বুধবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৩:৪১ এএম

ছয় বাহিনীর প্রভাব বিস্তারে টার্গেট কিলিং বৃদ্ধি

গোলাগুলি খুনোখুনির নগর খুলনা

হাসানুর রহমান তানজির, খুলনা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৫, ০৩:৪১ এএম

গোলাগুলি খুনোখুনির নগর খুলনা

  • ১৬ মাসে ৯৩ খুন
  • প্রতিদিনই সশস্ত্র মহড়া, খুন-গুলিবর্ষণ
  • এসব বাহিনীতে সক্রিয় ২০-২৫ জন ভাড়াটে খুনি
  • নির্বাচন ঘিরে নিরাপত্তাহীন রাজনীতিকসহ সাধারণ মানুষ
  • নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট ও তথ্যবাক্স বসানো হয়েছে

খুলনা মহানগরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ভাড়াটে খুনি ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। টার্গেট কিলিং, প্রকাশ্যে গুলি ও সশস্ত্র মহড়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, মহানগরের ছয় শীর্ষ সন্ত্রাসী বাহিনীর হয়ে ২০ থেকে ২৫ জন ভাড়াটে খুনি বিভিন্ন হত্যাকা-ে জড়াচ্ছে। মাদক, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চলছে এই সংঘর্ষ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জামিনে বেরিয়ে আসা ও দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা অপরাধীরা এলাকায় ফিরে সংগঠিত হচ্ছে। এতে খুলনা মহানগরসহ জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটছে। রাজনৈতিক মহলে আলাপ চলছে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেক রাজনৈতিক প্রার্থীরাও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মহানগরে এই মুহূর্তে ছয়টি সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধানরা ৬৭ মামলা মাথায় নিয়ে অপরাধ সা¤্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেদের মধ্যে খুনোখুনিতে লিপ্ত রয়েছেন। গত জানুয়ারি মাসে কেএমপির কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার খুলনার শীর্ষ ১২ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করার পর কিছু সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত রোববার দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে প্রকাশ্যে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফজলে রাব্বি রাজন ও হাসিব হাওলাদারকে। দুজনই পলাশ গ্রুপের সদস্য এবং আড়াই মাস আগে কারাগার থেকে জামিনে বের হন। একইদিন রাতে জিন্নাহপাড়া এলাকায় চা দোকানে বসা স¤্রাট কাজী নামে এক যুবকের ওপর গুলি চালানো হয়। গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার হাতে লাগে।

খুলনা মহানগর পুলিশের তথ্যমতে, গত ১৬ মাসে খুলনায় ৪৮টি হত্যাকা- ঘটেছে। চলতি নভেম্বরেই নিহত হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে হত্যাকা- হয়েছে ২০টি। এর প্রতিটিতেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। আর জেলা পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছর নগরের বাইরে আরও ৪৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে; যার মধ্যে ৩০ জনকেই গুলি বা কুপিয়ে খুন করা হয়। রূপসা উপজেলায় গত দুই মাসে পাঁচটি খুনের চারটিরই ধরন ‘সরাসরি গুলি’। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। এর বাইরে গুলি, ধারালো অস্ত্র ও মারধরে আহত হয়েছে আরও অন্তত শতাধিক মানুষ।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র বলছে, খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় এখন সবচেয়ে আলোচনায় রনি চৌধুরী বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবু। শামসুর রহমান রোডের বাসিন্দা এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে কেএমপির ১৭টি মামলা রয়েছে। ২০০১ সালে বোমা তৈরি ও সরবরাহের মাধ্যমে তালিকায় উঠে আসা বাবু পরে মাদক, চাঁদাবাজি ও জুয়ার দখল নিতে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলেন। শহরে সক্রিয় আরেক গ্রুপ নূর আজিম বাহিনী। টুটপাড়া ইস্ট সার্কুলার রোডের নূর আজিমের বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালে কিশোর গ্যাং তৈরির মাধ্যমে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকায় গ্রেপ্তার হলেও তার সহযোগীরা রূপসা স্ট্যান্ড রোড, চাঁনমারী, টুটপাড়া, লবণচরা, জিন্নাহপাড়া ও আশপাশ এলাকায় প্রতিদিন সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী গ্রুপ হিসেবে উঠে এসেছে আশিক গ্রুপ। চাঁনমারি দ্বিতীয় লেনের আশিকের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা থাকলেও তিনি পলাতক। তার দলে ২৩ সদস্য, যাদের নামে মোট ১১০টি মামলা রয়েছে। মিস্ত্রিপাড়া বাজারের পলাশ গ্রুপের পলাশ শেখের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলার রেকর্ড পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ আমলে দাপুটে থাকা পলাশ চক্র সম্প্রতি আবার সক্রিয় হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর কারাগারে গ্রেনেড বাবুর সহযোগী তুহিন ও পলাশ গ্রুপের সংঘর্ষ এর প্রমাণ। মহেশ্বরপাশার হুমায়ুন কবীর ওরফে হুমা বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সেকেন্ড ইন কমান্ড। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। একই সংগঠনের আরমিন ওরফে আলামিনের বিরুদ্ধে রয়েছে ৬টি মামলা। গত ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর এরা বিভিন্ন এলাকায় পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মোহাম্মদ রাশিদুল ইসলাম বলেন, বেশির ভাগ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে এবং জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

তবে সাধারণ মানুষের দাবি, ঘটনার পর নয়, ঘটনার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা চাই। নগরবাসী বলছেন, প্রায় প্রতিরাতেই কোথাও না কোথাও গুলি, মারামারি বা অস্ত্রের মহড়া চলছে। দিনের আলোতেও প্রকাশ্যে খুনের ঘটনা ঘটছে। সন্ধ্যার পর শহরে নেমে আসে এক ধরনের ভয়াবহ নীরবতা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ চরম অবনতি রোধে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ভাড়াটে খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি তুলছেন শহরবাসী, রাজনৈতিক নেতারা।

খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্কের কথা জানাচ্ছে। সন্ত্রাসীরা গ্রেপ্তার না হলে নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

খুলনা মহানগর জামায়াতের আমির ও খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, ভোটের মাঠে কাজ করতে গেলেই নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারি ছাড়া উপায় নেই।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, মহানগরের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট ও তথ্য বাক্স বসানো হয়েছে। প্রার্থীদের নিরাপত্তায় বিশেষ টহল জোরদার করা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!