ছেলেকে অপহরণের মামলা করায় ময়মনসিংহে রূপা আক্তার নামে এক নৃত্যশিল্পীকে মারধর করে চুল কেটে ও মুখে কালি লেপে নির্যাতন করা হয়েছে। এমন ঘটনার পর রূপা আক্তারের কালি মাখানো বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় নেটিজেনরা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। বিষয়টি নিয়ে নিন্দা জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা-আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর আসক বলছে, গত ১২ নভেম্বর স্থানীয় কয়েকজন চিহ্নিত দুর্বৃত্ত এক নারী নৃত্যশিল্পীকে প্রকাশ্যে মারধর করে, তার চুল কেটে দেয় এবং মুখে কালি মাখিয়ে হেনস্তা করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলছে, এ ধরনের ঘটনা কেবল একজন নারীর মর্যাদা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিশ্রুত মৌলিক অধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা দ-বিধিতে নারীর মর্যাদা ক্ষুণœ ও শ্লীলতাহানির অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। প্রকাশ্যে একজন নারীর ওপর এমন নিষ্ঠুর নির্যাতন শুধু আইনের অবমাননা নয়, এটি নারীর মর্যাদার প্রতি সরাসরি আঘাত।
এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা, চিকিৎসা, সামাজিক ও আইনি সহায়তা রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সুরক্ষার স্বার্থে এ ধরনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর নীতি গ্রহণ করতে হবে।
পরে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে রূপা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়েন করেন। মামলার পর ওই দিন রাতে নগরীর জুবলীঘাট এলাকা থেকে শাহ আলম (৪০) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার শাহ আলম নগরীর চর কালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি।
নির্যাতনের শিকার নৃত্যশিল্পী রূপা নগরীর বড় কালীবাড়ি রোডের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তবে তারা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন রূপা। গত বছর সেখানে আধাপাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রূপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রূপা আদালতে মামলা করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রূপার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় রূপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রূপার করা ভাঙচুরের একটি মামলার তদন্ত করতে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তায় রূপাকে ধরে নিয়ে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করে। এ সময় রূপার সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রূপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে রূপা বলেন, ‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাসুদ জামেলী বলেন, ‘ওই নারীকে বেঁধে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে, মুখে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রূপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‘মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।’

