জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হবে আজ ১৩ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার। দিনটিকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যেকোনো ধরনের নৈরাজ্য কিংবা নাশকতা প্রতিরোধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি অভিযান, বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম। ঢাকা ও আশপাশের জেলায় নেমেছে বিজিবি। এ ছাড়াও বিভাগীয় শহরসহ সারা দেশের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। তবে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে থাকলেও গত তিন দিন ধরে অগ্নিসন্ত্রাস ও একের পর ককটেল বিস্ফোরণসহ চোরাগোপ্তা হামলায় জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। গতকাল বিকেল থেকেই ঢাকার প্রধান সড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কমে যেতে দেখা গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, শেখ হাসিনার রায়ের তারিখ কিংবা আওয়ামী লীগের কথিত লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে কোনো আতঙ্ক, শঙ্কা বা হুমকি নেই। এগুলো মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক প্রচার।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীর এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধানমন্ডি ৩২, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, কাকরাইল ও হাইকোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। একইসঙ্গে ঢাকার প্রবেশপথ ও বিভিন্ন মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি করা হচ্ছে কাগজপত্র। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার রাতের অভিযানে আওয়ামী লীগের ৪৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডিএমপির আটটি অপরাধ বিভাগ পৃথক অভিযান চালিয়ে আরও কয়েকজনকে আটক করে। এ ছাড়া মঙ্গলবার রাতেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভেনিউ, ফকিরাপুল, কাকরাইল, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোয় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। এসব হোটেলের অতিথিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পেশা যাচাই এবং ঢাকায় আসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হয়। কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত কি নাÑ তা যাচাই করতে মোবাইল ফোনও তল্লাশি হয়।
রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম জানান, ‘সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই আমরা হোটেল ও মেসে অভিযান চালাচ্ছি। গতরাতে কলাবাগানের একটি মেস থেকে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা নাশকতার পরিকল্পনায় ঢাকায় এসেছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।’ পুলিশ জানায়, সন্দেহভাজন কাউকে আটক করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য যাচাই করা হয়। কারো বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ থাকলে তা পুলিশের সিডিএমএস ডেটাবেজ থেকে মিলিয়ে দেখা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আগের মামলা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে যেকোনো ধরনের নাশকতা রোধে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কেউ নাশকতার চেষ্টা করলে তা কঠোরভাবে দমন করা হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
এদিকে বিদেশে থাকা আওয়ামী লীগের অ্যাক্টিভিস্টদের অনেকেই ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নাশকতার বিষয়ে জানালে দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আরও বাড়তে থাকে। তবে গোয়েন্দা পুুলিশের একাধিক কর্মকর্তারা বলছেন, ‘এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেসঙ্গে রেলপথ ও সড়ক পথসহ দেশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারে থাকবে।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, ফের ১৪ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো দেশব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। গত তিন দিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসন্ত্রাস ও ককটেলবাজির ঘটনা ঘটেছে। এমনকি বাসে অগ্নিসন্ত্রাসীদের দেওয়া আগুনে ঘুমন্ত অবস্থায় পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন গাড়ির চালক। এ ধরনের সন্ত্রাস-নাশকতার কারণে জনমনে বেশ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যদিও নাগরিকদের জানমালের সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
নিñিদ্র নিরাপত্তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে :
এদিকে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আজ রায়ের দিন ধার্য করার কথা রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের। এ উপলক্ষে ট্রাইব্যুনালে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেসঙ্গে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার এমনটা জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল প্রশাসন। এর আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট কম্পাউন্ড ও এর আশপাশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। গত রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন শাখা থেকে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) ড. মো. আতিকুস সামাদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, সুপ্রিম কোর্টের মালিকানাধীন জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ও প্রধান বিচারপতির প্রবেশপথসংলগ্ন ফোয়ারা এলাকায় বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে, যা সুপ্রিম কোর্ট ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। এ অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট কম্পাউন্ড, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, সুপ্রিম কোর্ট ও বিশেষ কোর্ট নিরাপত্তা বিভাগ, শাহবাগ থানার ওসি এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, তল্লাশি চৌকি ও মোবাইল টহল :
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লকডাউন ও সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। পাশাপাশি দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও ব্যক্তিদেরও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ঢাকার প্রবেশপথসহ প্রায় প্রতিটি বড় রাস্তায় বসানো হয়েছে বাড়তি চেকপোস্ট। চেকপোস্টগুলোয় সন্দেহভাজন ব্যক্তি, বস্তু ও যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এরইমধ্যে ঢাকার নির্বাচনি কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হয়েছে কয়েক হাজার বাড়তি সিসি ক্যামেরা। চলছে গোয়েন্দা নজরদারি। নির্বাচন নিয়ে গুজব ঠেকাতে কঠোর মনিটরিং চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয়।
আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে অর্থ জোগানদাতাদের খোঁজা হচ্ছে :
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলে মাথাপিছু দেওয়া হচ্ছে ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর হঠাৎ রাজধানীর সড়ক কিংবা দেশের অন্য কোনো স্থানে দেখা যায় কর্মী-সমর্থকদের ঝটিকা মিছিল। এসব মিছিল থেকে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর ঘটনাও ঘটেছে। মিছিল ছাড়াও গুপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ ও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেওয়া হচ্ছে। এ ঝটিকা মিছিলের জন্য কর্মী-সমর্থকদের টাকার বিনিময়ে আনা হচ্ছে বিভিন্ন জেলা থেকে। ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় গত ১০ মাসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ৩ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পুলিশ বলছে, এগুলো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, নাশকতার উদ্দেশ্যেই টাকা দিয়ে এসব কর্মসূচিতে লোক আনা হচ্ছে। গ্রেপ্তার হওয়া কর্মীদের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য। মিছিলের জন্য যারা টাকা দিচ্ছে, খুঁজে বের করা হবে তাদেরও।
লকডাউনে আতঙ্কের কিছু নেই, ৫০০ টাকায় স্লোগান দিচ্ছে নিরীহ রিকশাওয়ালা : ডিবিপ্রধান
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী যারা মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণ করে শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, এমন যাদের শনাক্ত করা হয়েছে তাদের আমরা গ্রেপ্তার করছি। যারা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে, ইন্ধন দিচ্ছে, অর্থ সহায়তা দিচ্ছে তাদেরও আমরা আইনের আওতায় আনছি।’ টাকা নিয়ে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা কিংবা হামলার ঘটনা ঘটাতে পারে, শঙ্কা বিশ্লেষকের। সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাধ্যমতো অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একার পক্ষে এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। তারা শুধু গ্রেপ্তারই করতে পারবে, কত গ্রেপ্তার করবে। নির্বাচনের আগে জনমনে স্বস্তি আনতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দল বা সংগঠনের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ বিশ্লেষকদের।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ১৩ নভেম্বরের লকডাউন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মো. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘যারা ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি বা অপতৎপরতা চালানোর চেষ্টা করছে, তাদের আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করে দমন করা হবে।’ গতকাল বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিবিপ্রধান বলেন, ‘রাজধানীতে নাশকতামূলক কর্মকা- পরিচালনাকারীদের পাশাপাশি তাদের নেপথ্যে যারা রয়েছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করছি। আজ (গতকাল) ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা বিভিন্ন উসকানি ও নির্দেশনা দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে ডিবি সতর্ক রয়েছে। আমরা দেখছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন উসকানি ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, তবে রাজপথে তাদের দেখা যায় না। এমনকি একজন নিরীহ রিকশাওয়ালাকে ৫০০ টাকা দিয়ে স্লোগান দিতে বলা হয়েছে, পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
রেলওয়ের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ :
এদিকে দেশে সাম্প্রতিক বিভিন্ন অগ্নিকা-ের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সব স্টেশন, ট্রেন ও স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। গতকাল রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ফাতেমা-তুজ-জোহরা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, দেশে সম্প্রতি সংঘটিত কিছু অগ্নিকা-ের মতো দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেললাইন, রেলসেতু, রেলওয়ে স্টেশন ও ট্রেনসহ সব স্থাপনায় দুষ্কৃতকারীদের সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
সারা দেশে খোলা থাকবে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-শপিংমল :
এদিকে লকডাউন কর্মসূচি হলেও ঢাকাসহ বাংলাদেশের সব দোকান, বাণিজ্য বিতান এবং শপিংমল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজও ঢাকাসহ দেশের সব দোকান, বাণিজ্য বিতান এবং শপিংমল যথারীতি খোলা থাকবে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সংগঠনটি।
‘নাশকতার শঙ্কায়’ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও থানায় থানায় নিরাপত্তা জোরদার :
আজকে লকডাউন কর্মসূচি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তরা ককটেল বিস্ফোরণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা জায়গায় পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঢাকায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে, ডিএমপির ৫০টি থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই কর্মসূচিকে ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই।
এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজধানীর বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দলের আজকের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অফিসগুলোতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে নাশকতার শঙ্কায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে প্রতিটি থানার সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৮ থেকে ১০ জন করে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সরকার সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলমও। তিনি বলেন, ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন নিয়ে সতর্ক আছে সরকার, আশঙ্কার কারণ নেই। কোনো ধরনের সন্ত্রাস সহ্য করা হবে না। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাবেন। লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। সম্ভাব্য নাশকতা প্রতিরোধে সাঁড়াশি অভিযান বাড়ানো হয়েছে।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশেদা রওনক খান বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা সক্রিয় হলে ভোটকেন্দ্র দখল, ভীতি সৃষ্টি কিংবা ভোটারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করার মতো কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়তে পারে। এতে সামগ্রিকভাবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এসব সন্ত্রাসী নিয়ন্ত্রণ করা যথেষ্ট নয়। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা, কমিউনিটি পুলিশিং সক্রিয় করা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণে বাধ্য করাই হবে টেকসই সমাধান।’

