ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

বললেন মির্জা ফখরুল

’৭১কে ভুলিয়ে দিতে চায় স্বাধীনতাবিরোধীরা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০১:২৬ এএম

স্বাধীনতাবিরোধীরা ১৯৭১ সালকে ভুলিয়ে ’২৪-এর জুলাইয়ের আন্দোলনকে বড় করে দেখাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের কোনো সুযোগ নেই। বর্তমান সংকট অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি করেছে। মিথ্যা বলে জাতির সঙ্গে প্রতারণা না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম আয়োজিত ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭১ সালকে ভুলিয়ে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। এই দেশ, এই ভূখ- সেদিন একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে এটা আমাদের মনে রাখতে হবে সব সময়। ১৯৭১ হচ্ছে আমাদের অস্তিত্বের কথা, আমাদের পরিচিতির কথা, আমাদের স্বাতন্ত্র্যের কথা।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা শক্তি, যারা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছিল, তারা ১৯৭১কে এখন নিচে নামিয়ে দিতে চায়। তারা শুধু ’২৪-এর জুলাইয়ের যে আন্দোলন, তাকে বড় করে দেখাতে চায়। একদিন নয়, আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাজিত করার জন্য, হাসিনাকে উৎখাতের জন্য ১৫ বছর সংগ্রাম করেছি। মুক্তিযোদ্ধারা সংগ্রাম করেছেন। আজকে যদি কেউ দাবি করেন, এককভাবে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সেটা মানতে রাজি নই। সেদিন আপনারা মুক্তিযুদ্ধকে গোলমাল বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।’
বিএনপির ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের পার্টির প্রধান এবং এ দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে থাকতে হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাজা হয়েছিল ১০ বছর। আমাদের ইলিয়াস ভাইসহ ১ হাজার ৭০০ জনকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার মানুষকে খুন করে একটা ফ্যাসিবাদী দানবীয় রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আমরা সেটার বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আজকে এখানে বিভক্তি আনতে চাই না। কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু কিছু শক্তি, কিছু কিছু মানুষ এখানে বিভক্তি আনতে চায়। ১৯৭১ সালকে যারা ভুলিয়ে দিতে চায়, তাদের লক্ষ্য একটাই যে তারা ১৯৭১কে অস্বীকার করতে চায়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা আমাদের হত্যা করছিল, তাদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে আপনারা এ দেশের মানুষকে হত্যা করেছিলেন এবং আমাদের বহু জ্ঞানী ব্যক্তিকে সেদিন হত্যা করে বধ্যভূমিতে নিয়ে ফেলে দিয়েছিলেন। আমরা এগুলো ভুলিনি। ১৯৭৫ সালের পট পরিবর্তনের পর, ৭ নভেম্বরের পর, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সংস্কার শুরু করেছিলেন। প্রথমে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার, এক দলের শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা করেছিলেন। শেখ মুজিবের সেই ভয়াবহ পাঁচ বছর দুঃশাসনের পরে জিয়াউর রহমানই আমাদের একটা নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্ট ফর্ম গভর্মেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম গভর্মেন্টে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নতুন নির্বাচন করে তিনি সেদিন তত্ত্ববধায়ক সরকারের বিধান চালু করেছিলেন, যার অধীনে চারটা নির্বাচন হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে সবাই গ্রহণ করেছিল। এই শেখ হাসিনা সেটাকে বাতিল করে মানুষের ভোট প্রয়োগের যে অধিকার, সেটাকে খর্ব করে দিয়েছিল।’
বিএনপিকে নির্বাচনমুখী দল উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রথম থেকে আমরা নির্বাচনের কথা বলছি। গণঅভ্যুত্থানের পর চার-পাঁচ দিনের মধ্যে সভা করে আমরা বলেছিলাম, তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন চাই। কেন বলেছিলাম? নির্বাচনের মাধ্যমে একটা পার্লামেন্ট গঠিত হলে আজকে যে অপশক্তিগুলো মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে, সেগুলো দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ পেত না। আপনারা যেভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, জনগণকে বোকা বানিয়ে এই সংস্কার করতে চান, সেটা অবশ্যই আমাদের জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, “এই যে জুলাই সনদ আমরা পাস করেছি, আমাদের মনে আছে, পার্লামেন্টের সামনে বৃষ্টি হচ্ছিল। ছাতা ধরে পাস করেছি, সই করেছি। ওইখানে আমরা যে বিষয়গুলো সই করেছি, সেখানে বলা হয়েছিল যে সব রাজনৈতিক দল যেগুলোতে একমত, সেগুলো সব সই হয়ে গেল। এমনকি যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না, তারা সেটাকে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ হিসেবে লিপিবদ্ধ করবে। আর এখন ওনারা যেটা প্রস্তাব উত্থাপন করলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে, সেখানে ‘নোট অব ডিসেন্টের’ কোনো কথাই নাই। তার পরও দেখেন, একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা একটা প্রেস কনফারেন্স করে বলেছি। আমরা রাস্তায় যাইনি। আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো প্রতিবাদ করিনি। আমরা প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি ঘেরাও করিনি বা নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করিনি। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার। আমরা যেটা সই করেছি, আমরা অবশ্যই সেটার দায়দায়িত্ব গ্রহণ করব। কিন্তু যেটা আমরা সই করিনি, সেটার দায়দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব না।”
পিআর হবে কি না, সেটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচন যেটা ঘোষণা করেছেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, তখনই নির্বাচন হতে হবে। পিআর হবে কি হবে না, ওটা আগামী পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। গণভোটের কথা বলেছে, আমরা রাজি হয়েছি। গণভোটের কোনো প্রয়োজন ছিল না, তারপর আমরা রাজি হয়েছি। আমরা বলেছি, নির্বাচনের দিনই গণভোট করতে হবে। আলাদাভাবে গণভোট করতে হলে প্রায় হাজার কোটি টাকার ওপরে খরচ হবে। তো নির্বাচনে দুটো ব্যালট থাকবে। একটি ব্যালটে গণভোটের কথা থাকবে, আরেকটাতে সংসদ নির্বাচন। এটা একটা সুন্দর কথা। এটা না করে এখন আবার তারা বলছে, গণভোট আগে হতে হবে, তারপরে নির্বাচন। এটা তো আপনারাই বলছেন। আমরা তো নির্বাচনোর পেছানোর কথা একবারও বলিনি। আমরা বারবার বলছি যে নির্বাচনটা অতি দ্রুত করতে হবে। মানুষকে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করবেন না।’
শেখ হাসিনা প্রসঙ্গে ভারত সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভারত সরকারকে খুব পরিষ্কার করে আমরা বলতে চাই, হাসিনাকে আপনারা বাংলাদেশে ফেরত দিন এবং বাংলাদেশের আইনে তাকে বিচারের মুখোমুখি করার ব্যবস্থা করে দিন।’
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।