ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন

প্রার্থীদের ঋণখেলাপি তথ্য প্রস্তুতের নির্দেশ

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০২:৪৮ এএম

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীদের ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সঠিক, নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্বাচনকালীন ঋণতথ্য যাচাইকে আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিশেষ গুরুত্বসহকারে তথ্য হালনাগাদ ও যথাযথ প্রতিবেদনের ওপর জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত রোববার ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব ওঠানো হয়। এ সময় ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

সূত্র জানায়, প্রার্থীদের খেলাপি অবস্থা নির্ধারণে সঠিক তথ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পূর্ণাঙ্গ পরিচিতিমূলক তথ্য, ঋণস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য এবং প্রতিটি অ্যাকাউন্টের হালনাগাদ প্রতিবেদন নির্বাচনকালীন ডেটাবেসকে শক্তিশালী করবে। তাই এ ধরনের নির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি ও পরিদর্শন বিভাগের ঋণ শ্রেণীকরণ-সংক্রান্ত সময়ে জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী সব ঋণতথ্য সঠিক শ্রেণিমানে রিপোর্ট করতে হবে। একই সঙ্গে সিআইবি ডেটাবেসে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা সব ধরনের ঋণের তথ্য নিশ্চিত করতে ঋণগ্রহীতার যেকোনো অবহিত না করা ঋণ থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে সিআইবিতে জানাতে বলা হয়। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের নন-ট্রানজেকশনাল ফি/চার্জ (যেমনÑ বার্ষিক ফি, লেট ফি ইত্যাদি) বকেয়া থাকলেই কাউকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। এমতাবস্থায় ক্রেডিট কার্ডে কোনো লেনদেনজনিত বকেয়া না থাকলেও শুধু অপরিশোধিত ফি বা চার্জের কারণে যদি কোনো গ্রাহককে সিআইবি ডেটাবেসে ‘খেলাপি’ হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে, তাহলে সেই গ্রাহকের শ্রেণীকরণ ঠিক করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সিআইবি ডেটাবেসে ঋণগ্রহীতা ও সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিমূলক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ট্যাক্সপেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর (টিন) তথ্য দ্রুত হালনাগাদ করতে হবে। তথ্য হালনাগাদ না থাকলে ঋণখেলাপি নির্ধারণে জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণের কারণে হাইকোর্টে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইনজীবী নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ বা আদালতে নিষ্পত্তি করা মামলার তথ্য দ্রুত সিআইবিকে জানাতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচনকালীন ঋণতথ্য প্রস্তুতি হবে আরও নির্ভুল, আধুনিক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক, যা ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, প্রার্থী হওয়ার সাত দিন আগে কারো ঋণ নিয়মিত থাকলেই চলবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি কাউকে খেলাপি বলে, তার প্রার্থিতা বাতিল হবে। তিনি জানান, সংশোধিত যে আদেশ জারি হয়েছে, তাতে বলা আছে, নির্বাচিত হওয়ার পরও যদি কারো ঋণখেলাপি বা অন্য কোনো মিথ্যা তথ্য দেওয়ার প্রমাণ মেলে, তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া অনেক প্রার্থী ঋণখেলাপি। এসব ব্যক্তি ইতোমধ্যে খেলাপি থেকে নাম মুছতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেকেই এরই মধ্যে বিভিন্ন সুবিধার মাধ্যমে খেলাপি থেকে নিজেদের নাম কাটাতে পেরেছেন।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০টি আসনের বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে এসব প্রার্থী ঋণখেলাপি কি না, সেই তথ্য সিআইবি থেকে যাচাই-বাছাই করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যাচাই-বাছাইয়ে অন্তত ১১৮ জন প্রার্থী ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিলেন।

আইন অনুযায়ী, ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তাই মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি থাকলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ঋণখেলাপের কারণে ওই সময়ে ১১৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল করা হয়।