ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

জা না - অ জা না

নদী কেন এঁকেবেঁকে চলে

চাঁদের বুড়ি প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:১৫ এএম

বাচ্চারা, কখনো যদি নদীর পার ধরে হাঁটতে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে নদীগুলো সাপের মতো কেমন করে এঁকেবেঁকে চলে! তখন নিশ্চয়ই মাথায় প্রশ্ন আসে নদী কেন এঁকেবেঁকে চলে, সোজা পথে চলতে পারে না? এর পেছনে রয়েছে মজার এক বিজ্ঞান। আসলে নদীর জন্ম হয় পাহাড়ের কোলে। বৃষ্টির পানি বা বরফ গলে যখন দলে দলে নিচের দিকে ছুটে আসে, তখনই তৈরি হয় নদী। শুরুতে পাহাড়ের খাড়া ঢালে পানি ছুটে যায় সোজা গতিতেই, কিন্তু সমতলে এসে নদীর গতি কমে যায়। এখানেই সে ধীরে চলতে শুরু করে, আর তখনই শুরু হয় তার আঁকাবাঁকা পথচলা। পানি যখন ধীরে চলে, তখন সে হেলেদুলে একটু বামে যায়, একটু ডানে যায়। এভাবে চলতে চলতে নদীর বাঁক তৈরি হয়। অনেক নদীতেই বিশাল আকারের, গোল ঘূর্ণায়মান বাঁক দেখা যায়। এই বাঁকগুলো নিজে থেকেই তৈরি হয়। কোথাও কোথাও বাঁকগুলো আকারে ছোট হতে পারে। আবার অনেক বড় এলাকাজুড়েও থাকতে পারে। নদীর এই এঁকেবেঁকে চলার স্বভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সমতল জায়গায় বা যেখানে খুব সামান্য ঢাল আছে। কারণ, যদি খাড়া ঢাল থাকত, তবে পানি সোজা নিচের দিকে খুব দ্রুত ছুটত; কিন্তু ঢাল কম থাকায় পানি সোজা না গিয়ে আঁকাবাঁকা পথে চলতে বাধ্য হয়। নদীর এই বাঁকগুলো তৈরি হয়, কারণ পানি কখনোই এক জায়গায় স্থির থাকে না। এটি সব সময় ছুটে চলে এবং নদীর তলদেশ ও পাড়ের মাটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত ধাক্কা খায়।

নদীর তলার গঠন কেমন এবং পানির স্রোতে কতটা জোর আছে, এই দুটি জিনিসের কারণেই নদীতে এই আঁকাবাঁকা বাঁকগুলো তৈরি হয়। আরও সহজভাবে বললে,  নদীর বাঁক তৈরি হয় ক্ষয় আর জমাট নামক দুই বন্ধুর কারণে। বাঁকের বাইরের দিকে নদীর স্রোত থাকে অনেক জোরালো। এই জোরে পানি পাড়ের মাটি ঠেলে ঠেলে কেটে ফেলে। যত মাটি কাটে, বাঁক তত বড় হয়। অন্যদিকে নদীর বাঁকের ভেতরের দিকটা থাকে শান্ত। এখানে স্রোত কম, তাই পানি তার সঙ্গে আনা বালু, কাদা এবং পলি এখানে নামিয়ে দেয়।

এতে ভেতরের দিকটা ধীরে ধীরে উঁচু হয়ে যায়। এই দুই বিপরীত কাজÑক্ষয় আর জমাট, একসঙ্গে নদীর বাঁককে আরও স্পষ্ট করে তোলে, আর নদী আরও এঁকেবেঁকে  এগোতে থাকে। কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়, নদী একবার বাঁক নিলেই যে সে চুপচাপ থাকবে, তা কিন্তু নয়! অনেক সময় বাঁকের বাইরের দিক এতটাই ভেঙে যায় যে, তখন নদীর পুরোনো বাঁকটা মূল স্রোত থেকে আলাদা হয়ে পড়ে, আর চাঁদের মতো আকৃতি নিয়ে তৈরি করে একটি অক্সবো হ্রদ (যা নদীর একটি দীর্ঘ বাঁক বা ম্যান্ডার কেটে ফেলার ফলে তৈরি হয়) ।