টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বুননশিল্পকে ২০২৫ সালের ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তথা ‘মানবতার অস্পর্শনীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনীত করা হয়েছে। এটি এখনো সম্পূর্ণভাবে ইউনেস্কো স্বীকৃতি পায়নি, তবে প্রক্রিয়া চলমান। এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত শনিবার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা থেকে অল্প দূরে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কারখানায় তাঁতের তালে তালে তাঁতিদের হাতের কাজের শব্দ ভেসে আসে। তাঁতিরা রঙিন সিল্ক ও কটন থ্রেড ব্যবহার করে বিখ্যাত টাঙ্গাইল শাড়ি বুনে থাকেন।
এই হ্যান্ডলুম শাড়ির নাম দেওয়া হয়েছে জেলাটির নামে, যেখানে শত শত তাঁতি পরিবার বসবাস করে। এই শাড়ি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবে পরিচিত এবং উৎসব ও বিয়ের অনুষ্ঠানে সমগ্র ভারত উপমহাদেশেই ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়।
শতাব্দীপ্রাচীন এই ঐতিহ্যবাহী শাড়ি বুননের শিল্পকে এ বছর ইউনেস্কোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
প্রতিটি শাড়ি তৈরি হয় ঐতিহ্য ও কারুশিল্পের সংমিশ্রণে। তাতে থাকে স্থানীয় সংস্কৃতি থেকে উদ্ভূত নান্দনিক নকশা ও জটিল ভাব বা সুর। সাধারণত পুরুষেরা থ্রেড রাঙান, কাপড় বুনে নকশা তৈরি করেন। নারীরা চরকিতে সুতা ঘুরিয়ে সহায়তা করেন।
টাঙ্গাইলের শাড়ি শুধু সাংস্কৃতিক প্রতীক নয়, এটি শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকা নির্বাহেরও উৎস।
তবে কাঁচামালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং সস্তা ও মেশিনে বোনা কাপড়ের কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তাঁতের পেশা চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ কমছে। তাঁতিরা আশা করছেন, ইউনেস্কোর স্বীকৃতি ও ঐতিহ্যের মর্যাদা পেলে তাদের এই কারুশিল্প ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে সহায়তা করবে।
টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু সাংস্কৃতিক প্রতীক নয়, এটি শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকা নির্বাহেরও উৎস।
‘আমরা টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপাদক। শুধু আমরা নই, আমাদের পূর্ববর্তী কয়েক প্রজন্ম শত শত বছর ধরে এই শাড়ি উৎপাদন করে আসছে।
এই শাড়ি টাঙ্গাইলের ২০০ বছরের ঐতিহ্য ও গর্ব বলে উল্লেখ করেছেন টাঙ্গাইল শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন।
তিনি বলেন, “শত বছর ধরে আমাদের বাপ-দাদারা এই শাড়ির ব্যবসা করে আসছেন।
তবে ভারত সরকার ‘বেঙ্গলের টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয় এবং ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল শাড়িকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। শিল্প মন্ত্রণালয় টাঙ্গাইলের শাড়িসহ ১৪টি পণ্যের জিআই সার্টিফিকেট বিতরণ করেছে।’
ভারত দাবি করেছিল যে দেশভাগের সময় টাঙ্গাইলের শাড়ির প্রধান তাঁতি সম্প্রদায় ‘বাসক’ উপাধিধারীরা পশ্চিমবঙ্গে স্থানান্তরিত হন এবং সেখানেই এই শাড়ি বোনা হয়। তবে বাংলাদেশ যুক্তি দেয় যে, ‘টাঙ্গাইল’ একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক স্থান, যা বাংলাদেশে অবস্থিত এবং ঐতিহাসিক দলিলও এর উৎপত্তিস্থল হিসেবে টাঙ্গাইলকেই নির্দেশ করে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন