ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

গিরগিটি যখন বন্ধু হয়

শাহজাদা হাশেম
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৪:৫১ এএম

তোমরা যারা মজাদার অ্যানিমেশন সিনেমা দেখতে চাও, তাদের জন্য নিয়ে এসেছি ২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লিও’ সিনেমার গল্প! এই সিনেমাটি তোমরা নেটফ্লিক্সে দেখতে পাবে। এটা এমন একটা সিনেমা যেখানে অনেক হাসি, গান ও দারুণ কিছু শেখার মতো বিষয় আছে। সিনেমাটা একজন বুড়ো গিরগিটি এবং একদল ছোট বন্ধুর খুবই মিষ্টি একটা জার্নি।

গল্পের মূল চরিত্রের নাম লিও। লিওর বয়স ৭৪ বছর। সে আসলে একটা ‘তুয়াটারা’ গিরগিটি, যা দেখতে অনেকটা সাধারণ গিরগিটির মতোই। সে ফ্লরিডার এক এলিমেন্টারি স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসরুমের একটি কাঁচের বাক্সে তার বন্ধু স্কার্টল নামের কচ্ছপের সঙ্গে বহু দশক ধরে থাকে। বছর বছর ধরে সে ছোট ছোট বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা, তাদের সমস্যা, তাদের জীবনের সব কিছু দেখেছে। তার জীবনটা খুব সাধারণ। কিন্তু লিও একদিন হঠাৎ জানতে পারে যে, তুয়াটারা সাধারণত ৭৫ বছর বাঁচে। এই কথা শুনে লিও একটু ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, ‘হায়! আমার জীবনের আর মাত্র এক বছর বাকি আছে! আমি তো বাইরে গিয়ে আসল পৃথিবীটাই দেখলাম না!’ যতই সে এসব ভাবে, ততই তার মন খারাপ হয়। তাই সে ঠিক করে, যে করেই হোক এই কাঁচের বাক্স থেকে তাকে পালাতে হবে। ঠিক সেই সময় তাদের প্রিয় শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যান। তার বদলে ক্লাসে আসেন নতুন একজন বদলি শিক্ষক। তার নাম  মিসেস ম্যালকিন। তিনি খুবই কঠোর।  স্কুলে এসেই তিনি একটা নতুন নিয়ম চালু করলেন, ক্লাসের পোষা প্রাণী মানে লিও অথবা স্কার্টলকে প্রত্যেক সপ্তাহে একজন করে ছাত্র-ছাত্রীর বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে, যাতে তারা দায়িত্ব নিতে শেখে।

লিও ভাবে, এটাই তার পালানোর সেরা সুযোগ! প্রথম যখন একজন ছাত্রী লিওকে বাড়িতে নিয়ে যায়, তখন সেখান থেকে পালানোর চেষ্টার সময় সে ভুল করে কথা বলে ফেলে! মেয়েটি অবাক হয়ে দেখে যে গিরগিটিটি কথা বলতে পারে! লিও তখন তাকে অনুরোধ করে এই গোপন কথা কাউকে না বলতে। পালানোর বদলে, লিও মেয়েটির জীবনের সমস্যা শুনে তাকে খুব ভালো একটি পরামর্শ দেয়। 

এরপর একে একে ক্লাসের সব বাচ্চা লিওকে বাড়িতে নিয়ে যায়। লিও প্রত্যেকটি বাচ্চার কথা শুনে, তাদের ছোট ছোট সমস্যার সমাধান করার জন্য গোপন পরামর্শ দেয়। সবার কাছে সে হয়ে ওঠে একজন আস্থাভাজন বন্ধু। বাচ্চারা শুরুতে জানতে পারে না যে লিও সবার সঙ্গে কথা বলে। সবাই ভাবে লিও শুধু তার সঙ্গেই কথা বলছে এবং তারই বিশেষ বন্ধু। কিন্তু যখন তারা সবাই জানতে পারে যে লিও সবার সঙ্গেই কথা বলে, তখন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। এর মাঝে কঠোর মিসেস ম্যালকিনও জানতে পারেন যে লিও কথা বলতে পারে। শেষ পর্যন্ত, লিও এবং বাচ্চারা কীভাবে তাদের সমস্যা মেটায় এবং মিসেস ম্যালকিনকে বুঝতে শেখায় যে বাচ্চাদের জীবনে শুধু নিয়ম নয়, ভালোবাসা ও উৎসাহের প্রয়োজন- সেটা জানতে হলে দেখতে হবে এই মজার সিনেমাটি।

‘লিও’ সিনেমাটির ধারণা এবং নির্মাণ শুরু হয় মূলত কমেডি অভিনেতা অ্যাডাম স্যান্ডলার এবং তার প্রযোজনা সংস্থা হ্যাপি ম্যাডিসন প্রোডাকশনসের হাত ধরে। অ্যাডাম স্যান্ডলার নিজেই এই সিনেমার অন্যতম লেখক। ২০১৬ সালে প্রথম এই অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র তৈরির খবর প্রকাশিত হয়, যেখানে স্যান্ডলার প্রযোজনা, লেখা এবং মূল চরিত্রের কণ্ঠ দেওয়ার দায়িত্ব নেন। সিনেমাটি নির্মাণ করেছে নেটফ্লিক্স অ্যানিমেশন। দীর্ঘ নির্মাণের পর ২০২৩ সালের ২১ নভেম্বর ছবিটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় এবং দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা লাভ করে।

এই সিনেমার সবচেয়ে ভালো দিক হলো এর সহজ সরল শিক্ষাগুলো। লিও বাচ্চাদের শেখায়, নিজে যেমন, তেমন ভাবেই মেনে নিতে হয়; মন খারাপ হলে কারো সঙ্গে কথা বলতে হয়; আর পৃথিবীর সবাই আলাদা, তাই তাদের আলাদাভাবে সম্মান দিতে হয়। তাহলে আর দেরি কেন? তুমিও তোমার বন্ধুদের সঙ্গে ‘লিও’ দেখে নাও আর দেখ এই বুড়ো গিরগিটিটা তোমাদের কী মজার মজার বুদ্ধি দেয়!