অন্তর্বর্তী সরকারের তিনজন উপদেষ্টা একটি দলের হয়ে কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, ‘খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আজকে প্রধান উপদেষ্টাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করছেই তিনজন উপদেষ্টা এবং তারা ভুল তথ্য দিয়ে, নানাভাবে বুঝিয়ে একটি দলের হয়ে কাজ করে সরকারকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে হতে না পারে, সেদিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুকৌশলে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
গতকাল শুক্রবার আন্দোলনরত আট দলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এসব কথা বলেন। রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধার উপদেষ্টার ভাষণের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জামায়াতের এই নেতা এসব কথা বলেন।
তিনজন উপদেষ্টাকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের নাম পাঠানো হবে। এর পরও যারা ষড়যন্ত্রের পেছনে প্রধান হোতা হিসেবে কাজ করছেন, তাদের বিষয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া না হয়, সেই নামগুলো প্রকাশ করার বিষয়ে ভাবা হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে একটি দলের সমালোচনা করে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হলে জাতীয় নির্বাচন বেশি গুরুত্ব পাবে আর গণভোটের গুরুত্ব কমবে। মানুষের মনোযোগের অভাবে গণভোটে যদি ভোট কম পড়ে, তাহলে যারা সংস্কার চাইছে না তারা বলবে, যেহেতু ভোট কম পড়েছে, জনগণ গণভোট চায়নি বলে বিবেচিত হোক। এর মাধ্যমে তারা সংস্কার থেকে সরে আসবে।’ এই ভাবনাকে সেই দলটির ‘ফাঁদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন জামায়াতের নায়েবে আমির। তিনি বলেন, ‘অপ্রত্যাশিতভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে হোক অথবা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে হোক, সরকার একটি দলের ফাঁদে পা দিয়েছে এবং সংস্কারকে প্রায় গুরুত্বহীন করেছে।’
সংস্কার কমিশনের সুপারিশ গ্রহণ না করে অন্তর্বর্তী সরকার যথেষ্ট কাটছাঁট করেছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের এই নেতা। তিনি বলেন, ‘একটি দলের সঙ্গে আপস করে সুপারিশে অনেক পরিবর্তন এনে প্রধান উপদেষ্টা ভাষণ দিয়েছেন। এর ফলে জনগণ হতাশ হয়েছে।’ তবে একটি বিষয়ে সরকারপ্রধান কিছুটা দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তাহের।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি কখনোই আদেশের মাধ্যমে সনদের সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়ার পক্ষে ছিল না। তারা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার গ্রহণের প্রস্তাব করেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেওয়ার পক্ষে দৃঢ় ছিলেন। সে জন্য তাকে সাধুবাদ জানানো যায়।’ জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, “সংস্কার কমিশন গণভোটে একটা প্যাকেজে ‘হ্যাঁ’-‘না’ ভোট নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সেই প্যাকেজকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেটি জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে জটিলতার মধ্যে ফেলে দেবে।” সরকার বিএনপির নোট অব ডিসেন্টকে ‘অ্যাকোমোডেট’ করার জন্যই গণভোটের প্রশ্নকে চার ভাগ করেছে বলে দাবি করেন তাহের। সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) তৈরির ব্যাপারে আদৌ মনোযোগী নয় বলে অভিযোগ করছেন আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার সহযোগিতায় একটি বিশেষ দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে দলীয় প্রশাসনে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনে কিছু কিছু পরিবর্তন হচ্ছে এবং সেখানে একটি বিশেষ দলের অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ। উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব শেখ ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইযহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির মহাসচিব কাজী নিজামুল হক প্রমুখ। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সাংবিধানিক আদেশ জারি এবং নভেম্বর মাসেই গণভোট আয়োজন, নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলন করছে।
দলগুলো হলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি।

