গোপালগঞ্জে এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) পদযাত্রা ঘিরে সংঘর্ষের তিন দিন পর কারফিউ শিথিলে শহরের জনজীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করে জেলা প্রশাসন। তবে রাত ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত আবারও কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, কিছু দোকানপাট খোলা, মানুষজন কাঁচাবাজারে কেনাকাটা করছেন এবং রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করছে। তবে এখনো পুরোপুরি স্বস্তি ফিরে আসেনি শহরজুড়ে। রিকশাচালকরা রাস্তায় বের হলেও যাত্রী না থাকায় আয় করতে পারছেন না।
রিকশাচালক রহমত আলি বলেন, ‘তিন দিন ঘরবন্দি ছিলাম। বাড়িতে চাল-ডাল নেই। ছেলে-মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে আজ (গতকাল) রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় মানুষ নেই, রোজগারও নেই। এভাবে কতদিন চলব বুঝতে পারছি না।’
তার মতো আরও অনেক দিনমজুর ও রিকশাচালক একই দুর্ভোগে পড়েছেন। তারা চান, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হোক।
এদিকে সংঘর্ষ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। শহরে চলছে নিয়মিত টহল। জেলাজুড়ে বিরাজ করছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
এ পর্যন্ত এনসিপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর, কাশিয়ানী, মুকসুদপুর, কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া থানায় পৃথকভাবে মোট ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে মোট ৩ হাজার ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। নতুন করে দায়ের হওয়া মামলায় ৪০৪ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ আনা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, ‘বৌলতলী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শামিম আল মামুন বাদী হয়ে নতুন মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখসহ আরও সাড়ে ৩ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’
এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ২৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সদর থানায় ৯৯ জন, কাশিয়ানী থানায় ৫৭ জন, মুকসুদপুরে ৮৮ জন, টুঙ্গিপাড়ায় ২৭ জন ও কোটালীপাড়ায় ২২ জন রয়েছেন।
এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় গোপালগঞ্জ সদর থানায় ৫৭৫ জন, কাশিয়ানীতে ৩৭০ জন এবং কোটালীপাড়ায় ১ হাজার ৬০০ জনকে আসামি করে পৃথক মামলা করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভা ঘিরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। দিনব্যাপী সংঘর্ষে পাঁচ যুবক নিহত হন এবং পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসন শহরে কারফিউ জারি করে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে মোতায়েন করে।
জেলার সার্বিক পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও জনমনে আতঙ্ক ও উদ্বেগ এখনো কাটেনি। বিশেষ করে নিরীহ দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষজন রয়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
আপনার মতামত লিখুন :