আন্দোলনের মুখে আলোচনার টেবিলে বসেও মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের দাবিতে কর্ণপাত করল না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দাবিগুলো একপ্রকার অগ্রাহ্য করেই আজ বুধবার সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের (পিটিডি) আরেকটি সভায় মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে বিটিআরসি।
সভায় অংশ নেওয়া মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের সংগঠন মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) নেতারা সভা শেষে প্রতিক্রিয়ায় জানান, আলোচনা ‘ফলপ্রসূ’ হয়নি। মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানিতে সরবরাহকারীর অনুমোদনের শর্ত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিটিআরসি। এই সরবরাহকারীদেরই ‘সিন্ডিকেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, ব্যবহৃত মুঠোফোনের আমদানি ও বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে নিজেদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে বিটিআরসি।
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টি রেজিস্ট্রার বা এনইআইআর-সংশ্লিষ্ট শর্তগুলোতে সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে এমবিসিবি। সরকারের কাছে দাবিদাওয়া উত্থাপনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি কার্যালয় দিনভর অবরুদ্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। সেদিনই জরুরি ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে বিটিআরসি। সেই সভায় গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে বিটিআরসি।
বৈঠকে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুল হক, উপপরিচালক মেহফুজ বিন খালেদসহ অন্য কর্মকর্তারা এবং এমবিসিবির সভাপতি মোহাম্মদ আসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি শামীম মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ পিয়াসের নেতৃত্বে ১৩ জনের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে শামিম মোল্লা বলেন, ‘আমাদের দাবি (বিটিআরসি) কর্ণপাত করে নাই, আমাদের দাবি কেউ আমলে নেয় নাই। আমাদের কথা তারা বোঝে, বলার আগেই বোঝে, কিন্তু না বোঝার ভান করে। এই ভান করাটা আমরা নিতে পারছি না। আপনারা (সাধারণ ব্যবসায়ীরা) কালকে পর্যন্ত শান্ত থাকেন, আমাদের চোখের পানির দাম তারা দেয় নাই। আগামীকালের মিটিং পর্যন্ত আপনারা শান্ত থাকেন।’
অন্যদিকে আবু সাঈদ পিয়াস রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘গত রোববার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে যখন বিটিআরসি চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে বসেছিলেন, তখন তার মাঝে আমাদের দাবিগুলো অন্তত বিবেচনায় নেওয়ার মানসিকতা থাকার আভাস পাচ্ছিলাম। কিন্তু আজকে যারা সভা করলেন, তারা আমাদের কোনো দাবি মানতে নারাজ। তারা বিচারের সব মানেন, কিন্তু তালগাছ তাদের। আমাদের অন্যতম দাবি ছিল, কোনো সিন্ডিকেটের অনুমতি বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই শুল্ক প্রদান সাপেক্ষে হ্যান্ডসেট আমদানির সুযোগ দেওয়া, ব্যবহৃত ফোনের বাজার এখন অনেক বড় তাই এর সুযোগ দেওয়া এবং হ্যান্ডসেটের কর সহনীয় পর্যায়ে আনা। করের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দেখবে বলে বিটিআরসি জানিয়েছে, কিন্তু প্রথম দুটি দাবি তারা মানেনি। আবার গণমাধ্যমে জানলাম যে, এনবিআর বলেছে করের বিষয়টি সরকার নির্ধারণ করবে। এ থেকে বার্তা পেলাম যে, এখানেও বিটিআরসি আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক কিছু করেনি।’
অন্যদিকে গতকাল বিটিআরসির মিডিয়া উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার দাবি করা হয়। যদিও এটিকে বিটিআরসির ‘নিজস্ব সিদ্ধান্ত’ বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। সিদ্ধান্তগুলো হলোÑ এক, ন্যূনতম কাগজপত্র দাখিলের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভেন্ডর এনলিস্টমেন্ট সনদ প্রদান এবং বিদেশ থেকে ক্লোন/কপি/ব্যবহৃত/রিফারবিসড মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ রোধকল্পে শুধু মোবাইল ফোনের মূল উৎপাদনকারী সংস্থার পাশাপাশি যেকোনো অনুমোদিত সরবরাহকারীর প্রত্যায়নপত্রসহ (চুক্তির পরিবর্তে) আবেদন করা হলে বিটিআরসি থেকে সহজেই তাদের অনুকূলে আমদানির অনুমোদন প্রদান করা হবে; দুই, ক্লোন/কপি/ব্যবহৃত/রিফারবিসড মোবাইল হ্যান্ডসেট বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ রোধের বিষয়টি নিশ্চিত করে আমদানি প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট লিখিত প্রস্তাব প্রদানের জন্য বিটিআরসির পক্ষ থেকে ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’-এর প্রতিনিধিদের আহ্বান জানানো এবং তিন, ‘মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ’-এর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাংলাদেশের বাজারে বিদ্যমান অবিক্রীত সব মোবাইল হ্যান্ডসেট নিয়মিতকরণের উদ্দেশ্যে এ-সংশ্লিষ্ট তথ্য নির্ধারিত ছকে জমা প্রদান করলে বিটিআরসি থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এদিকে আজ বুধবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে এনইআইআর বিষয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়েছে। তবে সেই সভার নোটিশ অনুযায়ী, শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাসের বিষয়ে আলোচনা হবে সেখানে। মোবাইল ফোন ব্যবসায়ীদের অবাধে হ্যান্ডসেট আমদানিবিষয়ক কোনো এজেন্ডা সভার নোটিশে নেই। বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, এনইআইআর চালুকরণের পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন/আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্ক ও ভ্যাট হ্রাস করে সহনীয় পর্যায়ে নির্ধারণ বিষয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খানের সভাপতিত্বে বেলা ৩টায় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন