ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

দাবি হামাসের

গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০১:১১ এএম

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে হামাস। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় এ দাবি করেন গোষ্ঠীটির কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবাইদা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

প্রায় ২০ মিনিটের ওই ভিডিওতে ওবাইদা দাবি করেন, সব জিম্মিকে একযোগে মুক্তির বিনিময়ে সামগ্রিক একটি চুক্তির প্রস্তাব করেছিল হামাস। কিন্তু ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার চরম ডানপন্থি মন্ত্রীরা তা বানচাল করে দেন।

তিনি আরও বলেন, এটা এখন স্পষ্ট যে, জিম্মিদের নিয়ে নেতানিয়াহু সরকারের কোনো মাথাব্যথাই নেই। তবে যুদ্ধাবসানের নিশ্চয়তা, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা সংবলিত একটি চুক্তির পেেক্ষ এখনো রয়েছে হামাস।

হামাস দীর্ঘ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত আছে বলে হুঁশিয়ার করে ওবাইদা বলেন, গাজায় অনুপ্রবেশকারী ইসরায়েলি সেনাদের হত্যা বা জিম্মি করা চালিয়ে যেতে তারা চোরাগোপ্তা হামলা বহাল রাখবে।

মার্কিন সমর্থিত যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি কয়েক দফা আলোচনা চালিয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। দোহায় আয়োজিত এই আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছে কাতার।

আলোচনার চলমান দফা ব্যর্থ হলে কোনো আংশিক চুক্তিতে হামাস সম্মত হবে না বলেও জানিয়েছেন ওবাইদা।
গাজায় এখনো প্রায় অর্ধশত জিম্মি হামাসের বন্দিদশায় রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, তাদের মধ্যে ২০ জনের মতো জীবিত আছেন। সর্বশেষ প্রস্তাবের একটি শর্ত অনুযায়ী, ১০ জন বন্দির বিনিময়ে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, শিগগিরই গাজা থেকে ১০ জন বন্দি ফিরে আসবেন।
শুক্রবার হোয়াইট হাউসে আইনপ্রণেতাদের নিয়ে আয়োজিত এক নৈশভোজে তিনি বলেন, বেশির ভাগ জিম্মিকেই আমরা ফিরে পেয়েছি। শিগগিরই আমরা আরও ১০ জনকে পেতে যাচ্ছি।

গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিমুক্তি চুক্তি সম্পাদনের দোরগোড়ায় বলে বহুদিন ধরেই দাবি করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।

এদিকে গাজায় নতুন পরিকল্পনা ও পদ্ধতিতে ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে এসে গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার ভবন গুঁড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে দখলদার বাহিনী। গত কয়েক সপ্তাহে গাজার বিভিন্ন স্থানে পুরো শহর ও শহরতলি এলাকা ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। এসব এলাকায় একসময় বিপুলসংখ্যক মানুষের বাস ছিল। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলের সামরিক কমান্ডের নিয়ন্ত্রণে উপত্যকার বেশ কয়েকটি এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। গত শুক্রবার বিবিসির বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। 

এদিকে ফিলিস্তিনের দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের ভিড়ে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এতে কমপক্ষে ২৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭০ জনেরও বেশি আহত হয়। গতকাল শনিবার ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, গাজায় মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকায় ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে খাদ্যের সন্ধানে জড়ো হয়েছিল। সেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জনতার ওপর গুলি চালায়। এর ফলে বিপুলসংখ্যক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানগুলোতে মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৮ হাজার ছাড়িয়েছে। এদের পাশাপাশি আহত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি।