পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা, আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি বাংলাদেশের কোনো সরকারের হাতে নয় বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী বা পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি আমি মনে করি সেনাবাহিনীর হাতে। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্তৃত্বাধীন। তারাই (সেনাবাহিনী) পারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।’
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডির মাইডাস ভবনে টিআইবির নিজ কার্যালয়ে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, তারা (সেনাবাহিনী) চেষ্টা করে দেখাক যে, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। যে বিভাজন ও শাসন চলমান, সেটা থেকে সরে এসে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সত্যিকারের অঙ্গীকার এবং ফ্যাক্ট বা ঘটনাভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে যদি তারা উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে তাদের দ্বারা সম্ভব।’
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এখন যে প্রচার দেখছেন, সম্প্রতি এক বা একাধিকবার বলেছি, সরকারকে সুনির্দিষ্টভাবে ও লিখিতভাবে অবহিত করেছি যে, এখন হচ্ছে সময় তাদের (সেনাবাহিনী) আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের পরীক্ষা করা, পরীক্ষা দেওয়া। সারা বিশ্বে ১৬৯টা দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমে অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভূমিকা রেখেছে। এটার জন্য আমিসহ পুরো দেশের জনগণ গর্বিত। এই মুহূর্তে অন্তত ১০টা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্মরত আছে এবং উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। তাহলে এখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মূলত তাদের কর্তৃত্বাধীন একটা অঞ্চলে (বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল) কেন শান্তি প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হবে নাÑ এমন প্রশ্ন তুলে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘সেই প্রশ্নের জবাব সেনাবাহিনীকেই দেওয়া উচিত। নিজেদের জন্য, তাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা, ক্রেডিবিলিটি, মর্যাদা ও সম্মানকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা (সেনাবাহিনী) সরকারের সহায়তায় নয়, নিজেদের উদ্যোগেই পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।’ টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘যদি তাদের (সেনাবাহিনী) সে সদিচ্ছা থাকে তাহলে পার্বত্য শান্তিচুক্তির প্রতিটি ধারা বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কিন্তু অন্য কোনো শক্তি বা অন্য কোনো অতীত সরকার সেটি পারেনি। সর্বশেষ ক্ষমতাধর ও ইতিহাসে সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার গত ১৫ বছর ছিল বাংলাদেশের ক্ষমতায়, তারাও পারেনি। তাদের দ্বারা সেটা সম্ভবও ছিল না।’
তিনি সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা রেখে বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সে সক্ষমতা আছে। তারা চাইলে সত্যিকার অর্থে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেশ-বিদেশে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গবেষণা ফেলো রাজিয়া সুলতানা। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা ও নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মুহাম্মদ বদিউজ্জামান, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) তৌহিদুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন