ঢাকা মঙ্গলবার, ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

আবেদন দেড় হাজার, নিষ্পত্তি ৯০০

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২৫, ০৫:৫৮ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠনের জন্য উদ্যোগ নেয়। এ সুবিধা নিতে এক হাজার ৫১৬ আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত ৩০০ গ্রুপের ৯০০টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নীতি সহায়তা পাওয়ার মধ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি তাদের সুবিধাভোগীরাও ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

গত রোববার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। সভায় আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

জানা গেছে, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত জানুয়ারিতে বিশেষ ব্যবস্থায় ঋণ পুনঃতপশিলের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো নীতিমালা না করে শুরুতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে আবেদন চাওয়া হয়। এ কমিটি মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল ও পুনর্গঠনের সুযোগ দেয়।

তবে নির্দিষ্ট কোনো সার্কুলার জারি না করে কমিটির মাধ্যমে দেওয়া সুবিধা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ আছে, অনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ আমলের বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের নামও তালিকায় তোলা হয়। এ নিয়ে নানা সমালোচনার পর সম্প্রতি বিশেষ সুবিধা নিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত সেপ্টেম্বরে জারি করা সার্কুলার অনুযায়ী, জুন পর্যন্ত খেলাপি হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আবেদন করতে পারবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দুই শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করতে পারবে। এই ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ১০ বছর। ঋণ নিয়মিত হলে শুরুতে দুই বছর ঋণ পরিশোধে বিরতি সুবিধা পাওয়া যাবে। পরে নভেম্বরে আরেকটি সার্কুলার জারি করে বলা হয়, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ বিশেষ সুবিধার আওতায় আবেদন করা যাবে।

সভায় উপস্থাপন করা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক হাজার ৫১৬টি আবেদনের বিপরীতে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পুনঃতপশিল সুবিধা চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০টি গ্রুপের ৯০০টি আবেদন নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো ২৫০টি ঋণ আবেদন বাস্তবায়ন করেছে, যার মধ্যে বাস্তবায়ন করা অর্থ পরিমাণ ২৬ হাজার ১১৪ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে ব্যাংকগুলোর বাস্তবায়ন অগ্রগতি আশানুরূপ নয়। একই সঙ্গে এ খাতে খেলাপি ঋণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত বিভিন্ন কারণে বহু ঋণগ্রহীতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের ঋণ পরিশোধে সুবিধা দিতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাও জরুরি হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ঋণগ্রহীতার বিষয়ে নীতি সহায়তাসংক্রান্ত বাছাই কমিটি সুপারিশ এবং বিআরপিডি সার্কুলারের আওতায় ব্যাংকগুলোর জমা পড়া আবেদনের দ্রুত নিষ্পত্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এতে আরও বলা হয়েছে, নীতি সহায়তা দ্রুত কার্যকর হলে খেলাপি ঋণের হার কমার পাশাপাশি ঋণ আদায়ও ত্বরান্বিত হবে। এতে একদিকে ব্যাংকিং খাতে তারল্য চাপ কিছুটা কমবে, অন্যদিকে ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ আরও স্থিতিশীল হবে। তাই দেশের অর্থনীতির প্রবাহ সচল রাখা ও খেলাপি ঋণ সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট নীতি সহায়তা কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়।

মোট এক লাখ ৯৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার মধ্যে শীর্ষ ২০ গ্রুপই এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃতপশিল সুবিধা চেয়ে আবেদন করেন। এর মধ্যে মাগুরা গ্রুপ ১৪ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা, এস আলম ১২ হাজার ৭৬৬ কোটি, বসুন্ধরা গ্রুপ ১১ হাজার ১৬৪ কোটি, নাসা ৬ হাজার ৯১৯ কোটি, জিপিএইচ ছয় হাজার ৮৯৪ কোটি এবং সাদ মুসা পাঁচ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া চার হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার নীতি সহায়তা চায় ওপেক্স সিনহা গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ চার হাজার ৪৬৩ কোটি, নাবিল চার হাজার ১৬১ কোটি, পারটেক্স চার হাজার ৬২ কোটি, প্রভিটা গ্রুপ তিন হাজার ৪০৬ কোটি, রুবি ফুড তিন হাজার ৩৫৭ কোটি, আহসান তিন হাজার ২৮ কোটি, আনোয়ার খান মর্ডান দুই হাজার ৮৫৭ কোটি, সানম্যান গ্রুপ দুই হাজার ৫৪১ কোটি, আব্দুল মোনেম দুই হাজার ৫১১ কোটি, ডার্ড গ্রুপ দুই হাজার ২১৫ কোটি এবং জেএমআই গ্রুপ দুই হাজার ২০১ কোটি টাকার পুনঃতপশিলের জন্য আবেদন করে।