ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের ছাত্রদের যৌন হয়রানি ও মারধরের অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় ঢাবি অধ্যাপক ড. এরশাদ হালিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম এ আদেশ দেন। এদিন আসামি এরশাদকে আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মিরপুর মডেল থানার উপপরিদর্শক মেহেদী হাসান মিলন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী শ্যামল কুমার রায় জামিন চান। শুনানি শেষে আদালত আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। শ্যামল রায় আদালতকে বলেন, ‘এই আসামি কোনোভাবে মামলার ঘটনায় জড়িত নন। তাকে হয়রানি করতে মামলায় জড়ানো হয়েছে। কার্যত এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি; ঘটলে মেডিকেলের সনদ থাকত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরশাদ হালিম বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বিভাগের রাজনীতির শিকার। তিনি বয়স্ক একজন মানুষ। জামিনের প্রার্থনা করছি।’
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ১১টার দিকে অধ্যাপক এরশাদ হালিমের শেওড়াপাড়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে মিরপুর মডেল থানার পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। এরপর ঢাবি রসায়ন বিভাগের এক শিক্ষার্থী মিরপুর মডেল থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী রসায়ন বিভাগে পড়েন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি একটি পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে এরশাদ হালিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরশাদ হালিম সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে তাকে শেওড়াপাড়ায় বাসায় যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর তিনি যৌন হয়রানির শিকার হন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলায় আরও বলা হয়, পরদিন ওই ছাত্রকে ফোনে এরশাদ হালিম জানান, তার পরীক্ষাসংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে প্রক্টরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তাকে বিকেলের পালায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেবেন। সেদিন ওই শিক্ষক তাকে আবার শেওড়াপাড়ার বাসায় ডাকেন দাবি করে অভিযোগে বলা হয়, তার ‘সমকামী আচরণের’ কারণে তিনি বাসায় যাননি। বিবাদী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। গ্রামের বাড়িতে চলে যাওয়ায় এরশাদ হালিম ফোন করে তাকে গালাগালি করেন বলে মামলায় বলা হয়েছে। গত ১০ অক্টোবর ঢাকায় আসার কথা জানিয়ে মামলায় বলা হয়েছে, এরশাদ হালিম আবার ফোন করে বাসায় ডাকলে ওই ছাত্র প্রথমে রাজি হননি। ছাত্রের ভাষ্য, পরীক্ষার জটিলতার বিষয়টি জানতে পারলে তার বাবার অসুস্থতা বেড়ে যেতে পারে ভেবে তিনি ১৪ অক্টোবর রাতে আবার শেওড়াপাড়ার বাসায় যেতে বাধ্য হন। বাসায় যাওয়ার পর তাকে মারধর করার পাশাপাশি যৌন নির্যাতন করা হয় বলে মামলায় ওই ছাত্র দাবি করেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, বৃহস্পতিবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একদল শিক্ষার্থী অভিযোগ জানিয়েছেন। আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে সব একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়েছি। আর অভিযোগটি যৌন নিপীড়ন সেলে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

