রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ ঘিরে গতকাল শনিবার দিনভর শহরজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। দলটির সমাবেশ ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মীর আগমন ঘটে রাজধানী ঢাকায়। গতকাল সকাল থেকে কর্মস্থলমুখী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছাতে ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। দিন পেরিয়ে রাত পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে ধীরগতি ছিল।
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের সড়কসহ কারওয়ানবাজার থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোড, সোনারগাঁ ও মদনপুরসহ বিভিন্ন রুটে বাসের সংকট দেখা দেয়। সমাবেশ ঘিরে যানজট ও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় অসুবিধায় পড়েন নগরবাসী।
ফার্মগেট এলাকার বাসিন্দা এম রহিম বলেন, এলাকায় তীব্র যানজটের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারিনি। সড়কে যানজট দেখে বাসায় ফিরে এসেছি। বিকেলে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বেশি যানজট থাকায় যাওয়া হয়নি।
যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা মো. আরাফাত বলেন, মহাসড়কের বেশির ভাগ যানবাহনই জামায়াতের সমাবেশের। সমাবেশের শেষে বিপুলসংখ্যক মাইক্রোবাসও দেখা গেছে। যার কারণে রাস্তায় যানজট বেশি।
এর আগে এই জাতীয় সমাবেশের জন্য রাজধানীতে যানজট ও জনগণের ভোগান্তির উল্লেখ করে জামায়াতে ইসলামীর ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজে নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। গতকাল শনিবার সকাল থেকে গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে থাকেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। অসংখ্য মানুষ ও তাদের বহনকারী বাড়তি যানের চাপে ঢাকার প্রবেশমুখের সড়কগুলোতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিশেষ কারণ ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া লোকসমাগম বৃদ্ধির কারণে শাহবাগ থেকে ধানমন্ডি, ফার্মগেট এলাকার যানবাহন চলাচলও সীমিত হয়ে পড়ে। মিরপুর রোড থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে খামারবাড়ির সামনের সড়কটিতে শত শত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে। একইভাবে রমনা থেকে মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, দক্ষিণ দিকে চানখাঁরপুল এলাকায়ও দীর্ঘ সময় যানবাহন পথে আটকে পড়ে। মহাখালী থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা হয়ে কাকরাইল পর্যন্ত সড়কেও ছিল একই দৃশ্য। নিচের সড়কে যানজটের কারণে বিমানবন্দর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানগুলো নিচে নামতে গিয়ে বনানী, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার র্যাম্পে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে। বাসে করে যেসব নেতাকর্মী সমাবেশে আসছিলেন, তাদের গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে সমাবেশের দিকে যেতে দেখা গেছে।
মোহাম্মদপুর থেকে বাসে করে মতিঝিল যাওয়ার পথে খামারবাড়ির সামনে যানজটে আটকে পড়েন ব্যবসায়ী রফিক আলী। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নেমে হেঁটে রওনা দেন তিনি। কারওয়ান বাজারের সামনে তিনি জানালেন, ‘বাস তো যাচ্ছেই না, রাইডশেয়ারের মোটরসাইকেলও পাওয়া যাচ্ছে না। কতক্ষণে কীভাবে মতিঝিল যাব বুঝতে পারছি না।
যানজটের কারণে শাহবাগকে কেন্দ্র করে আশপাশের সড়কে রাইডশেয়ারের মোটরসাইকেল বা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের সংখ্যাও ছিল খুব কম। যানবাহন স্বল্পতার প্রভাব পড়েছিল মেট্রোরেলেও। প্রতিটি স্টেশনেই বিপুলসংখ্যক যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। মেট্রো থেকে নেমে রিকশা বা অন্য যান না পেয়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে যেতে হয়েছে নগরবাসীদের।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, সমাবেশ ঘিরে ডিএমপির পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ট্রাফিক সদস্যরাও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেন।