ঢাকা বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

বললেন তারেক রহমান

জনগণ দায়িত্ব দিলে বিএনপি আবারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়বে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ১২:৪৬ এএম

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরার ক্ষেত্রে ধারাবাহিক অগ্রগতির রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে। জনগণ দায়িত্ব দিলে দলটি আবারও এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস সামনে রেখে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তারেক রহমান বলেনÑ ‘দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে, তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন।’

তিনি বলেন, ‘খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেইÑ সব কিছুর পেছনে সেই একই কারণÑ দুর্নীতি। এটা লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয়, এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্ন সরকারি সেবা আর অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেনÑ যা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল। তারপর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়; নতুন ক্রয়নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর পরিষ্কার নজরদারি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে ‘দুদক’ গঠন; একটি স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবিÑ সবাই বলেছিল, এটা বাংলাদেশের জবাবদিহির বড় অগ্রগতি। টিআইবির জরিপেও দেখা গেছে, ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বলেছে, দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও লিখেছেন, বিএনপি গর্ব করতে পারে কিছু বড় পরিবর্তনের জন্য। এর মধ্যে রয়েছে: 

১. শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা : বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং-বিরোধী আইন।

২. স্বচ্ছ ক্রয়নীতি : প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র, নিয়মের মধ্যে সরকারি ক্রয়Ñ যা পরবর্তী সময় দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে।

৩. উন্মুক্ত বাজার : টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন; যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে।

৪. ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ : প্রশাসন কম জটিল, কম ইচ্ছাধীন, বেশি মানুষের কাছে জবাবদিহি।

৫. তাই কথাটা স্পষ্টÑ দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপিরই আছে।

৬. আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির পরিকল্পনা :

৭. প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা : আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।

৯. পুরোপুরি স্বচ্ছতা : উন্মুক্ত দরপত্রব্যবস্থা, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল টাইম অডিট, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।

১০. বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার : পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ।

১১. ই-গভর্ন্যান্স : লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট; সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০-৬০% দুর্নীতি কমতে পারে)।

১২. হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা : অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।

১৩. নৈতিক শিক্ষা : স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা।

১৪. শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি : ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট, সংসদের কঠোর তদারকি।

সবশেষে তারেক রহমান বলেন, ‘বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসঙ্গে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়। জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়, বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।’