ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫

ইবি ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু বিচার দাবিতে উত্তাল ক্যাম্পাস

ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ২০, ২০২৫, ০১:১৩ এএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদ আবদুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। সাজিদের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাকে হত্যা হিসেবে অভিহিত করে তার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে গতকাল শনিবার সকাল থেকে অবরোধ ও বিক্ষোভে উত্তাল ছিল ইবি ক্যাম্পাস। পরে প্রশাসনের লিখিত আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে গতকাল বেলা ১১টা থেকেই বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাজিদের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত এবং নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ করতে থাকে তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনের নেতারাও অংশ নেন।

এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘কাজ না করে বেতন নে, বেতন কি তোর হালাল রে’, ‘ইবির পুকুরে ভাসছে লাশ, তদন্ত চলবে ২ মাস’, ‘কার দায় কে নেবে, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘বেশি আবেগি হইও না তোমরা’, ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘টাকা লাগলে টাকা নে, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা দে’, ‘শিক্ষার্থী মর্গে, প্রশাসন ঘুমায় স্বর্গে’, ‘জাস্টিস ফর সাজিদ’সহ বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সাজিদের মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না। সে খুব ভালো সাঁতার জানত, তাই পানিতে ডুবে সে মারা যাবে, এমনটা হতে পারে না। মরদেহ পাওয়ার ৪০ মিনিট পর আসে অ্যাম্বুলেন্স আর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আসে হল প্রশাসন। মানে, তাদের কাছে এ ঘটনা সাধারণই মনে হচ্ছে। মরদেহ পাওয়ার এক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সাদা কাগজে সাধারণ বিবৃতি দেয় তারা। শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার চাইতে গেলে বলেন, তোমরা অতি আবেগি হইয়ো না। এমন অক্ষম প্রশাসনের ওই চেয়ারে বসার কোনো অধিকারই নাই।

এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা প্রশাসন ভবনের গেটে তালা ঝুঁলিয়ে দেন। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা শিক্ষার্থীদের সামনে কথা বলতে গেলে তোপের মুখে পড়েন। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের সামনে ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান দেন।

এরপর সাজিদের সহপাঠীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে ১৫ দফা দাবি পেশ করা হয়। প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ, সাজিদের পরিবারকে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান, সমগ্র ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিং, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ এবং বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ।

শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কার্যালয়ের প্যাডে স্বাক্ষর করেন রুটিন দায়িত্বে থাকা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, আল কুরআন বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষক অধ্যাপক ড. শেখ জাকির হোসেন এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাজিদের বন্ধু আজহারুল ইসলাম।

এদিকে, গতকাল সকালে সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে মানববন্ধন করেন শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, বারবার নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানালেও প্রশাসন তাতে কর্ণপাত করছে না। কর্মসূচি শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে শরিক হন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া এদিন কর্মসূচিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনও সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, সাজিদ আমার বিভাগের ছেলে। ওর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছি। তদন্ত কার্যক্রম কীভাবে দ্রুত করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। আজকে (গতকাল) থেকেই সিসিটিভি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে। সাজিদের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় সাজিদের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে ঘটনার প্রায় ১০-১৫ মিনিট আগেও তার ফোন রিসিভ হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঘনিষ্ঠরা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু ছবিতে তার মাথা ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ তুলে এর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন।