ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

সব প্রস্তুতি শেষ ইসির

যেকোনো সময় তপশিল ঘোষণা

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ১২:৪২ এএম
  • আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে ইসি
  • তপশিলের পর কোনো আন্দোলন হলে কঠোর হাতে দমন
  • উপদেষ্টা পদে থেকে নির্বাচন এবং ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়া যাবে না

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তপশিল ঘোষণার জন্য প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় তা ঘোষণা হতে পারে। এর অংশ হিসেবে আজ দুপুরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে অন্য কমিশনারা। তপশিল ঘোষণার বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচাপরতি সৈয়দ রেফতা আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, এ সপ্তাহেই ঘোষণা হবে তপশিল। চলতি সপ্তাহের কর্মদিবস হিসেবে আজ বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুই দিন হাতে থাকায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ দুই দিনের মধ্যে যেকোনো সময় তপশিল ঘোষণা হতে পারে। তপশিলের পর কোনো অযৌক্তিক আন্দোলন কেউ করলে তা কঠোরভাবে দমনের কথাও জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে আসন্ন নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে দাবি করেছেন সিইসি।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে সিইসি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছি। তিনি এ মাসে অবসরে যাবেন। আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। সে জন্য তার সঙ্গে বিদায়ি সাক্ষাৎ করতে এসেছি। তারা ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি (নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি) ডিপ্লয় করবেন। আমাদের তপশিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজটা যাতে তিনি ত্বরান্বিত করেন সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। আসন্ন নির্বাচনে নানামুখী চ্যালেঞ্জ আমাদেও, যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

প্রধান বিচারপতি কী আশ^াস দিয়েছেনÑ এ প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির যে ডিপ্লয়মেন্ট আছে, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং নেবেন, কোনো অসুবিধা হবে না বলে আশ^স্ত করেছেন।’

এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালনে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ জন বিচারক চেয়েছেন তিনি।

এর আগে, ইসি থেকে তিনি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আসেন। সিইসিকে সুপ্রিম কোর্টে স্বাগত জানান রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী। দেশের নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেন সিইসিরা।

একই দিন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদ জানিয়েছেন, ‘বুধবার (আজ) সন্ধ্যায় অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার তপশিল ঘোষণা করা হবে।’ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণায় ভাষণের সব কিছু চূড়ান্ত। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ উল্লেখ্য সময়ের মধ্যে তপশিল ঘোষণা হবে।’ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘তপশিল ঘোষণায় রাজনৈতিক দলসহ সবার সহযোগিতার বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কাল (আজ) দুপুরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবে নির্বাচন কমিশন।’

তপশিলের পর অনুমোদনহীন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে : তপশিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানায়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যেকোনো ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। যারা বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশে অংশ নেবেন তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এতে আরও জানানো হয়, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও উৎসবমুখর হয়Ñ বর্তমানে এটিই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল লক্ষ্য। একটি সুন্দর নির্বাচন আয়োজনের জন্য যা যা করণীয় সরকার সেইদিকেই মনোনিবেশ করছে।

নির্বাচনি তপশিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনি পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয় সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে, যা এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকেরই ন্যায্য দাবি-দাওয়া রয়েছে। গত দেড় বছরে দুই হাজারের বেশি আন্দোলন-বিক্ষোভ সংগঠিত করে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আন্দোলনকারীরা দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেছেন। সরকার ন্যায্য দাবিতে সবসময়ই সাড়া দিয়েছে, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানে পৌঁছতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমরা এখন নির্বাচনমুখী সময়ে আছি। এ কারণে, সকলের যা কিছু দাবি-দাওয়া আছে তা নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের কাছে উপস্থাপনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হচ্ছে। আমরা আশা করব, এসময়ের মধ্যে কেউ দাবি-দাওয়া নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি বা স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘœ করবেন না।’

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। ভাষণে তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করবেন। এই উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তার ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার রেকর্ড করবে।

ইসি জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভাষণে সিইসি জনগণকে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ রেকর্ড করা হয়নি। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সরাসরি বিটিভি ও বেতারে তপশিল প্রচার করেন। তবে এবার তপশিলসংক্রান্ত ভাষণ রেকর্ড করবে ইসি।

এদিকে উপদেষ্টা পদে থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না বলে জানিয়েছে ইসি। এ ছাড়াও অংশ নিতে পারবেন না ভোটের প্রচারেও। গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ সব বিষয়ে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

এ সময় তিনি বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো উপদেষ্টা পদে থেকে বা সরকারের অন্য যেকোনো পদে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি ভোটের প্রচারেও অংশ নিতে পারবেন না। এই নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ ভোটে অংশ নিতে পারবেন না।

তিনি বলেন, আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। তপশিল ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তপশিল ঘোষণা জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে রেখেছে ইসি। আসন বিন্যাস, আইন অনুযাযী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার যারা থাকবেন তাদেন প্রজ্ঞাপন, বিভিন্ন বিষয়ে ২০টির মতো পরিপত্র জারি হবে। সেখানে মোবাইল কোর্ট, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি নিয়োগ, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, মনিটরিং সেল গঠন, আইনশৃঙ্খলার সেল গঠনÑ এগুলোর ফরমেটগুলো রেডি রয়েছে। তপশিল ঘোষণার পরপর সেগুলো ধারাবাহিকভাবে আমরা জারি করব।

ইসি আনোয়ারুল বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী সরকারের পদে থেকে নির্বাচনি প্রচার করা যাবে না। প্রচার করা না গেলে তো প্রার্থীও হতে পারবেন না। কাজেই সরকারের কোনো পদে থেকে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন না।

এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি দায়িত্ব পালনে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন। প্রধান বিচারপতির কাছে ৩০০ জন বিচারক চেয়েছেন তিনি।