মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


খালিদ বিন ওয়ালিদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

জলপরীর ছানা

খালিদ বিন ওয়ালিদ

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:১৩ এএম

জলপরীর ছানা

শীবপুর গ্রামের একজন জেলে মাছ ধরতে যাচ্ছে। পথে যেতে যেতে সে ভাবল, আজ গভীর নদীতে মাছ ধরতে যাবে। দারুচিনি দ্বীপের ধারে ভালো মাছ পাওয়া যায়। সে দ্বীপে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। নৌকায় উঠে সে দেখল নদীর জল শান্ত, রোদে চারপাশ ঝলমল করছে। সে ভাবল, আজকে অনেক মাছ পাওয়া যাবে। তাই সে অনেক খুশি। গান গাইতে গাইতে দাঁড় বাইতে বাইতে সে দারুচিনি দ্বীপে পৌঁছে দ্বীপের ধারে নৌকা ভিড়িয়ে রাখল। জেলে নদীতে জাল ফেললে প্রথমবার কোনো মাছ উঠল না। সে হতাশ না হয়ে দ্বিতীয় বার জাল ফেলল। জাল উঠিয়ে দেখল, মাছ নয়, ছোট একটি জলপরীর ছানা উঠেছে। জেলে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। এর আগে সে এমন মাছ কখনো দেখেনি। কোমর থেকে উপরের অংশ মেয়ের মতো, কোমর থেকে নিচের অংশ মাছের লেজের মতো। মাথায় সবুজ রঙের চুল। সে কাঁপাকাঁপা হাতে অচেতন ছানাটিকে জাল থেকে ছাড়ালো। মাছ রাখার পাত্রে রাখল। সে আর জাল না ফেলে বাসায় ফিরে এলো। 

জেলে সিদ্ধান্ত নিল, ছানাটি জমিদারের কাছে বিক্রি করবে। সেই মতো সেদিন বিকেলে সে জমিদার বাড়ির দিকে রওনা দিল। জমিদার বাড়িতে এসে দেখল, জমিদার সরোবরে গোসল করছে। সে কাছে গিয়ে বলল, ‘আপনাকে একটা আজিব মাছ দেখাতে এনেছি, বাবু। এমন মাছ আপনি কোনোদিন দেখেননি।’

-‘আজিব মাছ বলতে! কই দেখাও।’

জমিদারকে সে ছানাটি দেখাল। জমিদার বলল, ‘এটা তুমি কোথায় পেলে? এ যে জলপরীর ছানা।’

-‘দ্বীপের কাছে মাছ ধরতে গিয়ে পেয়েছি, ভাবছি আপনার কাছে বিক্রি করব।’

-‘আমি তোমাকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেব। ছানাটি আমাকে দাও।’

জেলে অবাক গলায় বলল, ‘এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা!’

-‘আরও লাগবে তোমার?’

-‘না, বাবু। কি বলেন, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দেখেছি কখনো?’

জমিদার এক হাজার স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ছানাটিকে কিনে নিল। জেলের সারা শরীরে খুশির ঢেউ খেলছে। কতদিন ভালো-মন্দ খাওয়া হয়নি। সে স্বর্ণমুদ্রা পেয়ে বাজারের দিকে গেল। দুটি স্বর্ণমুদ্রায় অনেক বাজার করল, গিন্নির জন্য শাড়ি-চুড়ি কিনল। গরুর গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে এলো সে। রাতে স্বপ্ন দেখল, এক জলপরী সারা সমুদ্রে সাঁতরে ঘুরছে। কেঁদে কেঁদে বলছে, ‘মারিয়ানা, আমার সোনা মা, কোথায় তুমি? মারিয়ানা, আমার সোনা!’

সকালবেলা জেলের মন ভার হলো। জলপরীর কান্নার দৃশ্য মন থেকে সরাতে পারছিল না সে। সে ভাবল, ছানাটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেবে। সকালে সে মাছ ধরতে না গিয়ে জমিদার বাড়িতে গেল। জমিদারকে সব কথা খুলে বলল। সে ছানাটি ফেরত দিতে অস্বীকার করল। বলল, ‘এটা আমি তোমার কাছ থেকে কিনে নিয়েছি, আর এটা আমার স্ত্রীর খুব পছন্দের, আমি দিতে পারব না।’

জেলে অনেক কাকুতি-মিনতির পর জমিদার বলল, ‘ঠিক আছে। তুমি আমার স্বর্ণমুদ্রা ফিরিয়ে দাও, তবেই ছানা ফেরত পাবে।’

-‘আমার দুটি স্বর্ণমুদ্রা খরচ হয়ে গেছে, বাকিটা আপনাকে ফিরিয়ে দেব।’

-‘বাকিটা না, পুরোটা লাগবে, নাহলে ছানা দেব না।’

-‘বাবু, আপনার কি অর্থের অভাব আছে? আপনার মঙ্গল হবে, ফিরিয়ে দিন।’

-‘আমার মঙ্গলের দরকার নেই। তুমি যাও, তো, বিরক্ত কর না।’

জেলে ব্যর্থ হয়ে বাসায় ফিরে এলো। সেদিন রাতেও সে একই স্বপ্ন দেখল। সে ভাবল, যে করে হোক দুটি স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করতে হবে। তাই সে বাড়ির সকল হাঁস, মুরগি বিক্রি করল। তিন দিনের কঠোর পরিশ্রমে দুটি স্বর্ণমুদ্রা জোগাড় করল সে। পুনরায় সে জমিদার বাড়িতে গেল। জমিদারকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ফেরত দিয়ে বলল, ‘আমাকে ছানাটি ফিরিয়ে দিন। আমি পাঁচ দিন ধরে একই স্বপ্ন দেখেছি। আমার স্বর্ণমুদ্রা লাগবে না।’

-‘তোমার তো সাহস কম না, প্রতিদিন এসে আমাকে বিরক্ত কর।’

-‘বাবু, আমাকে ছানাটি ফিরিয়ে দিন, আপনার বাড়ি আর আসব না।’

জেলের সততা দেখে জমিদার খুশি গলায় বলল, ‘একটা ছোট ছানার জন্য এক হাজার

স্বর্ণমুদ্রার মায়া ত্যাগ করলে? স্বর্ণমুদ্রা আমার লাগবে না, এগুলো তুমিই রাখ। তোমার সততার পুরস্কার।’

জেলে অসম্মতি জানালেও, জমিদার মুদ্রা ফেরত নিল না। পরদিন জেলে মাছ ধরতে গিয়ে ছানাটিকে নদীর জলে ছেড়ে দিল। সে অনেক মাছও পেল। রাতে স্বপ্ন দেখল, জলপরীরা নেচে-গেয়ে আনন্দ করছে। সবাই সুর-গান ধরেছে, মজা লেগেছে, মজা লেগেছে, মারিয়ানা ফিরে এসেছে।

 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!