আওয়ামী লীগ কেন  ‘যে কেউ’ এ রকম সন্ত্রাসী  কর্মকাণ্ড করতে পারে 

ক’দিন ধরে বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন ও বোমা হামলার ঘটনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ মনে করেন, এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকা- আওয়ামী লীগ কেন, ‘যে কেউ করতে পারে’। কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা থাকা আওয়ামী লীগের ঢাকা লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে এ রকম অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলার ঘটনায় বিভিন্ন স্থান থেকে দলটির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার গুলশানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৈঠকে পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমীর খসরু।

আমীর খসরুর কাছে বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু, জাতীয় নির্বাচন, বিএনপির প্রার্থী তালিকা, আওয়ামী লীগের বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা। 

‘আওয়ামী লীগ তো নির্বাচনের রেইসেই নেই’; এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো নির্বাচনের রেইসেও নাই, দেশেও নাই, আওয়ামী লীগের নেত্রীও নাই, তাদের কর্মকা- স্থগিত আছে। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকা- আওয়ামী লীগ কেন, যে কেউ করতে পারে। সন্ত্রাসী কর্মকা- থেকে যদি আপনি রক্ষা চান, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সঠিক। তিনি বলেন, কারা করছে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- তাদের খুঁজে বের করতে হবে। আমরা আশা করছি, সরকার এই বিষয়ে আরও বেশি সচেষ্ট থাকবে, আরও ভালোভাবে এটার মোকাবিলা করতে হবে। নির্বাচনের আগে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে সেটা বিশ্বাস করার ‘কোনো কারণ নেই’, বলেন তিনি।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি রেখে ইতোমধ্যে প্রচার অভিযান শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তবে গণঅভ্যুত্থান দমাতে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অভিযোগে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় গত মে মাসে। নির্বাচন কমিশন দলটি নিবন্ধন স্থগিত করায় তাদের নির্বাচনের পথও বন্ধ।

একই অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান দলটির সভাপতি শেখ হাসিনার বিচারের রায় কোন দিন হবে, তা জানানো হবে আজ বৃহস্পতিবার। এদিন ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ইইউ সফল নির্বাচন দেখতে চায় :

গতকাল বেলা ১১টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়াও দলের যুগ্ম মহাসচিব হুমায়ুন কবির ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরে আমীর খসরু বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে সফল জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায়। বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। তারা নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিচ্ছে, নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তারা নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও কথাবার্তা বলছে। এই নির্বাচন দেখতে তাদের পর্যবেক্ষক আসবেÑ সেটাও তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনটা যাতে সফলভাবে হয় তারা সেদিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এই মুহূর্তে তাদের মনোযোগটা হচ্ছে নির্বাচনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। যেহেতু তাদের একটা বড় সম্পৃক্ততা এই নির্বাচনে আছে। তারা চায় এই নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হোক এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটা ফিরে আসুক।’

বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন ভালো হয়েছে :

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি ২৩৭ আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। যাতে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৪ জনের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে মহাসচিবসহ ১০ জনের নাম রয়েছে। তবে তালিকাটি ঘোষণার পর বিভিন্ন আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকরা বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখিয়েছেন। পরে একটি আসনে মনোনয়ন স্থগিত করেছে বিএনপি। 

আমীর খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা নির্বাচনি হাওয়া বইছে এবং জনগণ নির্বাচনের পক্ষে এখন কাজ করছে, প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনি হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। শুধু বিএনপি নয়, প্রায় প্রত্যেকটি দলই তো নির্বাচনের জন্য কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৩৬টা আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পরে আমি বলবÑ এটি অনেকটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আমি মনে করি, সব অংশ থেকে যেসব রিপোর্ট এসেছে তারাও বলেছে যে, মনোনয়নগুলো ভালো হয়েছে বিএনপির।’