আগামী রোববারের মধ্যে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনের দাবি না মানলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক আট দল। গতকাল বুধবার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে আট দলের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ফ্যাসিবাদী শক্তির নাশকতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে আট দলের নেতাকর্মীরা আজ বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী রাজপথে অবস্থান করবেন।
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং আদেশের ওপর নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দফা দাবিতে কাল শুক্রবার দেশব্যাপী জেলা/মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল করবে আট দল।
এদিকে আগামী রোববার বেলা ১১টায় আন্দোলনরত আট দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হবে। বৈঠক শেষে ওই দিন দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন হবে। মুজিবুর রহমান বলেন, ‘রোববারের বৈঠকের আগে জনগণের দাবি মেনে নেওয়া না হলে সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার সামনে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুছ আহমদ, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমেদ, নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সারওয়ার কামাল আজিজি ও মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের আমির আবুল বাসেত, খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হাক্কানি, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
২৫ দল স্বাক্ষরিত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে একটি আদেশ জারি করতে এবং সেই আদেশের ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে জনগণের সম্মতি নেওয়ার সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কিন্তু সেই গণভোট কবে হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চায় ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হোক। অন্যদিকে জামায়াতসহ আট দল নভেম্বরেই গণভোটের দাবিতে আন্দোলন করছে।
গত ৩১ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন ওই সুপারিশ করলেও সরকার এখনো অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা করতে পারেনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ কে জারি করবে, কবে তা জারি হবে, সেই ফয়সালাও হয়নি। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মঙ্গলবার বলেন, ‘জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে তা স্পষ্ট হবে।’ তার পরদিন জামায়তসহ আট দল সরকারকে রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিল।
উল্লেখ্য, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবির ব্যাপারে অনড় অবস্থানে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থি আট দল। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে দেশে সংসদ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে না বলে গত মঙ্গলবারের সমাবেশ থেকে সতর্ক করেন তারা।
পল্টনে আয়োজিত সমাবেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ ইসলামপন্থি আটটি দলের শীর্ষনেতারা এসব কথা বলেন। যারা জুলাই বিপ্লব মানবেন না, তাদের জন্য ’২৬ সালে কোনো নির্বাচন নেই। ‘২৬ সালের নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি দিতে হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতেই হবে। এই আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা নেইÑ সমাবেশে বলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। তিনি ওই দিন জানান, সমাবেশ শেষে আলোচনার মাধ্যমে বৃহৎ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।
সংসদ নির্বাচনের দিনেই একসঙ্গে গণভোট আয়োজনের যে দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, সেটির বিরোধিতা করেন বক্তারা। এদিন সমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম দাবি করেন, ‘বাংলাদেশের ছাত্র-জনগণ, সর্বশ্রেণির মানুষ আজকে জুলাই ভিত্তি আইনি সনদ প্রথম চায়; তারপর জাতীয় নির্বাচন চায়। কিন্তু আপনারা যদি এই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার ব্যাপারে গড়িমসি করে থাকেন, আমাদের বাংলাদেশের তিন দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া, কিন্তু আপনারা পালাবেন কোথায়? আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেই দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এ ছাড়া কিন্তু আপনাদের পালাবার কোনো জায়গা নেই।’

