ঢাকা রবিবার, ০২ নভেম্বর, ২০২৫

ত্বকী হত্যা মামলা তদন্তকাজ প্রায় শেষ শিগগিরই চার্জশিট

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৫, ০১:৪৯ এএম

নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম দ্রুতই শেষ হবে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন, ‘এখনো তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান এবং আমাদের অনেক অগ্রগতিও আছে। আমরা অতি শিগগিরই এটা দিয়ে দিব আশা করছি।’
গতকাল শনিবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। নরসিংদীর চরাঞ্চল থেকে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দিতে এ সংবাদ সম্মেলনে আসেন র‌্যাব কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় ছয়জনের গ্রেপ্তার ন্যায়বিচারের জন্য আশা জাগিয়েছিল নিহতের পরিবারে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আলোচিত এই হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিলে আরও সময় চেয়ে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আবেদন করে র‌্যাব। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক রঞ্জন মজুমদারকে দ্রুত অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেয়।
মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে র‌্যাব-১১ অধিনায়ক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই তদন্ত শেষে বিস্তারিতভাবে জানানো হবে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে আমাদেরও যোগাযোগ হচ্ছে। তদন্ত দীর্ঘদিনের একটা... এখন হুট করে চাইলেই... তদন্তটাকে তদন্তের মতো যেন সুন্দরভাবে শেষ হয় এবং এটার যেন একটা ভালো রেজাল্ট আসে আমরা সেটাই সবাই কামণা করি। অতি শিগগিরই ইনশাল্লাহ তদন্ত রিপোর্ট যখন দেওয়া হবে, তখন বিস্তারিত জানানো হবে। তদন্ত শেষ করার আগে আমি কীভাবে বলি?’
নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শিল্পী রফিউর রাব্বির বড় ছেলে তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ এই কিশোর শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হয়। পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায়, ত্বকী সারা বিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯৭ পেয়েছিলেন। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। তবে দীর্ঘ ১২ বছরেও এই হত্যাকা-ের বিচার হয়নি। ত্বকীর পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছিলেন, প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকা-ের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আলোচিত এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
নরসিংদীতে ১১ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৮ জন গ্রেপ্তার : নরসিংদীর রায়পুরা থেকে দেশি-বিদেশি ১১টি অস্ত্রসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান র‌্যাব-১১ অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিল পাশর্^বর্তী দেশ থেকে নদীপথে, এর বাইরে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকেও তারা অস্ত্র সংগ্রহ করত। গ্রেপ্তাররা হলেন- শফিক মিয়া (৩২), মোস্তফা (৩৮), জাহিদ হাসান (১৭), আয়নাল (৩৮), মহিউদ্দিন হৃদয় (২২), বাচ্চু মিয়া (৬২), কালু মিয়া (৬৯) ও বাছেদ (৪০)। তাদের সবার বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার সায়দাবাদ এলাকায়। অভিযানে গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, ৫টি একনলা বন্দুক, ১টি দুইনলা বন্দুক, ২টি এলজি, ১টি পাইপগান, ৩টি ম্যাগাজিন ও ৩৫ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন বলেন, মূলত বালুমহাল, চর, বাজার দখল ও আধিপত্যকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে থাকে। আর সেগুলো নিয়ন্ত্রণেই অস্ত্রের ব্যবহার হয়। পাশের দেশ ভারত থেকে সরঞ্জাম এনে দেশে এসব অস্ত্র তৈরি করা হতো। দেশের নৌপথ কিছুটা অরক্ষিত থাকার সুযোগে এসব কাজ করত তারা।