আজ থেকে ১৮ বছর আগে উপকূল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। দিনটি আজও ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ। প্রতিনিয়ত সেই স্মৃতি ধুঁকে-ধুঁকে কাঁদাচ্ছে স্বজনহারা মানুষকে। আজ ১৫ নভেম্বর, সেই প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার দিন। সেদিন প্রিয়জন আর বসতবাড়ি হারিয়ে এখনো কাঁদছেন অনেকে। সিডরে স্বজনহারা এমনই একজন লাভলী বেগম (৫৫), দুই শিশুসন্তান হারিয়ে যিনি আজও কেঁদে বুক ভাসান।
সিডরের সেই প্রলয়রাত এবং দুই সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন লাভলী বেগম, যার মতো খালি হয়েছিল আরও অসংখ্য মায়ের বুক। পাথরঘাটা উপজেলার দক্ষিণ চরদুয়ানী গ্রামের বাসিন্দা লাভলী বেগম। তার ছেলে রুবেল (১১) ও মেয়ে তন্বী আক্তার (৩) ভয়াল সিডরের থাবায় মারা যায়।
লাভলী বেগম বলেন, ‘সিডরের রাতে হঠাৎ পানি আসে বসতঘরে। ঘর ডুবে যায়। মুহূর্তের মধ্যে দুই সন্তান ঘর থেকে পানির স্রোতে ভেসে যায়। পানি সরে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করি, কিন্তু পাইনি। পরদিন আশপাশে খুঁজেও পাওয়া যায়নি। তারও পরদিন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দুরে একটি ঘরে পাওয়া যায় ওদের লাশ।
তিনি আরও বলেন, যে ঘরে ছেলেমেয়েদের পাওয়া গেছে, তারা তাকে জানিয়েছেন যে সকালে দুজনকে ভাসতে দেখে তাদের ঘরের খাটে শুইয়ে রাখে। তারা ভাবছিল ওরা জীবিত। কিন্তু পরে দেখা যায় ওরা মৃত।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সন্তান হারানোর বেদনা কত কষ্টের, যার যায় সে-ই বোঝে। দুই সন্তানকে আজও ভুলতে পারিনি। ওদের কথা মনে পড়লে বুকে ব্যথা ওঠে। বাড়ির সামনেই ওদের কবর, আজও শূন্যতায় ভুগি।’
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর, এদিন বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোয় আঘাত হানে ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় সিডর। আঘাতের সময় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। তবে এ সময় দমকা হাওয়ার বেগ উঠছিল ঘণ্টায় ৩০৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। সিডরের প্রভাবে উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায় উপকূল। আজও সেই ধ্বংসযজ্ঞের স্মৃতি বয়ে বেড়ায় এখানকার মানুষ। সিডরে পাথরঘাটায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রাণহানি হয় অনেক মানুষের। বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষিজমিসহ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়।
পাথরঘাটা উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে জানা যায়, সিডরে পাথরঘাটায় মারা যায় ৪৪৯ জন।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, সিডর উপকূলজুড়ে ক্ষতি করে দিয়ে যায়, যা আজও ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ।
উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘সিডরের ভয়াবহতা ভুলতে পারেনি উপকূলবাসী। সিডর থেকে শুরু করে প্রতি উপকূলে যে হারে মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। উপকূলকে রক্ষা করতে হলে প্রথমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ দরকার, পাশাপাশি বেড়িবাঁধের বাইরে বনায়ন দরকার। এ ছাড়া জলবায়ু সহনশীল ঘরবাড়ি তৈরি করা দরকার। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ছাড়া সিডরে নিহতদের স্মরণে রাখতে আমরা স্মৃতিফলক করেছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন