ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

এক মাসে গ্রাহক কমেছে ৩৫ লাখ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৪:৪৮ এএম

মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) পরিধি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। চলতি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এমএফএসে লেনদেনের পরিমাণ বাড়লেও গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। এ মাসে এমএফএসে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। তার আগের মাস আগস্টে লেনদেন হয়েছিল এক লাখ ৫১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। এক মাসে লেনদেন বেড়েছে ২ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। তবে একই সময়ে গ্রাহক কমেছে ৩৫ লাখ ২ হাজার জন। ‎খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএসের মাধ্যমে এখন নানা সেবা দেওয়া হয়। ফলে দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঠিক কত নাগরিক এমএফএসের আওতায় এসেছে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে প্রতিটি পরিবারেই সেবাটি পৌঁছে গেছে বলা যায়।

‎বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। আগের মাস আগস্টে লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গত বছরের ডিসেম্বরে এক লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। ‎বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা বিতরণ, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। সে-কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাধ্যমটি। দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, নগদসহ ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আছে।

‎বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে এমএফএসে গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৮ হাজার জন। এর মধ্যে গ্রামে গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি এক লাখ এবং শহরে গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ১৬ লাখ। তার আগের মাস আগস্টে ১৪ কোটি ৫৩ লাখ ২ হাজার জন। সেপ্টেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ। এদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৩৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। এর মধ্যে এক হাজার ৭২৯ কোটি টাকা এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, যা মোট রেমিট্যান্সের ৪.৯০ শতাংশ। কিন্তু পাঁচ বছর আগেও এই হার ছিল ০.৯৮ শতাংশ। কারণ ২০২০ সালের মে মাসে ১৮ হাজার ২২৫ কোটি টাকা রেমিট্যান্সের মধ্যে মোবাইলে আসে ১৮০ কোটি বা মোট রেমিট্যান্সের ০.৯৮ শতাংশ। অর্থাৎ ক্রমেই বাড়ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ। হিসাব অনুযায়ী পাঁচ বছরের ব্যবধানে মোবাইলে প্রবাস আয় বেড়েছে ৮১৫ শতাংশ। প্রবাসীদের জন্য রেমিট্যান্স পাঠানোর একটি শক্তিশালী ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে বিকাশ। এখন পর্যন্ত দেশে থাকা প্রিয়জনদের ৪০ লাখের বেশি বিকাশ অ্যাকাউন্টে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বর্তমানে বিশে^র ১৪০টির বেশি দেশ থেকে ১১০টি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরের (এমটিও) মাধ্যমে বাংলাদেশের ২৫টি শীর্ষ বাণিজ্যিক ব্যাংকে রেমিট্যান্স সেটেলমেন্ট হয়ে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে প্রাপকের বিকাশ অ্যাকাউন্টে।

‎‎বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় বছরে এমএফএসে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪১৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে ব্যক্তিপর্যায়ের লেনদেন। এরপরে এগিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মার্চেন্ট পেমেন্ট, বেতন পরিশোধ, পরিষেবা বিল, সরকারি ভাতা, টকটাইম ও প্রবাসীয় আয়সংক্রান্ত লেনদেন। ‎হাতের মোবাইলটিই এখন একটি ব্যাংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে মোবাইল ফোন। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো এমএফএস মাধ্যমে প্রতিদিন এখন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। ‎এসব লেনদেনে অনেক সময় কারো সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ গ্রাহক নিজেই নিজের হিসাবে টাকা জমা করে অন্যকে পাঠানোর পাশাপাশি কেনাকাটাও করতে পারেন। যেমনÑ মোবাইল ফোনে রিচার্জ, বিভিন্ন কেনাকাটা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া ও পরিষেবার বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন অর্থ স্থানান্তর, প্রবাসী আয় গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও বৃত্তি বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদান এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব সেবা।