ঢাকা বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

রাশিয়ার সঙ্গে বিরোধে চাঁদ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছিল আমেরিকা!

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৩:৩৮ এএম

আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা... শিশুদের ঘুম পাড়ানি এ গানের সুর আদি ও অনন্ত। চাঁদনি রাতের সৌন্দর্যও ঐশ^রিক আভা ছড়ায়। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এই চাঁদকেই একটা সময় উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল আমেরিকা! সেটাও আবার রাশিয়া তথা সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বিরোধ থেকে।

এটি সায়েন্স ফিকশনের মতো শোনালেও সোভিয়েত মহাকাশ কর্মসূচিকে ব্যর্থ করার জন্য আমেরিকার একটি বাস্তব চক্রান্ত ছিল এটি। নথি অনুসারে, গোপন প্রকল্প এ১১৯-এর অংশ হিসেবে, আমেরিকা নীল আর্মস্ট্রংয়ের অবতরণের অনেক আগেই চাঁদে বোমা হামলা করতে চেয়েছিল। ১৯৫০-এর দশকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন চাঁদে প্রথম মহাকাশচারীদের অবতরণের কাছাকাছি চলে এসেছিল। আমেরিকার কাছে এর অর্থ ছিল বিশাল ক্ষতি। তাই, তারা হাইড্রোজেন বোমা দিয়ে চাঁদে একটি বিশাল গর্ত খোঁড়ার কথা ভেবেছিল, যা পারমাণবিক বোমার চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী।

আমেরিকা এই ভয়াবহ পরিকল্পনার কথা ভেবেছিল যাতে রুশ নভোচারীরা তাদের লক্ষ্যের খুব কাছে চলে গেলে চাঁদে আমেরিকার অঞ্চল চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর, সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে প্রথম উপগ্রহ স্পুটনিক ১ উৎক্ষেপণ করে।

এর পরেই আমেরিকা বিচলিত হয়ে পড়ে, তাই বিজ্ঞানী লিওনার্ড রেইফেল বিমানবাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে ১৯৫৮ সালের মে থেকে ১৯৫৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে চাঁদে বোমা ফেলার পরিকল্পনার সম্ভাব্য রিপোর্ট তৈরি করেন। নাসা চাঁদের আলো এবং অন্ধকার দিকের সীমানা, চাঁদের টার্মিনেটর লাইনে হাইড্রোজেন বোমাটি বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল, কারণ এটি পৃথিবীর সকলের কাছে দৃশ্যমান আলোর ঝলক তৈরি করবে।

এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে প্রমাণ করবে যে আমেরিকার কাছে এমন প্রযুক্তি ছিল যাতে কেউই এগুলোকে হালকাভাবে না নেয়। সৌভাগ্যবশত, নাসা চাঁদে পারমাণবিক হামলার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যায়নি কারণ বিমানবাহিনী ভয় পেয়েছিল যে এই পদক্ষেপটি পৃথিবীতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিজ্ঞান ও পারমাণবিক প্রযুক্তির ইতিহাসবিদ অ্যালেক্স ওয়েলারস্টাইন বিবিসিকে বলেন, ‘প্রজেক্ট এ১১৯ ছিল স্পুটনিকের প্রতিক্রিয়ার জন্য তৈরি বেশ কয়েকটি ধারণার মধ্যে একটি।’ তার মতে, পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে একটিতে স্পুটনিক-১কে গুলি করে ভূপাতিত করার পরিকল্পনাও ছিল।

১৯৬৯ সালে প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে মানুষ পাঠায়। মানব জাতির জন্য যা ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মোট ১২ জন মানুষ এখনও পর্যন্ত চাঁদে হেঁটেছেন। অ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন, অ্যাপোলো ১২ মিশনে পিট কনরাড এবং অ্যালান বিন, অ্যাপোলো ১৪ মিশনে অ্যালান শেপার্ড এবং এডগার মিচেল, অ্যাপোলো ১৫ মিশনে ডেভিড স্কট এবং জেমস আরউইন, অ্যাপোলো ১৬ মিশনে জন ইয়ং এবং চার্লস ডিউক, অ্যাপোলো ১৭ মিশনে জিন সারনান এবং হ্যারিসন স্মিট এখনও পর্যন্ত চাঁদের মাটিতে পা রাখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন।