‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী এখন থেকে সরকারি তথ্য গোপন করলে অথবা তথ্য পেতে বাধা দিলে আগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি জরিমানা দিতে হবে। এই আইনের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা সংশোধনের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ আরও নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন সংশোধিত আইনে সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ২৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। আগে এই জরিমানার পরিমাণ ছিল প্রতিদিন ৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ, জরিমানার পরিমাণ পাঁচ গুণ বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার উদ্দেশ্যে তথ্য গোপন করে, তাহলে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহেরা ববি বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আইনটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। এখন সংশোধিত খসড়া নিয়ে মতামত গ্রহণ চলছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘৩১ জুলাই পর্যন্ত জনমত গ্রহণ চলবে। এরপর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সংশোধিত আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে।’
চার ধারা সংশোধনের প্রস্তাব: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, আইনটির ৫, ৬, ৭ ও ২৭ ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, নাগরিকেরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদামতো সরকারি সেবাসংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে, সেই লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে।
ধারা ২৭ : জরিমানা বাড়ছে পাঁচ গুণ: বর্তমানে কেউ সরকারি তথ্য গোপন করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশোধিত আইনে তা বাড়িয়ে প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। তা ছাড়া, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে তথ্য গোপনের মাধ্যমে দুর্নীতি বা অপরাধ আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাহলে জরিমানা বাধ্যতামূলক হবে।
ধারা ৫: তথ্য সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক ও ডিজিটাল রূপান্তর: সংশোধিত ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি সরকারি সংস্থাকে তাদের সব তথ্যের শ্রেণিবিন্যাস ও সূচি প্রস্তুত করতে হবে ও তা কম্পিউটার বা অন্যান্য উপযুক্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। এসব তথ্য একটি জাতীয় ই-নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত করে নাগরিকদের জন্য সহজে প্রবেশযোগ্য করে তুলতে হবে। ‘রেকর্ড’ বলতে বোঝাবে ফাইল, পা-ুলিপি, মাইক্রো ফিল্ম, চিত্র, অডিও বা ডিজিটাল তথ্যের যেকোনো রূপ।
ধারা ৬: তথ্য প্রকাশ ও প্রচার বাধ্যতামূলক: প্রত্যেক সরকারি কর্তৃপক্ষকে গৃহীত, চলমান ও প্রস্তাবিত কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। এর অন্তর্ভুক্ত থাকবেÑ প্রস্তাবিত বাজেট, প্রকৃত আয় ও ব্যয়, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত, দরপত্রের ফলাফল, চুক্তি, নিরীক্ষা (অডিট) প্রতিবেদন, প্রকল্প ব্যয় এবং সরকারি অর্থ ব্যবহারের বিবরণ। এসব তথ্য নিয়মিতভাবে প্রকাশ করার বাধ্যবাধকতা থাকবে, যাতে নাগরিকেরা সহজেই তা জানতে পারে।
ধারা ৭: জনস্বার্থে তথ্য গোপনের ব্যতিক্রম: বর্তমানে এই ধারায় কিছু তথ্য গোপনের সুযোগ থাকলেও সংশোধনীতে জনস্বার্থ বিবেচনায় এই সীমা আরও নির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। দুটি উপধারা যোগ করে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে ও কীভাবে তথ্য গোপন করা যাবে, তা স্বচ্ছ ও নির্দিষ্ট মানদ-ের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :