ঢাকা শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫

জুলাই সনদ ও গণভোট

অগ্নিপরীক্ষায় বাংলাদেশের রাজনীতি

হাসান আরিফ
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৫, ১২:২৮ এএম
  • বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণে গণভোটে সুযোগও আছে ঝুঁকিও আছে
  • গণভোটের জনসচেতনতায় সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্যচিত্রে গুরুত্ব দেবে
  • রাজনৈতিক দলগুলো যদি বৈষম্যবিহীনভাবে অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে সনদ বাস্তবায়ন সংকটে পড়বে
  • উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে
  • সংস্কারে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে গণভোট, বলছেন বিশ্লেষকেরা
  • সনদ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও পারস্পরিক আস্থা বাড়বে
  • রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে না এলে সংস্কার অস্তিত্বহীন ঘোষণা হয়ে পড়ার ভয় রয়েছে

বাংলাদেশে চলতি বছরের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন একটাইÑ ‘জুলাই জাতীয় সনদ’। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে স্পষ্ট করে বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিনই অনুষ্ঠিত হবে গণভোট; আর এতে অনুমোদন মিললে বাংলাদেশ প্রবেশ করবে দুই কক্ষবিশিষ্ট নতুন সংসদীয় কাঠামোয়। উচ্চকক্ষ গঠনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি চালুর ঘোষণা, রাষ্ট্রপতির নীতিগত সম্মতি এবং গণভোট ঘিরে ডিজিটাল প্রচারে চলছে সরকারি প্রস্তুতি। সব মিলিয়ে দেশ এখন এক বড় রাজনৈতিক পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ, আইনগত জটিলতা ও সময়ের চাপ এই উদ্যোগকে যেমন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে, তেমনি বিশ্লেষকদের মতে এটি হতে পারে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্ত। গণভোটের জনসচেতনতার জন্য সরকার ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্যচিত্রের ওপর গুরুত্ব দেবে। এই বিষয়ে কাজ করছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। রাষ্ট্রপতি এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট আদেশ-অধ্যাদেশ তৈরির প্রস্তুতি চলছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ, সময়ের সংকট, আইনগত জটিলতা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতিÑ সব মিলিয়ে এটি বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট রাজনৈতিক পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সামনে এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের মুহূর্ত। জুলাই জাতীয় সনদ নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। তাদের মতে, এটি গণতন্ত্রের বিস্তার, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, নতুন কাঠামো ও নতুন রাজনৈতিক চুক্তির সম্ভাবনাÑ সবই তৈরি করছে। কিন্তু এর সফলতা নির্ভর করছে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরকে জায়গা দেওয়ার মানসিকতা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা এবং জনগণের আস্থার ওপর।

যদি সব পক্ষ দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক যুগের সূচনা করবে। আর যদি দলগুলোর পরস্পর অবিশ্বাস, সময়সংকট ও প্রশাসনিক দুর্বলতা সামনে আসে, তাহলে এই উদ্যোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। যদিও সিদ্ধান্তটি প্রায় চূড়ান্ত, তবু বাস্তব চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে বলেও বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

চার বিষয়ে এক প্রশ্ন :

গণভোটে চারটি বিষয় একত্রে একটি প্রশ্নে রাখা হবে। সেই প্রশ্ন হচ্ছেÑ আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নি¤œলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন? গণভোটে নাগরিকেরা এই চার বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নের উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবেন।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গণভোটের প্রচার নিয়ে সরকার ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে। এ জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় আর চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর কাজ করছে। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গণভোটের বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ডিজিটাল মাধ্যম ও তথ্যচিত্রের  ওপর গুরুত্ব দেবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ এখন অনলাইন মাধ্যমে সক্রিয় থাকে। তাই মূল সচেতনতার কাজ করা হবে ডিজিটাল মাধ্যমে। এর বাইরেও সরকারের নানা পরিকল্পলা রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছে।’

‘হ্যাঁ’ ভোটের পরিণতি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ : গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট যদি ‘হ্যাঁ’ সূচক হয়, তাহলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের নিয়েই একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করা হবে। এই পরিষদ সংসদের অংশ হিসেবেই কাজ করবে এবং প্রথম অধিবেশন শুরুর পর ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে।

পরিষদের কাজ শেষ হওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে, যা নি¤œকক্ষের (জাতীয় সংসদ) মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই জুলাই সনদের অঙ্গীকার অনুসারে সংবিধানে ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করা হবে, যাতে এটি দেশের শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর স্থায়ী অংশ হয়ে ওঠে।

গণভোট :

একই দিনে জাতীয় নির্বাচনÑ লাভ না ঝুঁকি : গণভোট নির্বাচনের দিনেই করার সরকারি প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। তবে এই প্রক্রিয়াকে সুবিধা বা ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছে সরকার। তাদের যুক্তি, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ব্যয় কমবে। আর ভোটারের অংশগ্রহণ ও আগ্রহ বাড়তে পারে, যা নির্বাচনের দিনেই জাতীয় প্রশ্নে জনমত জানার একটি ‘বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আয়োজন’ হবে। এর মাধ্যমে দ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নের গতি পাওয়া যাবে।

সরকার ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও এই প্রক্রিয়ায় চ্যালেঞ্জ বা নেতিবাচক দিক আছে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তাদের ধারণা, একই দিনে দুই প্রক্রিয়া সামলানো প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত কঠিন। ভোটারকে একই দিনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এতে বিভ্রান্তির ঝুঁকি থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে গণভোটের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। নির্বাচনি সহিংসতা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি গণভোটের প্রক্রিয়াকেও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ‘এইটা কোনো ভোট না, মূলত এই পদ্ধতিতে পাইকারিভাবে একটা উত্তর দেওয়া হয়, যার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এইটা সাংবিধানিকভাবেই করা যেত। যদিও পদ্ধতির জন্য করা হচ্ছে। এই পদ্ধতি জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও করেছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘এই গণভোট দলগুলোর মেনে নিতে হবে এবং ভোটও হয়ে যাবে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবেই ভোট হয়ে যাক। এতে একটা জটিল সমস্যার সমাধান হবে। আর দলগুলোও তা মেনে নেবে বলে মনে করি।’

উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর পদ্ধতিতে বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব নাকি নতুন জটিলতা : প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ হবে ১০০ সদস্যের এবং দলগুলোর জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন হবে। এই পিআর পদ্ধতির ইতিবাচক দিকও রয়েছে, যা দেশের সমগ্র ভোটের প্রতিফলন রাজনৈতিক কাঠামোয় দেখা যাবে। ছোট ও নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব বাড়বে। রাজনৈতিক বৈচিত্র্য, মত প্রকাশের পরিধি ও সংসদের অন্তর্নিহিত ভারসাম্য বাড়বে। পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার একচ্ছত্র আধিপত্য কমবে, আলোচনাপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পারে।

নেতিবাচক দিক ও আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে খ-িত ও অতিরিক্ত বহুমাত্রিক সংসদ রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, জটিলতা ও জোটনির্ভরতার ঝুঁকি বাড়বে। বিএনপিসহ কিছু দল মনে করছে, ভোট শতাংশের ভিত্তিতে আসন বণ্টন করলে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। এবং ক্ষমতা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নতুন রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হতে পারে।

এদিকে আইনগত ও সংবিধানিক বাধাও রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সংবিধান-অনুচ্ছেদ ১০৬-এর আওতায় সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় এসেছে। আর রাজনৈতিক দলগুলো যদি বৈষম্যবিহীন অংশগ্রহণমূলকভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত না হয়, তাহলে সনদের সফল বাস্তবায়ন সংকটে পড়তে পারে।

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির মাধ্যমে আসন ভাগ করার পরিকল্পনার মূল ধারণাটি হলো, নি¤œকক্ষ নির্বাচনে একটি দল জাতীয়ভাবে যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই দল উচ্চকক্ষেও তার অনুপাতে আসন পাবে। তবে এই প্রস্তাবে কিছু দল আপত্তি তুলেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনে করছে যে, তারা নি¤œকক্ষে আসনসংখ্যার ভিত্তিতেই উচ্চকক্ষে আসন ভাগ করতে চায়, ভোট শতাংশের ভিত্তিতে নয়।

সরকারি সূত্র বলছে, উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির বিষয়টি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে সই হয়েছে, তা প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মনে রাখতে হবে, গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়ন হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। এর জন্য আগে অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে। এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া, জবরদস্তিমূলক কোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, তা জনগণ বিবেচনা করবে।’

তবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শরিফ ভুঁইয়া বলেন, ‘গণভোটে জনরায় এলে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ সনদ বাস্তবায়নে আইনগত বাধ্যবাধকতায় না পড়লেও নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাধ্য থাকবে।’

রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর ও আইনি প্রস্তুতিতে প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন : রাষ্ট্রপতির প্রাথমিক সম্মতি ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ দ্রুতই আইনগত রূপ নিতে পারে। এর অর্থÑ অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের পথে বাধ্যতামূলক কাঠামোয় প্রবেশ করছে। পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের কাছেও এই সংস্কার স্থায়ী ভিত্তি তৈরি করবে। উচ্চকক্ষ, গণভোট, পিআর পদ্ধতিÑ সবই আইনি কাঠামোর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়নযোগ্য হবে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদ পুনর্গঠন বা দুই কক্ষ প্রবর্তনের মতো বড় পরিবর্তনে আইনের পাশাপাশি সাংবিধানিক সংশোধনও প্রয়োজন হবে, যা সময়সাপেক্ষ ও রাজনৈতিক ঐকমত্যনির্ভর।

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিকোণে সুযোগ আছে, ঝুঁকিও আছে : ইতিবাচক সম্ভাবনাÑ দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার পর একটি আলোচনামুখী, বহুমুখী ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির জন্ম হতে পারে। উচ্চকক্ষের মাধ্যমে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ, তদারকি ও নীতিগত ভারসাম্য বাড়তে পারে। গণভোট সংস্কারের প্রতি জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

নেতিবাচক দিক ও আশঙ্কা :

দলগুলো মতৈক্যে না পৌঁছালে সনদ রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াতে পারে। গণভোটের সঠিক প্রশ্ন-রূপ থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিÑ সবই সময়ের পরীক্ষায় পড়বে। উচ্চকক্ষ-নি¤œকক্ষের দ্বৈত কাঠামো প্রশাসনিক জটিলতা বাড়াতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলো যদি গণভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে সংকট আরও গভীর হতে পারে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, এই সনদ যুগান্তকারী না হলেও এটি একটি উল্লেখযোগ্য চেষ্টার প্রতীক। পিআর পদ্ধতি, গণভোট, উচ্চকক্ষের গঠনÑ এসব বিষয় আগে অনেক ক্ষেত্রে আলোচনা থেকেও বাস্তবায়নের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এখন এই প্রস্তাবগুলো কার্যকর রূপ নিচ্ছে বলে একটা নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ গঠনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

তবে, এই পরিবেশ সৎভাবে কাজ করবে কি নাÑ এ প্রশ্ন এখনো রয়ে গেছে। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ-আস্থা-স্বচ্ছতা বাড়াতে হলে শুধু আইন নয়, মনোবল-ইচ্ছাশক্তি-প্রশাসনিক সক্ষমতাও চাই।

বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, এ ধরনের সনদ ও সংশ্লিষ্ট প্রক্রিয়া দেশকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে, কারণ এটি শুধু একটি নির্বাচনি সংস্কার নয়, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক সংস্কার। ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত গণতান্ত্রিক সংকট উত্তরণে বাস্তবসম্মত’Ñ এমন মন্তব্য করা হয়েছে। অর্থাৎ, যদি সনদ সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সহমর্মিতা, অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি ও পারস্পরিক আস্থা বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সফলতা শুধুই ঘোষণা দিয়ে পাওয়া যায় না। এর প্রক্রিয়া, অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, আইনগত রূপায়ণ, রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণÑ সবকিছু মিলিয়ে হবে। বিশেষ করে গণভোট ও উচ্চকক্ষ গঠনে পিআর পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতিতে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। যদি দলগুলো সম্মতিতে না আসে, তাহলে সংস্কার অস্তিত্বহীন ঘোষণা হয়ে পড়ার ভয় রয়েছে।

তারা এ-ও মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি অধ্যায় যদি শুরু হয়, তাহলে ‘জুলাই সনদ’ তা হতে পারে। কিন্তু সময় অনেক কম, দায়িত্ব অনেক বেশি। আগামী সংসদ নির্বাচন, সেই সঙ্গে গণভোট যদি নিরবচ্ছিন্নভাবে সফল হয়, তাহলে বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। অন্যথায়, এটি একটি মাঝারি উদ্যোগই হয়ে থাকতে পারে।