভোটের ময়দানে নেমে ২৪৩টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিলেন ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক দল জন-সুরজ পার্টি। তারা এখন পর্যন্ত কোনো আসনেই এগিয়ে নেই।
ঘটনাচক্রে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে যখন প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন, তখন এই প্রশান্ত কিশোরই ছিলেন তার ভোট কুশলী। এর পরে পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এবং তামিলনাডুতে এম কে স্তালিনের নির্বাচনি বিজয়ও মি. কিশোরের পরামর্শেই সম্ভব হয়েছিল।
এদিকে জয় নিশ্চিত হতেই সমাজমাধ্যমে পোস্টে বিহারবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিনন্দনবার্তায় প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘সুশাসন, বিকাশ, জনকল্যাণ এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জয় হয়েছে।’ বিহারে শাসক জোটের এই সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক ও অভূতপূর্ব’ বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। মোদি লেখেন, ‘মানুষের এই রায় সাধারণ জনতার সেবা করার এবং বিহারের জন্য নতুন সংকল্পে কাজ করার শক্তি দেবে আমাদের।’
নীতীশ কুমার, চিরাগ পাসওয়ান, জিতনরাম মাঝি এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহাদের মতো এনডিএর শরিক নেতাদের শুভেচ্ছা জানান তিনি। একই সঙ্গে ওই পোস্টে বিহারের জন্য এনডিএর আগামীর রূপরেখারও আভাস দেন তিনি। মোদি লেখেন, ‘আগামী বছরগুলোতে আমরা বিহারের বিকাশ, পরিকাঠামোগত উন্নত এবং বিহারের সংস্কৃতিকে একটি নতুন পরিচয় দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাব।’ বিহারের তরুণ প্রজন্ম এবং নারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্যও নতুন সরকার কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
বিহারে এনডিএর অন্যতম শরিক নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতনরাম মাঝির বক্তব্য, নীতীশের ওপর ভরসা রেখেছেন বিহারবাসী। এই ফল তারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, ‘এই ফল হবে তা আমরা ধরেই নিয়েছিলাম। নীতীশ কুমার নারীদের উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। আমরা বলছিলাম ১৬০-এর বেশি হবে। আজ দেখা গেল, আমরা ২০০ ছাপিয়ে গিয়েছি। এটি সম্ভব হয়েছে, কারণ নীতীশের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রেখেছে।’

